অমিত মন্ডল : নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু 1939 সালের ৩ রা মে ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন। ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন হওয়ার পেছনে খুব ভালো একটি গল্প আছে সুভাষচন্দ্র বসু দেশের সেবা করতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেন এবং সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় তিনি চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। কিন্তু ১৯২১ সালে সিভিল সার্ভিসের মতো উঁচু পদের চাকরি কে তিনি লাথি মেরে ভারতে চলে আসেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতে ফিরে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং কংগ্রেস পার্টিতে যোগ দেন। সেই সময় কংগ্রেস পার্টির হর্তা কর্তা ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। মহাত্মা গান্ধী ছিলেন শান্ত স্বভাবের মানুষ। সত্য এবং অহিংসা ছিল তার আন্দোলনের প্রধান অস্ত্র।
তিনি তাঁর আন্দোলনে কখনও হিংসাত্মক আচরণ সহ্য করতেন না। চৌরিচৌরার ঘটনা হওয়ার পর তিনি অসহযোগ আন্দোলন বন্ধ দিয়েছিলেন। কিন্তু সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর একদম বিপরীত চরিত্রের লোক। তিনি ছিলেন চাণক্যের মতন, যিনি বিশ্বাস করতেন – “শত্রুর শত্রু বন্ধু” এবং ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য তিনি হিংসার পথ বেছে নিতেও রাজি ছিলেন।
এজন্য মহাত্মা গান্ধী এবং সুভাষচন্দ্র বসু মধ্যে মতভেদ শুরু হয়। ১৯৩৯ সালে রাষ্ট্রীয় কংগ্রেসের অধ্যক্ষের পদের জন্য নির্বাচন শুরু হয়। সুভাষচন্দ্র বসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। মহাত্মা গান্ধী সিতারামায়্যা পট্টভিকে কে তাঁর বিপক্ষে নির্বাচনে দাঁড় করান। কিন্তু নির্বাচনে সিতারামাইয়া পরাজিত হন এবং গান্ধীজি এই হারকে তাঁর নিজের হার বলে মনে করেন এবং দুঃখ পান। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যখন জানতে পারেন সিতারামাইয়া নির্বাচনে হেরে যাওয়ার জন্য গান্ধীজী দুঃখ পেয়েছেন তখন তিনি কংগ্রেসের অধ্যক্ষের পদ থেকে ইস্তফা দেন।
কিন্তু একই দলে দুজন বিপরীত চরিত্রের মানুষ থাকা সম্ভব নয়। মহাত্মা গান্ধীর শান্ত স্বভাব এবং নেতাজির উগ্ৰ স্বভাবের জন্য তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে দূরত্বের সৃষ্টি হয় এবং এই একই কারণে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ধীরে ধীরে গান্ধী বিরোধিতা পরিণত হচ্ছিলেন। এজন্য তিনি রাষ্ট্রীয় কংগ্রেস ছেড়ে দেন। এরপর ১৯৩৯ সালের ৩রা মে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তার নিজের দল তৈরি করেন এবং নাম দেন ফরওয়ার্ড ব্লক।