মাত্র ৪০ বছর বয়সেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন শ্রী রাজীব গান্ধী। তিনি ছিলেন দেশের তরুণতম প্রধানমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের নির্বাচিত সরকারের তরুণতম প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। তাঁর থেকে মাত্র আট বছর বেশি বয়সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন তাঁর মা শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৬ সালে। রাজীবের মাতামহ পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ৫৮ বছর বয়সে। একটানা ১৭ বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
দেশের তরুণতম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজীব গান্ধী নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে জাতির ইতিহাসে এক বিরল নজির স্থাপন করেন। তাঁর মা নিহত হওয়ার পরে শোকের পরিবেশ কাটিয়ে উঠে তিনি লোকসভা নির্বাচনের নির্দেশ দেন। নির্বাচনে কংগ্রেস অতীতের আরও সাতটি নির্বাচনে ইতিহাস ম্লান করে দিয়ে বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। লোকসভার ৫০৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস দখল করে নেয় ৪০১টি। দেশের ৭০ কোটি মানুষের নেতা হিসেবে এভাবেই রাজনৈতিক জীবনে তাঁর উত্থান। রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত এক পরিবারের উত্তরসূরী হয়েও রাজনীতিতে অংশগ্রহণে প্রথমে তাঁর ছিল তীব্র অনীহা। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরবর্তীকালে দেশের রাজনীতিতে এই পরিবারের নিবিড় যোগাযোগ ছিল প্রায় চার প্রজন্মের। মায়ের অকাল মৃত্যুর পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও খানিকটা বাধ্য হয়েই রাজীব রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
রাজীব গান্ধীর জন্ম ১৯৪৪-এর ২০ আগস্ট বোম্বাইতে। ভারতের স্বাধীনতা লাভ এবং তাঁর মাতামহ প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সময় রাজীবের বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। তাঁর মা-বাবা নয়াদিল্লি থেকে লক্ষ্নৌতে স্থানান্তরিত হন। তাঁর পিতা ফিরোজ গান্ধী একজন সাংসদ হিসেবে সাহসিকতা ও কর্মনিষ্ঠার জন্য বিশেষ সুনাম অর্জন করেন।
রাজীবের শৈশব জীবন অতিবাহিত হয় মাতামহের সঙ্গে তিনমূর্তি ভবনে। এই বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন তাঁর মা ইন্দিরা গান্ধী। দেরাদুনের ওয়েলহ্যাম্প প্রেপ-এ তিনি খুব অল্পদিন পড়াশোনা করেন। এরপরে ভর্তি হন দুন স্কুলে। স্কুলের সঙ্গে তাঁর সুদীর্ঘ মৈত্রীর এক নিবিড় বন্ধন তৈরি হয়। তাঁর ছোট ভাই সঞ্জয়ও পরে এই স্কুলে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন।
স্কুলের পঠনপাঠন শেষ করে রাজীব ভর্তি হন কেম্ব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি চলে যান লন্ডনে ইম্পিরিয়াল কলেজে পড়াশোনা করতে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়েই তিনি পড়াশোনা করেন। পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা – এই নীতিতে তিনি বিশ্বাস করতেন না। পরে তিনি একথার উল্লেখও করে গেছেন।
রাজনীতি তাঁকে সেভাবে কোনদিনই আকর্ষণ করেনি। তাঁর সহপাঠীদের কাছ থেকে জানা যায় তাঁর পড়ার ঘরে দর্শন, রাজনীতি বা ইতিহাসের গ্রন্থের তুলনায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপরই মোটা মোটা বই সাজানো থাকত। এছাড়াও তিনি ছিলেন সঙ্গীতানুরাগী। আধুনিক গান ছাড়াও হিন্দুস্থানী ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতে তাঁর ছিল গভীর আগ্রহ। এছাড়াও, তাঁর সখের মধ্যে ছিল ফটোগ্রাফি ও অ্যামেচার রেডিও।
তবে, তাঁর সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ছিল বিমান চালনায়। ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আসার পর দিল্লি ফ্লাইং ক্লাবের প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন এবং একজন কমার্শিয়াল পাইলটের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য নিয়মিত অনুশীলন শুরু করেন। পরে, দেশের অভ্যন্তরীণ উড়ান সংস্থা ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান চালক পদে তিনি যোগ দেন।
কেম্ব্রিজে থাকার সময় এক ইতালীয় যুবতী সোনিয়া মাইনোর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সোনিয়া সেখানে ইংরাজি নিয়ে পড়াশোনা করতেন। পরে, ১৯৬৮ সালে নয়াদিল্লিতে তিনি সোনিয়ার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। দুই পুত্র রাহুল ও প্রিয়াঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে রাজীব ও সোনিয়া শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নয়াদিল্লির বাসভবনেই বসবাস করতেন। রাজনৈতিক ব্যস্ততা ও কর্মচাঞ্চল্যের মধ্যেও রাজীব একান্তে এক ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবন অতিবাহিত করতেন।
১৯৮০ সালে ছোট ভাই সঞ্জয়ের বিমান দুর্ঘটনায় আকস্মিক মৃত্যুর পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। ঘরে-বাইরে নানারকম চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় মা-কে সাহায্য করতে বিভিন্ন মহল থেকে তাঁর কাছে চাপ আসে রাজনীতিতে প্রবেশ করার জন্য। প্রথমে তিনি রাজি হননি, কিন্তু অনেক চিন্তাভাবনার পর তিনি রাজনীতিতে যোগ দিতে মনস্থির করেন। ভাইয়ের মৃত্যুর পর উত্তর প্রদেশের আমেথি কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তিনি জয়লাভ করেন।
১৯৮২ সালের নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত হয় এশিয়ান গেমস। এই ক্রীড়া আয়োজনের জন্য ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল দীর্ঘকাল ধরেই। অবশেষে সেই আশা পূর্ণ হল। রাজীব গান্ধীর ওপর ভার ছিল এশিয়ান গেমস আয়োজনের জন্য সমস্তরকম কাজকর্ম যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হয় তা দেখাশোনা করার। একইসঙ্গে এই ক্রীড়ানুষ্ঠান যাতে কোনরকম বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় তা দেখভাল করার দায়িত্বও বর্তায় তাঁর ওপর। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এবং সবদিক ভালভাবে সামলে উঠে তিনি তাঁর দক্ষতা ও সমন্বয়ের এক বিশেষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। একই সময়কালে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলকে সাংগঠনিক দিক থেকে চাঙ্গা করে তুলতেও তিনি নিরলস পরিশ্রম করেন। তাঁর এই সমস্ত গুণ পরবর্তীকালে দেশকে অনেক সঙ্কটজনক মুহূর্ত সামলে উঠতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে।
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর মায়ের নৃশংস হত্যাকান্ডের পর দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং কংগ্রেসের সভাপতি পদ দুটি একইসঙ্গে বিশেষ দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়ে রাজীব গান্ধী রাজনৈতিক ক্ষমতার ইতিহাসে এক বিশেষ নজির সৃষ্টি করেন। ব্যক্তিগত তথা জাতীয় শোকের মুহূর্তে স্থৈর্য, সংযম ও সম্ভ্রমের সঙ্গে তিনি দেশ পরিচালনার জাতীয় দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
নির্বাচনী প্রচারের দীর্ঘ সময়কালে রাজীব গান্ধী দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিরলসভাবে সফর করেছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে বক্তব্য রেখেছেন প্রায় ২৫০টির মতো নির্বাচনী জনসভায়।রাজীব গান্ধী ছিলেন আধুনিক মনস্ক এক নেতা যিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। অথচ, তিনি ছিলেন আত্মপ্রচার বিমুখ। ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতা বজায় রাখা ছাড়াও দেশকে একবিংশ শতকে পৌঁছে দেওয়া যে ছিল তাঁর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য – একথা বারবার বলে গেছেন তিনি।
তথ্যসূত্র : পিএমইন্ডিয়া
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোহাল আজ বেজিংয়ে, ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন।…
আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন। ৩৯ টি দেশের…
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সী’- NTA, আগামী বছর থেকে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা…
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।…
রাজ্য সরকারের উদাসীনতার কারণে ন্যাশনাল ‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি বলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা…
সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া SEBI জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে…