শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর জন্ম ১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর এক বিশিষ্ট পরিবারে। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর কন্যা ইন্দিরার ছাত্র জীবন কেটেছে স্যুইজারল্যান্ডের বেকস্-এ ইকোলে নোভেল, জেনেভার ইকোলে ইন্টারন্যাশনাল, পুণে ও বোম্বাই-এর পিউপিল্স ওন স্কুল, ব্রিস্টলের ব্যাডমিন্টন স্কুল, শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী এবং অক্সফোর্ডের সামারভিল কলেজে। বিশ্বের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ই তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রিতে সম্মানিত করেছে। তাঁর উজ্জ্বল ছাত্র জীবনের সুবাদে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁকে বিশেষভাবে সম্মান জানিয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন। শৈশবে তিনি ‘বাল চড়কা সঙ্ঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে, ১৯৩০ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কংগ্রেসকে সাহায্য করার জন্য ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘বানর সেনা’। তাঁকে কারাবন্দী করা হয় ১৯৪২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ১৯৪৭ সালে মহাত্মা গান্ধীর নির্দেশে তিনি দিল্লির দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে কাজ করেছিলেন।
ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে ইন্দিরা বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন ১৯৪২ সালের ২৬ মার্চ এবং দুই সন্তানের জন্ম দেন। ১৯৫৫ সালে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন। নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির জাতীয় সংহতি পরিষদের সভানেত্রীর পদও তিনি অলঙ্কৃত করেছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সংসদীয় পর্ষদের সদস্য নির্বাচিত হন | ১৯৫৬ সালে তিনি নিযুক্ত হন সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসেবে। নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির মহিলা শাখার দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। পরে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী নির্বাচিত হন ১৯৫৯ সালে। পরবর্তী এক বছর তিনি ঐ পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি আবার কংগ্রেস সভানেত্রী হন ১৯৭৮ সালে।
কেন্দ্রীয় সরকারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হিসেবে তিনি কাজ করেন ১৯৬৪-৬৬ পর্যন্ত। এরপর ১৯৬৬-র জানুয়ারি থেকে ১৯৭৭-এর মার্চ পর্যন্ত একটানা তিনি ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৬৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৬৯-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্বও তিনি সামলেছিলেন। ১৯৬৭ -র সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৭-এর মার্চ পর্যন্ত তিনি পরমাণু শক্তি বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী পদেও কাজ করে গেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৭০-এর জুন থেকে ১৯৭৩-এর নভেম্বর পর্যন্ত। এছাড়া, মহাকাশ দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন ১৯৭২-এর জুন থেকে ১৯৭৭-এর মার্চ পর্যন্ত। ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে তিনি যোজনা কমিশনের চেয়ারপার্সনের দায়িত্বও পালন করে এসেছেন। পরে, ১৯৮০ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হন।
বহু সংস্থা ও সংগঠনের সঙ্গে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী যুক্ত ছিলেন, যেমন কমলা নেহরু মেমোরিয়াল হসপিটাল, গান্ধী স্মারক নিধি এবং কস্তুরবা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। স্বরাজ ভবন ট্রাস্টের তিনি ছিলেন সভানেত্রী। এছাড়াও তিনি যুক্ত ছিলেন বাল সহযোগ, বাল ভবন পর্ষদ এবং চিলড্রেন্স ন্যাশনাল মিউজিয়ামের সঙ্গে (১৯৫৫)। এলাহাবাদে কমলা নেহরু বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন তিনি। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গেও তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন (১৯৬৬-৭৭)। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের তিনি ছিলেন একজন সদস্য। ১৯৬০ -৬৪ সাল পর্যন্ত ইউনেস্কো-র ভারতীয় প্রতিনিধিদলেও তিনি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ১৯৬০-৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনেস্কো-র প্রশাসনিক পর্ষদের একজন সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন। জাতীয় প্রতিরক্ষা পরিষদেরও তিনি ছিলেন একজন সদস্য (১৯৬২)। সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি, জাতীয় সংহতি পরিষদ, হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, দক্ষিণ ভারত হিন্দি প্রচার সভা, নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরী সোসাইটি এবং জওহরলাল নেহরু স্মারক তহবিলের সঙ্গেও তিনি বিশেষভাবে যুক্ত ছিলেন।
১৯৬৪ সালে শ্রীমতী গান্ধী রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত হন। এই পদে তিনি বৃত ছিলেন ১৯৬৭ -র ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ লোকসভার তিনি ছিলেন একজন সদস্য। ১৯৮০ সালে উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মেডাক থেকে তিনি লোকসভার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে, তিনি রায়বেরিলি আসনটি ছেড়ে দেন। ১৯৬৭-৭৭ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে তিনি কাজ করে গেছেন। পরে, ১৯৮০ সালে তিনি আবার কংগ্রেস সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন।
শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর আগ্রহ ছিল বিভিন্ন বিষয়ে। জীবনকে তিনি দেখতেন একটি সুসংহত চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে যেখানে সমস্ত দিক এবং বিষয় পৃথক পৃথকভাবে না থেকে সামগ্রিক হয়ে উঠত। জীবনকে তিনি কখনই বিচ্ছিন্ন কোন কিছু হিসেবে কল্পনা করতেন না, বরং তিনি জীবনকে দেখতেন বহুবিধ বিষয়ের এক সমষ্টি হিসেবে।
কর্মজীবনে বহু কৃতিত্ব ও সাফল্যের নজির রেখে গেছেন শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৭২ সালে তাঁকে ভারতরত্ন ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে তাঁর বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিতে তিনি লাভ করেন মেক্সিকান অ্যাকাডেমি পুরস্কার (১৯৭২)। ১৯৭৩ সালে তাঁকে দেওয়া হয় এফ .এ.ও.-র দ্বিতীয় বার্ষিক পদক। ১৯৭৬ সালে লাভ করেন নাগরী প্রচারিনী সভার সাহিত্য বাচস্পতি (হিন্দি) পুরস্কার। ১৯৫৩ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাদার্স অ্যাওয়ার্ড-এ সম্মানিত হন। কূটনীতিতে বিচক্ষণতার জন্য ইতালির আইবেলা ডি এস্ট পুরস্কারে তিনি সম্মানিত হন পরবর্তীকালে। এছাড়াও লাভ করেন ইয়েল ইউনিভার্সিটির হোল্যান্ড মেমোরিয়াল প্রাইজ। ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক ওপিনিয়ন-এর এক জনমত সমীক্ষার নিরিখে ১৯৬৭ এবং ১৯৬৮ সালে পরপর দু’বার ‘বিশ্বের সেরা মহিলা’ খেতাবে সম্মানিত হন। একইভাবে ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্যালাপ পোল সার্ভের বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে সম্মান জানানো হয়। প্রাণী ও জীবজন্তুর প্রতি তাঁর বিশেষ যত্নের স্বীকৃতিতে আর্জেন্টাইন সোসাইটি তাঁকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেন (১৯৭১)।
হাজারো কর্মব্যস্ততার মধ্যেও শ্রীমতী গান্ধী লিখে গেছেন বেশ কিছু গ্রন্থ। ‘দ্য ইয়ার্স অফ চ্যালেঞ্জ’ (১৯৬৬-৬৯), ‘দ্য ইয়ার্স অফ এনডেভার’ (১৯৬৯-৭২), ‘ইন্ডিয়া (লন্ডন)’ (১৯৭৫) এবং ‘ইন্ডে (লুসানে)’ (১৯৭৯) – হল এমনই কয়েকটি সঙ্কলন গ্রন্থ যেখানে তাঁর বহু লেখা ও বিভিন্ন সময়ে প্রদত্ত ভাষণ স্থান পেয়েছে। দেশ-বিদেশে তিনি সফর করেছেন প্রচুর। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, বার্মা, চিন, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলিতেও বিভিন্ন সময়ে তিনি সফরে গেছেন। সরকারিভাবে সফর করেছেন ফ্রান্স, তৎকালীন দুই জার্মানি, গুয়ানা, হাঙ্গেরি, ইরান, ইরাক ও ইতালি। এছাড়াও আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, চেকোস্লোভাকিয়া, বলিভিয়া এবং ইজিপ্টও তিনি সফর করেছেন। ইন্দোনেশিয়া, জাপান, জামাইকা, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, মরিশাস, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নাইজেরিয়া, ওমান, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, সিঙ্গাপুর, স্যুইজারল্যান্ড, সিরিয়া, স্যুইডেন, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, ত্রিনিদাদ, টোবাগো, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, বৃটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র, উরুগুয়ে, যুগোস্লাভিয়া, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবোয়েও ছিল তাঁর সফর তালিকায়। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদর দপ্তরে তাঁর ছিল উজ্জ্বল উপস্থিতি।
তথ্যসূত্র : পিএমইন্ডিয়া
পশ্চিম বাংলার একাধিক জেলায় ঝড়-বৃষ্টি আসন্ন 📍 কলকাতা, ১৭ মার্চ: পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।…
আজ, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, আমরা উদযাপন করছি স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি কেবল তাঁর…
১০ জানুয়ারি ২০২৫ এর বই মেলা উপলক্ষে বাজারে এসেছে কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম…
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের আবহাওয়া রইবে বিশেষভাবে পরিবর্তনশীল। পার্বত্য অঞ্চল ও…
রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশিকা জারি করল…
জাতীয় নির্বাচন কমিশন আজ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করবে। দুপুর ২টায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের…