ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে ব্যবহার হচ্ছে বিশ্বসেরা উপাদান। ব্যবহারের আগে নিশ্চিত করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মান। পরামর্শক প্যানেলের অনুমোদন ছাড়া প্রকল্পের কাজে কোনো উপাদান ব্যবহার করতে পারছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে সেতুর কার্যকাল ১০০ বছর ধরা হলেও তার চেয়ে বেশি মেয়াদে টিকে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে, পদ্মা সেতুর নামে ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও মূল সেতুতে ব্যয় হচ্ছে মাত্র ১২ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, পুনর্বাসনসহ নানা খাতে। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায় চলছে পুরো পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে ৯০ ভাগের বেশি শেষ হয়ে এসেছে মূল সেতুর কাজ। সবগুলো স্প্যানের সংযোগ শেষে অপেক্ষা এখন সেতুকে যান চলাচলের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলার। তবে শুধু স্প্যান আর পিলারের মূল সেতু নিয়েই পদ্মা সেতু প্রকল্প নয়। মূল সেতুর বাইরেও এ প্রকল্পে যোগ করা আছে আরো বড় চারটি কাজ। এর মধ্যে সংশোধিত প্রস্তাবনা অনুযায়ী মূল সেতুর জন্য বরাদ্দ ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। এরপরেই সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ নদী শাসনের কাজে। পদ্মার মতো উত্তাল ও রহস্যময় নদীতে নদী শাসন ও সার্ভিস এরিয়ায় মাটি ভরাটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
পৃথিবীর ইতিহাসে একক কোনো নদী শাসনের জন্য এটাই সর্বোচ্চ বরাদ্দ। পদ্মা সেতুর পুনর্বাসন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া নদী থেকে উত্তোলন করা বালু ফেলার জন্য আলাদা করে ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া পরিবেশ রক্ষায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে কাজ করে যাওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্পে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া পরামর্শক, তদারকি, অডিট, প্রকৌশলগত সহায়তা ও নিরাপত্তাসহ বেশ কটি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে সেতু সচিব বেলায়েত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যতম সেরা কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাংক থেকে ডিজাইন, পরামর্শ ও কোয়ালিটি নিয়ে যে শর্ত ছিল, তা মেনেই পদ্মা সেতুর কাজটি করা হচ্ছে। নিজস্ব টাকায় তৈরি পদ্মা সেতু প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়াতে হয়েছে প্রকল্পের বাজেটও। তবে এর বেশির ভাগ, অর্থাৎ মূল সেতুর প্রায় দেড়গুণ বেশি খরচ হচ্ছে অবকাঠামো ও টেকসই সুবিধা নিশ্চিত করতে। মাওয়ার কুমারভোগ ইয়ার্ডের বিশালত্ব এবং কর্মযজ্ঞ দেখলে যে কেউ টের পাবেন বিশ্বের অন্যতম সেরা নির্মাণকাজ চলছে এখানে।
পদ্মা সেতুর কাজে যে উপাদানগুলো ব্যবহার হচ্ছে সেগুলোকে উপযোগী করে তুলতে কাজ করা হয় বিশাল এলাকাজুড়ে। সেতুর খুঁটি তৈরিতে যে স্টিলের টুকরো ব্যবহার হয়েছে তার সবগুলোই এসেছে চীন থেকে। একইভাবে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে স্প্যান জোড়া দেওয়ার কাজ দেশে হলেও এ কাঠামোর স্টিলের টুকরোগুলো এসেছে চীন থেকে। সংযোগ সড়ক থেকে শুরু করে সেতুর নির্মাণকাজে যে পাথর ব্যবহার হয়েছে তা আনা হয়েছে ভিয়েতনাম, দুবাই, ভারত ও ওমান থেকে। দেশের মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি থেকে বাছাই করা পাথরের একটি অংশও ব্যবহার হয়েছে এ সেতুতে। তবে সেতুর বড় একটি অংশ জুড়ে ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশের উপাদানও। প্রকল্পের পিলার, ভায়াডাক্ট, সংযোগ সড়কসহ প্রতিটি কাজে যত রড ব্যবহার হচ্ছে, তার শতভাগই দেশীয়। অস্ট্রেলিয়া থেকে অল্প পরিমাণে মিহি সিমেন্ট আনা হলেও বেশির ভাগ সিমেন্টই ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশি কোম্পানির। সেতু সচিব বেলায়েত হোসেন বলেন, সেতু পাইল ১২০ থেকে ১২৮ মিটার মাটির গভীরে গেছে। যা বিশ্ব রেকর্ড। আরেকটি বিশ্ব রেকর্ড হলো প্রতিটি স্প্যান ৩২ থেকে ৩৩ টন ওজনের। যেগুলো সেতুর খুঁটির ওপর বসানো হয়।