বিদ্যা ও ললিতকলার দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে উৎসব পালিত হয়। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয়। তিথিটি বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, নেপাল ও বাংলাদেশে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বিশেষ উৎসাহ দেখা যায়। বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পুজো করে শিশুদের হাতেখড়ি দেওয়া হয়। প্রায় প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁর পূজা হয়। বিদ্যার্থীরা সরস্বতীর আশীর্বাদে বিদ্যালাভের আশায় তাঁর আরাধনা করে। সরস্বতী মূলত বৈদিক দেবী। বেদে সরস্বতী প্রধানত নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। বৃহস্পতি হচ্ছেন জ্ঞানের দেবতা, বৃহস্পতি পত্নী সরস্বতীও জ্ঞানের দেবী হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। তাঁর এক হাতে থাকে বীণা, অন্য হাতে পুস্তক। সরস্বতীর বাহন হাঁস। সরস্বতী বিদ্যাদেবী, জ্ঞানদায়িনী, বীণাপাণি, কুলপ্রিয়া প্রভৃতি নামেও পরিচিতা।
দেবী পার্বতী ও মহাদেবের কন্যা, লক্ষ্মী-কার্তিক-গণেশের সহোদরা ভগিনী হলেন দেবী সরস্বতী। এই পূজার বিশেষ কিছু উপকরণ হল- অভ্র-আবির, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম, যবের শিষ, বাংল বা সংস্কৃত গ্রন্থ, শ্লেট-পেন্সিল, গাঁদা ও পলাশ ফুল, ফল-মূল, অন্যান্য ফুল ও বেলপাতা। বসন্তের অন্যতম ফুল পলাশ দেবীর পছন্দের বলে জানা যায়। বিদ্যার দেবীকে ছোটোরা শ্লেট-পেন্সিল, আর বড়রা তাদের বইখাতা অর্পণ করে আশীর্বাদের জন্য। নিয়ম অনুযায়ী, বসন্ত পঞ্চমীর ভোরে সকলে স্নান শেষে পরিস্কার পোশাকে দেবীর পুজো করবে। সেদিন নিরামিষ খেতে হয়। পুজোর আগে মঙ্গল কামনায় উপবাস রাখা হয়। ওইদিন লেখাপড়ায় নিষেধ থাকে। পূজার আগে বিদ্যার্থীদের কুল খাওয়া বারণ। পূজার শেষে পুষ্পাঞ্জলি। পরদিন সকালে আবার পূজা করার পর চিড়ে ও দই মেশানো দধিকর্মা নিবেদন করে নিয়মবিধি সমাপ্ত হয়। পূজাশেষে সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। বসন্তের পঞ্চমীর এই তিথিতে বাসন্তী রঙে সেজে ওঠে আট থেকে আশি। সকল বিদ্যার্থীরা এই অঘোষিত ছুটির দিনে আনন্দে মেতে ওঠে। ছেলেরা পাজামা-পাঞ্জাবীতে, মেয়েরা শাড়িতে বিশেষ সাজে সেজে ওঠে। সমগ্র বাঙালী জাতির প্রেমের দিবস সরস্বতী পুজোর দিনটি।