বাংলাদেশে কভিড-১৯ মোকাবিলায় সর্বদলীয় কমিটির প্রস্তাব ফখরুলের


শুক্রবার,০৯/০৪/২০২১
598

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় টেউ মোকাবিলায় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ‘সর্বদলীয় কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৯ এপ্রিল শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রস্তাব দেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আবারো প্রস্তাব রাখছি যে, এখনো সময়ে আছে, সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে, জনগণকে সম্পৃক্ত করে-তাহলেই শুধুমাত্র এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। একটা কথা আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, যে বিশাল চ্যালেঞ্জ, তা জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া সম্ভব নয়।’ ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হলে আমরা যেটা এর আগেও বলেছি যে, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি সকল স্তরের মানুষকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষকে এই ব্যাধির ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে এবং তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে এই ভাইরাস মোকাবিলায়। আসুন আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগ নেই মানুষ বাঁচাই, দেশ বাঁচাই।’ দেশে করোনা মহামারি এক ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সরকারের উদাসীনতা, অগ্রাধিকার নির্ধারণে ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা, রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের অপকৌশল হিসেবে করোনা সংক্রমণের তথ্য গোপন ও সীমাহীন ব্যর্থতায় আজ পুরো দেশকে এক বিপদ সঙ্কুল পথে নিয়ে চলেছে।’ দেশে গত ৫ জানুয়ারি করোনার নতুন স্ট্রেইন ধরা পড়লেও তা গোপন রাখা হয় অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘সরকার তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ করে এবং সংক্রমণের বাস্তবচিত্র গোপন করে। এ অবস্থায় বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর সকল কর্মসূচি স্থগিত করে সরকারের কর্মসূচি স্থগিতের আহ্বান জানায়।

কিন্তু সরকার জনস্বার্থ উপেক্ষা করে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমগ্র প্রশাসনকে ব্যস্ত করে রাখে। এতে করে করোনা সংক্রমণ দমন ও নিয়ন্ত্রণে বিলম্বের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।’ করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু থেকেই রোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সরকারের অসহায়ত্ব ও চরম সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জাতীয় পরামর্শক কমিটি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও নীতি নির্ধারকদের মধ্যে কোন সমন্বয় ছিল না। পরামর্শক কমিটির সিদ্ধান্ত মানা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানেন না। লকডাউন না করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়। পোশাক শিল্পের কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় অবগত নয়। কোভিড নন কোভিড হাসপাতাল নির্ধারণ, চিকিৎসকগণ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম ছিল চরম হতাশা-ব্যঞ্জক।’ টেস্ট বাড়ার সাথে সাথে সংক্রমণের হার বাড়ছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ইতোপূর্বে টেস্ট কম করেছে তাই সংক্রমণ কম দেখানো হয়েছিল। কিন্তু এখন টেস্ট বেড়েছে সংক্রমণের সংখ্যাও বেড়েছে।’ সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসার উপযোগী করা হয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালকে কোভিড-নন কোভিড চিহ্নিত করে আলাদা না করায় দেশে স্বাস্থ্য সেবায় চরম নৈরাজ্য পরিলক্ষিত হয়েছে। করোনা রোগীরা যেমন হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেনি, তেমনি সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। মানুষ রাস্তায়, ভ্যানে, এম্বুল্যান্সে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে সেবা না পেয়ে বেশুমার জীবন দিয়েছে।’ ‘অন্যদিকে আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, হাইফ্লো অক্সিজেন ইত্যাদি স্বল্পতায় আক্রান্তদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও হতাশা পরিলক্ষিত হয়েছে। এসবের সংকটে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থার কোন উত্তরণ ঘটেনি। দেশের অন্তত ৪৬টি জেলায় যথাযথ চিকিৎসার সুবিধা সম্বলিত আইসিইউ, হাইফ্লো অক্সিজেন/ ভেন্টিলেটর ব্যবস্থা এক বছরেও গড়ে তোলা হয়নি। দেশের ৭৯ টি সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির কার্যক্রম হাতে নেয়া হলেও সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও উদাসীনতায় ৫০ শতাংশ অগ্রগতিও হয়নি এক বছরে।’ করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহে সরকারের কোন প্রস্তুতিই ছিলো না অভিযোগ করে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করলে সরকার এগুলো সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। এক্ষেত্রে নিম্মমানের পিপিই, মাস্ক, সেনিটাইজার ইত্যাদির কারণে শতাধিক ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

করোনা মোকাবেলায় সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির ক্ষেত্রে উদাসীনতায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে করোনার সম্মুখ-যোদ্ধা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রীর কারণে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়ে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। পৃথিবীর কোন দেশেই এত বিপুল সংখ্যক ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত কিংবা মৃত্যুবরণ করেননি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার শুধু মালিক পক্ষকে প্রণোদনা দিয়েছে, শ্রমিকদের জন্য কোন সহায়তা ছিল না। তাই আমরা সকল উৎপাদন-মুখী ও রপ্তানীমুখী শিল্পের শ্রমিকদের জন্যও প্রণোদনা/সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।’ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সরকার হঠাৎ করে লকডাউন/নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে উল্লেখ করে ফখরুল আরো বলেন, ‘এতে জনগণ বিভ্রান্ত হয়ে হাট-বাজার-রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এতে করে দেখা যাচ্ছে, সরকার কোন বারই বিষয়টি সুপরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নেয়নি। এতে করে ব্যবসায়ী/শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষগণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে জীবিকার তাড়নায় মাঠে নেমে আসে। আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে লকডাউন বা ১৮ দফা নির্দেশনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে সরকার ঘোষিত ১৮ দফা নির্দেশনা অপর্যাপ্ত, অস্পষ্ট এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না। অবাস্তব এ সকল পদক্ষেপ সরকার ইতোমধ্যেই শিথিল করা শুরু করেছে।’

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট