দেবলোকে জমজমাট দেবসমাগম। অপূর্ব নূত্যশৈলী ও গীত বন্দনায় রম্ভা উর্বশী, মেনকা প্রমুখরা মনোরঞ্জনে ব্যস্ত।এমন সময় দেবর্ষি নারদ উত্তেজিত ভাবে দ্রুত গতিতে সভা মধ্যে প্রবেশ করে ‘নারায়ণ’ ‘নারায়ণ’ বলে বিষ্ণুদেবের পদ প্রান্তে বসে পড়লেন। দেবী পার্বতী প্রশ্ন দৃষ্টিতে দেবর্ষির অতি উত্তেজিত অবস্থা লক্ষ্য করে উদ্বিগ্ন। নারায়ণ সুধালেন কী ব্যাপার?–দেবর্ষি সবিস্তারে বলুন আপনার এই উত্তেজনার কি কারণ? দেবর্ষি তাঁর একহাতে বীণাখানি রেখে অপর হাতে দেখালেন একটি অদ্ভুত চৌকোকৃতি বস্তু– যা তিনি উপহার পেয়েছেন মর্তবাসীদের কাছ থেকে।
স্বর্গের সকল দেবদেবীই উৎসুক চক্ষে ঐ অদ্ভুত বস্তুটি নিয়ে কৌতুহল বিহ্বল মুগ্ধ বিস্ময়ে পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত।
‘প্রভু নারায়ণ’, –এই বস্তুটির নাম Mobile (মোবাইল), কেউ কেউ Cell phone ও বলেন, আমি যখন মর্তধামে গিয়ে মর্তবাসীদের এই প্রবল মহামারী ‘করোনা’–র দ্বিতীয় wave নিয়ে আলোচনা করছিলাম, তারা জানালো মহামারী আবার ভয়ঙ্কর রূপে দ্বিতীয় বার ফিরে আসার ফলে বিভিন্ন দেশে সম্পূর্ণ Lockdown হচ্ছে– কিছু দেশে আগামী দিনে প্রবল সম্ভাবনা Lockdown হবার তাই দেবতাদের সাথে তারা যোগাযোগ রাখবে বলে এই Screen Touch Smart Phone টি আমাকে উপহার দিয়েছে।
হে নারায়ণ মর্তবাসীরা আমাকে এই Mobile টি কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, (Internet Connection ও করে দিয়েছে), Social Media তে কীভাবে নিজেদের মত আদান প্রদানের (promote)মাধ্যমে মর্তবাসীদের সাথে যোগাযোগ রাখা যায় তা অত্যন্ত নিপুনভাবে Training দিয়ে আমার Skill Develop করে দিয়েছে।
মহাদেব অবাক হয়ে সমস্ত শুনছিলেন, এবং জিজ্ঞেস করলেন দেবর্ষি এই Social Media বলতে কি বোঝাতে চাইছে মর্তবাসী? ওরা তো সরাসরি স্বর্গধামে এসে আমাদের কাছে ওদের সংবাদ জানাতে পারে কিংবা আপনি মর্তধামে গিয়ে,- মর্তবাসীদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। এই Mobile, Social Media এগুলোর কি প্রয়োজন?
সূষ্টিকর্তা ব্রহ্মা বললেন, আমি জগৎ সূষ্টি করেছি, অথচ এই Mobile জিনিসটা তেমনভাবে তো কোনদিন দেখিনি। এবার সিদ্ধিদাতা গণেশ জানতে চাইলেন কেন মর্তবাসীরা এভাবে Cell Phone বা Social Media তে দেবলোকের সাথে সংযুক্ত হতে চাইছেন।
দেবর্ষি সবিস্তারে শুরু করেন –আসলে ‘করোনা’র দ্বিতীয় ঢেউতে সম্পূর্ণ Lockdown হলে ওরা বাড়িতে বসে, ‘Live’- এ এসে দেবতাদের পূজোর্চনা করবে, তাদের আর্জি জানাবে, তারা মানত রাখবে।
লঙ্কেশ্বর রাবণ যদি তাঁর জীবিত অবস্থায় স্বর্গে সিঁড়ি বাঁধার কাজটি সম্পূর্ণ করে যেতেন তাহলে আজ মানবজাতি সরাসরি সিঁড়ি বেয়ে দেবলোকে চলে আসতে পারত। স্বর্গধামে তো জীবন্ত মানুষ আসতে পারে না, তাই তাদের আর্জি তারা একটি WhatsApp Group তৈরী করে তাতে সমস্ত দেবতাদের সাথে সংযুক্ত হবে। আর Facebook এর Friend list –এ আমাদের দেবতাদের সবাই থাকবেন। তবে দেবতারা চাইলে Instagram বা Twitter কিংবা Blog এ তাদের মতামত প্রকাশ বা Status update করতে পারবেন। দেবতারা সবাই এই নতুন চিত্তাকর্ষক Social Media নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিলেন।
দু’দিন পরেই WhatsApp Group এ এক মর্তবাসী দেবলোকের দেবাদিদেব শিবকে প্রণাম জানিয়ে নিবেদন করলেন, “ভারতবর্ষে করোনা দ্বিতীয় wave প্রবল ছড়িয়ে পড়ায় বেশির ভাগ ডাক্তারবাবুরা আক্রান্ত, রোগী পরিষেবা ব্যহত হচ্ছে, তাই যদি দেবলোক থেকে অশ্বিনী কুমারদ্বয় চিকিৎসক হিসাবে মর্তে আসেন তাহলে মর্তবাসীরা আরো উন্নত পরিষেবা পেতে পারে।”
WhatsApp এ নারায়ণ এর উত্তরে লেখেন, – করোনা তো ভারতবর্ষে প্রায় কমেই গেছিল হঠাৎ এই দ্বিতীয়বার এত ভয়ঙ্কর ভাবে থাবা বসাচ্ছে কি করে?
এবার আর এক মর্তবাসী সাথে সাথেই Facebook থেকে একটি link share করে দিলেন WhatsApp গ্রুপে– সাথে Caption এ লেখা, হে দেব ‘নারায়ণ’ দেখুন মর্তবাসীরা নির্বাচনের জন্য করোনা বিধি না মেনে কিভাবে জন সমাগমে সংক্রামন ঘটাচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু, বাকী সর্বত্রই জনসমাগম– তা সিনেমা হল, শপিং মল, অফিস, আদালত, নেতা নেত্রীদের জনসভা সর্বত্রই জনমানবের ভীড়। প্রথমবার করোনা মহামারীতে চিকিৎসকেরা পরিষেবা দিয়ে গেছেন অক্লান্ত,- কিন্তু এবার আরও ভয়ঙ্কর মহামারীর রূপ। প্রভু নারায়ণ আপনি তো ‘পালন কর্তা’ সৃষ্টির— আপনার দশ অবতারের রূপ তো আমাদের জানা। শোনা যায়, কলিযুগে আপনি কল্কি অবতার রূপে মর্তালোকে আসবেন। হে নারায়ণ আমরা মর্তবাসীরা মিনতি করছি, আপনি দশম অবতার নিয়ে মর্তলোকে অবতীর্ণ হন।
নারায়ণ প্রমাদ গুণলেন– এবার ইন্দ্রদেব উত্তর দিলেন হে মর্তবাসী তোমরা তো নারায়ণের সপ্তম অবতার ‘রামচন্দ্র’কে নিয়েই আরাধনা করছো কল্কি অবতারের আর কি প্রয়োজন?
এবার মর্তবাসীদের মধ্য থেকে এক মহিলাভক্ত WhatsApp গ্রুপে লিখলেন, “হে নারায়ণ আপনি ছলনায় পটু, অসম্ভব বুদ্ধিমান ও প্রত্যুৎপন্নমতি সম্পন্ন আরাধ্যদেবতা, আপনার আগমনে হয়ত বা কোন রকম ছলনার দ্বারা তো করোনা ভাইরাসকে প্রতিহত করা যেতে পারে।“
মহাদেব কূপিত হলেন– উত্তর দিলেন, “ওহে রমনী এটা দেবাসুরের সমুদ্রমন্থন নয়, যে স্বয়ং নারায়ণ ছলনার আশ্রয় নিয়ে অসুরদের বঞ্চিত করে অমৃত দেবতাদের মধ্যে বণ্টন করবেন। তাছাড়া আমাকে সমস্ত বিষ কণ্ঠমধ্যে গ্রহণ করে নীলকণ্ঠ হতে হয়েছিল। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাসকে কেবলমাত্র প্রতিষেধক, মাস্ক, স্যানেটাইজার ইত্যাদি ব্যবহার করে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরাজিত করা সম্ভব।“
এবার এক মর্তবাসী Twitter এ update দিলেন, -“প্রজাপতি ব্রহ্মা হলেন সৃষ্টিকর্তা। সকল সৃষ্টির উৎস তিনি, তাই এই মহামারী ঘটানো ‘করোনা ভাইরাস’ –এর সৃষ্টি তাঁরই অবদান। কোন অন্য দেশের ল্যাবরেটরী কিংবা প্রাকৃতিক নিয়মে মিউটেশনের মাধ্যমে নয়,- ‘করোনা’ ভাইরাসের দায় স্বয়ং ব্রহ্মার।“
সমস্ত দেবলোক প্রমাদ গুনলেন– এ কী অভিযোগ!! দিনভর দেবলোকে আলোচনা সভা চলল। এবার হাল ধরলেন নারায়ণ– Blog এ উনি Active হলেন, “ওহে মর্তবাসী, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন, তাঁর সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠতম জীব মানবজাতি। কিন্তু বর্তমানে মানবকূলের আচরণে আমরা দেবকূল অত্যন্ত ব্যথিত, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মানবকূলের সৃষ্টি কিংবা পালনের দায়িত্ব থেকে চিরতরে মুক্তি নেব।”
এক বিজ্ঞানপ্রেমী মর্তবাসী যুবক এই Blog দেখে অত্যন্ত বিরক্তভাবে Facebook তে একটি Status update করে,- সাথে ত্রিদেব ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরকে’ tag’ –বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার–
“হে দেবকূল, আমার কয়েকটি প্রশ্ন আপনাদের কাছে –ব্রহ্মা কি করে আমার সৃষ্টিকর্তা হলেন? আমি তো এই পূথিবীতে এসেছি আমার বাবা ও মা –এর সম্মিলিত প্রচেষ্টা য়, যদি ব্রহ্মা বলেন পৃথিবীর আদিমতম মানুষ তাঁর সৃষ্টি – তবে এটা জানাই, তাঁর সৃষ্টির ওপর কলম চালিয়ে আমরা IVF পদ্ধতিতে কিংবা Test Tube Baby কিংবা Surrogate Mother –এর সহায়তায় মানবসন্তান তৈরী করতে সমর্থ হয়েছি।
আর ব্রহ্মাণ্ডের ‘পালনকর্তা নারায়ণ’ হন কি করে?– যদি তিনি ভগবান হতেন, তবে তাঁর মানুষরূপে মর্তধামে, বারংবার আসার প্রয়োজন তো ছিলনা। বৈকুণ্ঠধাম থেকেই তো নারায়ণ দুষ্টের দমন করতে পারতেন– কখনো ‘রাম’ কখনো ‘পরশুরাম’ কিংবা ‘শ্রীকৃষ্ণ’ রূপে ধরাধামে আসার কি প্রয়োজন ছিল?
আর শ্রীকৃষ্ণ রূপে মর্তে কী এমন মহৎ কাজ করলেন তিনি? –মানুষ জাতিকে শেখালেন কীভাবে পরকীয়া করতে হয়। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ বাধালেন ভাই এর সাথে ভাইয়ের। অন্যায়ভাবে নিজের ভাই অর্জুনের হাতে নিরস্ত্র অবস্থায় রথের চাকা উদ্ধারে যাওয়া ‘কর্ণ’ কে বধ করলেন। আবার যুধিষ্ঠিরের মতো ধার্মিক ব্যক্তিকে দিয়ে মিথ্যা কথা ‘অশ্বত্থমা রণে হত ইতি গজ’ বলিয়ে অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যকে হত্যা করিয়েছিলেন,–সত্যি যদি নারায়ণ সৃষ্টির পালক হন,– তবে নিজের ভাগ্নে অভিমন্যু ‘চক্রব্যূহ’ মধ্যে সপ্তরথী দ্বারা আটকে আছে জানা সত্ত্বেও পাঞ্চজন্য বাজিয়ে অর্জুনকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছেন, এটা কি অন্যায় নয়? তাই প্রকৃত পালনকর্তা সৃষ্টির হল মানবজাতি তারা নিজেরাই নিজেদের পালন করে।
আমার শেষ প্রশ্ন– মহেশ্বর কি করে সংহারকর্তা হলেন? সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে ঐ তাণ্ডব নৃত্যের কথা শুনেছি,–তাতে বিষ্ণুচক্রে সতীর দেহাংশ দিয়ে বিভিন্ন সতীপীঠ গড়া ছাড়া আর কিবা হয়েছে? বরং সংহারকর্তা হল মানবজাতি –তার প্রমাণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর এখন সংহার হিসাবে অস্ত্র পরমানুবোমার বদলে জীবানু বোমা–জীবানুযুদ্ধ তথা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে।“
পার্বতীর তৃতীয় নয়ন জ্বলে উঠল রাগে,- কী স্পর্দ্ধা !!! এই বিজ্ঞানপ্রেমী মর্তবাসী যুবকের !! বলে কী – ত্রিদেব এর কোন ভূমিকা নেই– বেশ কড়া একটি বাধা দেওয়া দরকার–
দেবী পার্বতী Facebook status এ লিখলেন– “সবই বুঝলাম হে যুবক– সত্যিতো ব্রহ্মা কেন ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করবেন– কেনইবা মানবজাতির সৃষ্টিকর্তা হবেন ? তোমরা বিজ্ঞানে এত উন্নত তাই তোমরা মাতৃজঠোরের বাইরে Laboratory তে Test Tube Baby তৈরীতে সক্ষম, Surrogate Mother এর সহায়তায় মানব প্রাণ সৃষ্টি কিংবা IVF পদ্ধতিতে মানবসন্তান তোমরা দিতে পারো– কিন্তু আমারও যে একটি প্রশ্ন আছে–
তোমরা এত কিছু পারো কিন্তু Laboratory তে Blood কেন তৈরী করতে পারো না? কেন একজনের শরীরের রক্ত অন্যজনকে দাও? একবার অন্তত বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে রক্ত তৈরী করে দেখাও–
আর নারায়ণ কেনইবা বিশ্বের পালনকর্তা হবেন!! তোমরাতো নিজেরাই নিজেদের পালন করতে সক্ষম–
তা বাছা এতই যদি তোমাদের Capacity তাহলে কৃষির জন্য আকাশভাঙ্গা বৃষ্টির উপর নির্ভর করে আছ কেন? সূর্যদেব থেকে আগত আলোকরশ্মি না নিয়ে Ozone Layer এর ক্ষতি না করে, দিনের বেলায় আলোকের অন্য ব্যবস্থা কর।
Global warming এর প্রতিরোধের ব্যবস্থা কর– আর মাত্র 4°C তাপমাত্রা বাড়লে তো আন্টার্কটিকার সমস্ত বরফ গলে যাবে– তা তখন কি মর্তলোককে বাঁচাতে পারবে?
আর সংহার-রূপকর্তা মহাদেব কেন হবেন ? !!আসলে তোমরা নিজেরাই তো তোমাদের নিজেদের সংহার করছো যদুবংশ ধ্বংসের মতো। এমন জীবানুযুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছো, ‘ক্ষমতার দখলের’ লড়াইতে যে মানবসভ্যতা আজ ধ্বংসের মুখে। মহাদেব কেন রক্ষা করবেন সৃষ্টির – তোমরা নিজেদের রক্ষা কর– দেখি তোমাদের বিজ্ঞানের কত জোর।”
এবার WhatsApp গ্রুপে একটি কলেজ পড়ুয়া মেয়ে লেখে– “হে দেবদেবীগণ আপনারা আর আমাদের জ্বালা কি বুঝবেন ? দিব্বি মন্দিরের মধ্যে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রসাদ, পূজোর্চনা পাচ্ছেন আর আমরা মর্তবাসীরা রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, জল মাথায় নিয়েও মাথা গোঁজার মত ছাদ পাচ্ছিনা। দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার সংস্থান করার ক্ষমতা নেই। শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ডটা প্রায় বেঁকে গেছে। স্বাস্থ্য বেহাল অবস্থা, চাকরি নাই, Industry নাই, কৃষি ধুঁকছে। আর আপনাদের দেবলোকে তো এসব কোন Tension নেই। সারাদিন নৃত্য, গীত, বাদ্য, সুরাপান আর নিজেদের শ্রীবৃদ্ধি।
মানবজাতির যতকিছু খারাপ গুন সব আপনাদের কাছ থেকে শেখা–‘দেবতাগণ’- সেই আদিকাল থেকে আপনারা সুরাপান, সোমরসে আসক্ত, সারাদিন অপ্সরা পরিবেষ্টিত, নিজেদের মধ্যে দলাদলি, পরকীয়া, ছলনা, প্রতিহিংসা পরায়ণসম্পন্ন – আপনাদের আদর্শ মেনে আজ সমস্ত মানবকূল হিংসা, ছলনা, প্রতিহিংসা, সুরাপানে আসক্ত। মানবজাতি নিজেদের দর্শন, উন্নতি, শিক্ষানীতি আজ সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে নির্লজ্জ রাজনৈতিক দলাদলিতে ব্যস্ত।
হে দেবদেবীগণ তাই আপনারা গোলকধামেই সুখে সাচ্ছন্দে থাকুন। আমরা মর্তবাসীরা আমাদের মতো করেই বাঁচি। আমাদের মহাপুরুষদের জীবনাদর্শন, সাহিত্যিক, কবি, লেখকদের মতাদর্শকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের সুন্দর জীবন গড়ে তুলি।”
নারায়ণ এতক্ষণ Social Media –এর সমস্ত কথোপকথনগুলি গভীর মনোযোগ সহকারে দেখে অবশেষে Blog কলম ধরলেন,–বক্তব্য সুস্পষ্ট– বার্তা, অতি সুন্দর– “ওহে মর্তবাসী, আমরা দেবতারা তো তোমাদের ওপর জোর করিনি আমাদের আরাধনা করতে বরং তোমরাই আমাদের ‘ঘুষখোর’ বলে ভাবো (ভগবান আমায় সন্তান দাও, আমায় চাকরি দাও কিংবা নিজেদের মনোবাঞ্ছা পূরণ কামনা করো , পরিবর্তে আমাদের কোনো কিছু ঘুষ দেবার প্রতিশ্রুতি দাও, জোড়া ঢাক দিয়ে পূজো দেবে বলো।)
আমরা সদাই তোমাদের মঙ্গল, কামনা করি বিনিময়ে কোন প্রত্যাশা ছাড়াই। আর তোমরা কোনও দিন কি শুধু ভালবেসে মনপ্রাণ দিয়ে আমাদের আহ্বান কর? প্রার্থনা কর -কিছু পাবার জন্যই।“
নারায়ণ অতি বিমর্ষ হয়ে আবার ব্লগে লেখেন ,”আর যে মহাপুরুষ ,মহামানবদের পথ অনুসরণ করে চলবে বলছো,–তাঁদের মুর্তি তো তোমরা মানবজাতিরাই ভাঙো , নির্বাচনের সময় এই মহাপুরুষদের ছবির উপরে নেতা নেত্রীর ছবি দাও। ওনাদের যদি সত্যিকারের সম্মান দেখাতে না পারো তাহলে ওনাদের আদর্শ কিভাবে অনুসরণ করবে?
সারা বছর ধরে মহামানবদের বাণী কি পড়ো তোমরা? নাকি শুধু বিপদে পড়লে মনিষীদের হাত ধরে বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করো ?
বাকী রইল আমার দশম অবতারে কল্কিরূপে মর্তধামে আসা– আমি স্বয়ং নারায়ণ– বিশ্বাস করি,– তোমরা মর্তবাসীরা নিজেরা প্রত্যেকেই কল্কি অবতার। তোমরাই পারো এ বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে দিতে। নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলো। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হও। আমরা দেবলোকবাসীরা সর্বদাই তোমাদের শুভাকাঙ্খী। মঙ্গল হোক তোমাদের”।
দেবর্ষি এবার নারায়ণের পদপ্রান্তে বসে হাতজড়ো করে বলেন, “হে নারায়ণ, অনেক তো যোগাযোগ হল Social Media তে মর্তবাসীদের সাথে, কথায় কথা বাড়ে প্রভু। এই মর্তবাসীরা আমাকে Mobile Swich কিভাবে Off করতে হয় শিখিয়ে দিয়েছে।
আসুন আমরা Mobile টা চিরকালের জন্য দেবলোকে Switched off করি। দেবী দূর্গা বলেন , “আহা দেবর্ষি ভেঙ্গে ফেলুন ওই মোবাইল,আমি তো শারদীয়া তে যাচ্ছি,সরাসরি যোগাযোগ হবে”।
***এই গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। নিছক আনন্দ উপভোগের জন্য রচনা করা হয়েছে।***