“মকর সংক্রান্তি” আমাদের সমাজ জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব

রীতা চক্রবর্তী: “মকর সংক্রান্তি” আমাদের সমাজ জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। বৈদিক সংস্কৃতি অনুসারে এটি মূলতঃ সূর্যপূজার দিন। পৌষ মাসের শেষ দিন এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। তাই একে “পৌষ পার্বন”ও বলা হয়। মাসের শেষ দিনটিকে সংক্রান্তি বলে। “সংক্রান্তি” শব্দটি সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ একটি রাশি থেকে অপর একটিতে রাশিতে গমন। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে বারোটি রাশির বারোটি সংক্রান্তি হয়।বারোটি রাশির বারোটি মাস। প্রতি মাসের শেষ দিনটিকে সংক্রান্তি বলা হয়। সূর্য “ধনুরাশি” থেকে “মকর রাশিতে” গমন করে বলে এই দিনটিকে” মকর সংক্রান্তি” বলা হয়।পৃথিবী পৃষ্ঠে সূর্যরশ্মির তির্যক পতনের ফলে প্রচন্ড শীতের জড়তার অভিশাপ নেমে আসে। উত্তাপ হীনতার সেই অভিশাপ থেকে মুক্তির সূচনা স্বরূপ এই দিনটিতে অবগাহন স্নান ও সূর্য পূজা করা হয়। এইদিন পশ্চিম বাংলার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগরদ্বীপে “গঙ্গাসাগর মেলা” হয়।এখানে সাংখ্যদর্শনের রচয়িতা “কপিল” মুনির আশ্রম রয়েছে।পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এই দিন সগরবংশীয় রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্তে আনয়ন করেন। মহামুনি কপিলের ক্রোধাগ্নিতে ভস্ম হয়ে যাওয়া সগরবংশীয় সন্তানেরা গঙ্গার পূতস্পর্শে পুনর্জীবন লাভ করে।

তাই পৃথিবীর বহু দেশ থেকে বহু মানুষ -সাধু-সন্ন্যাসীরা এই দিন গঙ্গাসাগরে পূণ্য স্নান করতে আসেন। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের কেন্দুলিতে “জয়দেবের মেলা” হয়। “গীত গোবিন্দ” রচয়িতা জয়দেবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর এখানে “বাউল গানের “উৎসব হয়। এই সময় মূলতঃ উত্তরায়নের সূচনা হয়। যদিও ফলিত বিজ্ঞান অনুসারে সূর্যের উন্নতি কোনের ভিত্তিতে 22 শে ডিসেম্বর দিনটিতে দক্ষিণায়ন শেষ হয়ে উত্তরায়ন শুরু হয়।মাসের পূর্ণ হিসাবে সংরক্ষণের জন্য সংক্রান্তিতেই পৌষ পার্বনের উৎসব পালিত হয়। নতুন ফসলের উৎসব রূপে এর একটি আলাদা গুরুত্ব আছে। কৃষিভিত্তিক অর্থ নীতির মূল স্তম্ভরূপে বাংলার ঘরে ঘরে “নতুন ধানের” উৎসব “নবান্ন”ও এইদিনই পালিত হয়। জিরান কাঠের নলেনগুড়, খেজুরি গুড়, তিলকুট, পিঠে – পুলি হল পৌষ পার্বনের মূল আকর্ষণ। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এই দিনটিকে পূজা করা হয়। আসামে “মাঘী বিহু”, তামিলনাড়ুতে “পোঙ্গল”, কেরালাতে “ওনম”, মহারাষ্ট্রে “তিলগুল”, গুজরাতে “ঘুড়ি” উৎসব হয়। “ঘুড়ি “উৎসবটি আসলে “প্রতীকী” রূপে পালন করা হয়। নিজের মনের কথা ঘুড়ির মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে পাঠানোর সাংকেতিক অর্থে ঘুড়ি ওড়ানোর এই উৎসব। বর্তমানে এটি একটি আন্তর্জাতিক উৎসবে পরিনত হয়েছে।

রীতা চক্রবর্তীর – ফেইসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহিত

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

Barcode স্টিকার কিভাবে তৈরি করা হয় ?

Barcode স্টিকার তৈরি করার প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ, তবে নির্ভর করে আপনি কিসের জন্য এটি বানাচ্ছেন—ব্যবসার…

7 hours ago

দক্ষিণেশ্বরের পর কালীঘাট! নববর্ষের প্রাক্কালে স্কাইওয়াক উপহার, কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা — “ধর্ম যাঁর যাঁর, উৎসব সবার”

কলকাতা, ১৪ এপ্রিল ২০২৫:নববর্ষের আগের দিনেই শহরবাসীকে বিশেষ উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণেশ্বরের পর…

3 days ago

নিজের রাজ্যেই উদ্বাস্তু! মুর্শিদাবাদের ভয়াবহ ঘটনায় নিঃস্ব একাধিক পরিবার

মুর্শিদাবাদ, ১৫ এপ্রিল ২০২৫:এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। ভাত বসিয়েই কেউ দৌড়েছেন প্রাণ বাঁচাতে। রাতারাতি…

3 days ago

নববর্ষের সকালে পথে শুভেন্দু, চৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দির থেকে বর্গভীমা মন্দির পর্যন্ত শোভাযাত্রা

নন্দীগ্রাম, ১৫ এপ্রিল ২০২৫: বাংলা নববর্ষের সকালেই ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক আবহে পথে নামলেন রাজ্যের বিরোধী…

3 days ago

“আইন কখনও নিজের হাতে তুলে নেবেন না” — কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

কলকাতা, ১৫ এপ্রিল ২০২৫: রাজ্যের একের পর এক অশান্ত ঘটনা— মুর্শিদাবাদ, ভাঙড় — সব মিলিয়ে…

3 days ago

মুর্শিদাবাদের পর ভাঙড়েও অশান্তির আগুন, গ্রেফতার ৮ জন

ভাঙড়: মুর্শিদাবাদে ঘটনার আঁচ না মিটতেই এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। এলাকায়…

3 days ago