পূজার উপকরণ:
অন্যান্য সকল পুজোর মতো এই পূজায় বিশেষ কয়েকটি সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে বিশেষ কিছু উপকরণ হল- অভ্র-আবির, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম, যবের শিষ, বাংল বা সংস্কৃত গ্রন্থ, শ্লেট-পেন্সিল, গাঁদা ও পলাশ ফুল, ফল-মূল, অন্যান্য ফুল ও বেলপাতা। বসন্তের আমের মুকুল দেওয়া হয় দেবীকে। বসন্তের অন্যতম ফুল পলাশ দেবীর পছন্দের বলে জানা যায়। বিদ্যার দেবীকে ছোটোরা শ্লেট-পেন্সিল, আর বড়রা তাদের বইখাতা অর্পণ করে আশীর্বাদের জন্য।
পূজা পদ্ধতি:
সরস্বতী পুজোর দিন একদম ছোটো শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতর্পণের প্রথাও প্রচলিত। বসন্ত পঞ্চমীর দিন ভোরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গৃহ ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবী পূজা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সকলে খুব ভোরে স্নান শেষে পরিস্কার পোশাকে দেবীর পুজো করবে। সেদিন মাছ-মাংস খাওয়া যাবে না, নিরামিষ খেতে হয়। পুজোর আগে মঙ্গল কামনায় উপবাস রাখা হয়। ওইদিন লেখাপড়ায় নিষেধ থাকে। পূজার আগে বিদ্যার্থীদের কুল খাওয়া বারণ। পূজার শেষে পুষ্পাঞ্জলি। পূজার দিন সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। পরদিন সকালে আবার পূজা করার পর চিড়ে ও দই মেশানো দধিকর্মা নিবেদন করে নিয়মবিধি সমাপ্ত হয়। পূজাশেষে সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও পূজার দু-তিন পরে দেবী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
দেবীর পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র:
দেবীর এই পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র তিনবার পাঠ করা হয়।
“ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
ওঁ ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈই নমো নমঃ।
বেদ বেদান্ত বেদাঙ্গ বিদ্যাস্থানভ্যঃ এব চ।।
এষ সচন্দন পুষ্প বিল্বপত্রাঞ্জলি ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ।।”
দেবী প্রণাম মন্ত্র:
পুজোশেষে দেবীকে নিষ্ঠাভরে প্রণাম করে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে–
“নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।”