স্বামী বিবেকানন্দের ভারতে প্রত্যাবর্তন এবং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন প্রতিষ্ঠা


সোমবার,১১/০১/২০২১
1379

ভারতে প্রত্যাবর্তন:

কলম্বো থেকে আলমোড়া:

স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৭ সালের ১৫ই জানুয়ারী কলম্বো পৌঁছান এবং এক পরমানন্দদায়ক অভ্যর্থনা গ্রহণ করেন । এখানে তিনি প্রাচ্যে তাঁর প্রথম প্রকাশ্য বক্তৃতা (ভারত, পবিত্র ভূমি) করেন । সেখান থেকে কলকাতায় তাঁর ভ্রমণ ছিল এক বিজয়ঘটিত অগ্রগতি । তিনি ভ্রমণ করেন কলম্বো থেকে পাম্বান, রামেস্বরম, রামনাদ, মাধুরাই, কুম্বাকোনাম এবং মাদ্রাজ এবং এ জায়গাগুলোতে বক্তৃতা দেন । জনগণ এবং রাজারা তাঁকে অত্যুৎসাহী অভ্যর্থনা জানান । পাম্বানে মিছিলে রামনাদের রাজা নিজে স্বামীজির ঘোড়ার গাড়ি টানেন । মাদ্রাজে যাওয়ার পথে কতিপয় জাগয়ায় যেখানে ট্রেন থামতো না সেখানে জনগণ রেললাইনে বসে ট্রেন থামাতো এবং স্বামীজির বক্তৃতা শোনার পরই ট্রেনকে যেতে দিত । মাদ্রাজ থেকে তিনি কলকাতায় তাঁর ভ্রমণ অব্যাহত রাখেন এবং আলমোরা পর্যন্ত তাঁর বক্তৃতা দেয়া চালিয়ে যান ।

যেখানে পাশ্চাত্যে তিনি ভারতের মহান আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের কথা বলেছিলেন, সেখানে ভারতে ফিরে তাঁর ‘কলম্বো থেকে আলমোরা’ বক্তৃতা ছিল জনগণের জন্য নৈতিক অনুপ্রেরণা, বর্ণাশ্রম ভাইরাস দূরীকরণ, বিজ্ঞান শিক্ষায় উৎসাহদান, দেশের শিল্পায়ন, দারিদ্র দূরীকরণ, ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান । এ সমস্ত বক্তৃতাসমূহ কলম্বো থেকে আলমোরা বক্তৃতা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে । এ বক্তৃতাসমূহকে জাতীয়তাবাদী ঐকান্তিকতা ও আধ্যাত্মিক ভাবাদর্শের বলে বিবেচনা করা হয় । তাঁর বক্তৃতাসমূহ মহাত্মা গান্ধী, বিপিন চন্দ্র পাল এবং বালগঙ্গাধর তিলক সহ আরো অনেক ভারতীয় নেতাদের উপর প্রচুর প্রভাব বিস্তার করেছিল ।

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন প্রতিষ্ঠা:-

১৮৯৭ সালের ১লা মে স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতায় ধর্ম প্রচারের জন্য সংগঠন “রামকৃষ্ণ মঠ” এবং সামাজিক কাজের জন্য সংগঠন “রামকৃষ্ণ মিশন” প্রতিষ্ঠা করেন । এটি ছিল শিক্ষামূলক, সাংস্কৃতিক, চিকিৎসা-সংক্রান্ত এবং দাতব্য কাজের মধ্য দিয়ে জনগণকে সাহায্য করার এক সামাজিক-ধর্মীয় আন্দোলনের প্রারম্ভ । রামকৃষ্ণ মিশনের আদর্শের ভিত্তি হচ্ছে কর্ম যোগ । তাঁর দ্বারা দুটি মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যার মধ্যে কলকাতার নিকট বেলুড়ের মঠটি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের হেডকোয়ার্টার করা হয়েছিল এবং অন্যটি হিমালয়ের মায়াবতীতে আলমোরার নিকটে অদ্বৈত আশ্রম নামে পরিচিত এবং পরে তৃতীয় মঠটি মাদ্রাজে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল । ইংরেজীতে প্রবুদ্ধ ভারত ও বাংলায় উদ্বোধন নামে দুটি সাময়িকী চালু করা হয়েছিল । একই বছর মুর্শিদাবাদ জেলায় স্বামী দুর্ভিক্ষের জন্য অখন্ডানন্দ কর্তৃক ত্রাণ কাজ চালু করা হয়েছিল ।

১৮৯৩ সালে পাশ্চাত্যে স্বামীজির প্রথম ভ্রমণের সময় যখন তারা একত্রে ইয়োকাহামা থেকে শিকাগো যাত্রা করেছিলেন তখন বিবেকানন্দ স্যার জামশেদজী টাটাকে একটি গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন । আনুমানিক এ সময়ে স্বামীজি টাটার প্রতিষ্ঠিত “বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান” এর প্রধান হবার অনুরোধ সম্বলিত একটি চিঠি পান । কিন্ত্তু বিবেকানন্দ প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন এই বলে যে সেটি তাঁর আধ্যাত্মিক আগ্রহের সাথে সংঘাতপূর্ণ । তিনি পরে পুনঃসংস্কারকৃত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পক্ষের আর্য সমাজ ও গোঁড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পক্ষের সনাতনপন্থীদের মধ্যে ঐক্যতান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে পশ্চিম পাঞ্জাব ভ্রমণ করেন ।

রাওয়ালপিন্ডীতে তিনি আর্য সমাজবাদী ও মুসলিমদের মধ্যকার সক্রিয় বিরোধ নির্মূল করার পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দেন । তাঁর লাহোর ভ্রমণ স্মরণীয় তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতার জন্য এবং একজন গণিতের অধ্যাপক তীর্থ রাম গোস্বামীর সাথে তাঁর সম্পৃক্ততার জন্য যে অধ্যাপক পরে স্বামী রাম তীর্থ নামে সন্ন্যাসজীবন গ্রহণ করেন এবং ভারতে ও আমেরিকায় বেদান্ত প্রচার করেন । তিনি দিল্লী এবং খেতরীসহ অন্যান্য জায়গায়ও ভ্রমণ করেন এবং ১৮৯৬ সালের জানুয়ারীতে কলকাতায় ফিরে আসেন । পরবর্তী কয়েক মাস তিনি মঠের কাজ সংহত করতে এবং শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অতিবাহিত করেন।

Affiliate Link Earn Money from IndiaMART Affiliate

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট