নিউ নর্মালে সেকেন্ড হোম, ফেষ্টিভাল স্পেশাল ট্রেন ধরে সোজা পুরী


সোমবার,১৪/১২/২০২০
1331

রামতনু চট্টোপাধ্যায় : আগষ্ট মাসে বাড়ি না যাবার দুঃখের কথা আগে বলেছিলাম। এবার সুযোগ আসতেই টিকিট কেটে রাত্রি সাড়ে দশটার ফেষ্টিভাল স্পেশাল ট্রেন ধরে সোজা পুরী। নিউ নর্মালের ষ্টেশন এবং ট্রেন দুইই ভীষণ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। তবে যাত্রী খুবই কম। সেদিন আমার কম্পার্টমেন্টের সমস্ত বার্থও ভর্তি ছিলোনা। দীর্ঘ সাড়ে আট মাস পর এরকম ট্রেন সফর! তার ওপর গন্তব্য হলো পুরী। কেমন একটা শিহরণ জাগানো অনুভূতি!! ট্রেন ছাড়তেই শুরু হলো শোঁ শাঁ শব্দ আর গোটা কম্পার্টমেন্ট স্যানিটাইজারের গন্ধে ম ম করতে লাগলো। ভোরে ভুবনেশ্বর ঢুকতেই ট্রেন প্রায় ফাঁকা। পুরী এলাম নির্দিষ্ট সময়ের আধঘন্টা আগে। কানু কে বলা ছিল,সে অটো নিয়ে দাঁড়িয়েই ছিল।ফাঁকা,প্রায় জনমানবহীন পুরী ষ্টেশন। সামান্য কিছু যাত্রী, বাইরে রিক্সা-অটোর কোলাহল নেই, সব কেমন ফাঁকা ফাঁকা! অটোতে উঠে সেকেন্ড হোমের দিকে যেতে যেতেই দেখলাম রাস্তা চওড়া হয়েছে , পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।

ছবি : রামতনু চট্টোপাধ্যায়

জগন্নাথ মন্দির সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ। মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করে রত্নবেদীতে মহাপ্রভুর দর্শন হচ্ছে না, কিন্তু জগন্নাথ মহাপ্রভু রত্মবেদী থেকে আমাদেরকে দেখছেন নিউ নর্মালে জগন্নাথ মহাপ্রভুর কাছে এটাই বড় পাওনা। কেবলমাত্র পূর্বদ্বার বা সিংহদ্বার দিয়ে ‘পতিতপাবন’ মূর্তি দর্শন হচ্ছে। নিয়মিত সেবা পূজাও চলছে। প্রসাদেরও ব্যবস্থা আছে। আনন্দ বাজার বন্ধ থাকলেও উত্তর (হস্তীদ্বার) ও দক্ষিণ (অশ্বদ্বার) দরজার বাইরে টোকেন নিয়ে প্রসাদ নেবার ক্যাম্প হয়েছে। জগন্নাথ মন্দির চত্বরের নবকলেবর হয়েছে, সিংহদ্বারের সামনে বিরাট প্রাঙ্গনে ফুলের বাগান, বড়দন্ডা এখন অতিবড়দন্ডা, মন্দিরের চারিদিকেই বিরাট চওড়া রাস্তা, উত্তর,পশ্চিম, দক্ষিণ দরজা ঘুরে প্রদক্ষিণ সম্পূর্ণ করে অবাক বিস্ময়ে নতুন পুরীর দিকে তাকিয়ে থাকি !

ছবি : রামতনু চট্টোপাধ্যায়

স্বর্গদ্বারের ল্যান্ডমার্ক চৈতন্য মহাপ্রভুর মূর্তির দুপাশেই ফাঁকা রাস্তা। লাইট হাউসের পাশ দিয়ে মোহনার দিকে নদীর পাড়ে যাচ্ছিলাম বাঁদিকে সমুদ্রের পাড় বাঁধানো হচ্ছে, আরেকপাশে ট্যুরিষ্টহীন হোটেলের সারি , যার কিছু আবার ফণীর ও করোনার ছোবলে একবারে বন্ধ। বালিশাহি রোড বা স্বর্গদ্বার রোড দিয়ে মন্দিরের দিকে বিভিন্ন দিন হাঁটলাম বিভিন্ন সময় , সকাল দুপুর বা সন্ধ্যায়, প্রতিবারই একই দৃশ্য, ভারত সেবাশ্রমের পাশাপাশি ‘Sale’ লেখা কাপড়ের দোকান গুলোতে ক্রেতার থেকে বিক্রেতা বেশী।গাঙ্গুরামের দোকান পার হবার পর জনশূন্য রাস্তায় বন্ধ লজ , ধর্মশালা, দোকানের সারি, অন্ধকার পদ্মিনী লজের নীচের তলায় আলোকোজ্জ্বল নৃসিংহ সুইটস ক্রেতাদের অপেক্ষায়, আটাকলের কাছে গাছোকালীর মন্দিরে স্থানীয় মানুষের ভীড়
আমার পছন্দের মিষ্টিমহল্লাও প্রায় বন্ধ, পাপুড়িভাজা-গরম মালপোয়ার দোকানও বন্ধ। নৃসিংহ সুইটস এর আদি-আসল-প্রাচীন সব দোকানই ভ্যানিস, পৌঁছে গেলাম এতদিন খাজা ও জুতা রাখার দোকানের আড়ালে থাকা দেবী ‘কাকুড়িখাই’ এর মন্দিরের সামনেবাঁদিকে লোকনাথ মন্দির যাবার রাস্তা। সামনে বড়দন্ডা।
স্বর্গদ্বারে সমুদ্রের তীরে অস্থায়ী দোকানগুলো সমুদ্রের নোনা বাতাসে তার মালিকের মতোই ক্ষয়াটে, অন্ধকারে ডুবে আছে। চারিদিকে শুধু প্রতীক্ষা, প্রতীক্ষা,অনন্ত প্রতীক্ষা, নুলিয়ারা নিয়মকরে ছাতা টাঙিয়ে ফাঁকা চেয়ার পেতে ট্যুরিষ্টের প্রতীক্ষায়মনি-মুক্তো-হীরে-জহরতের ফেরিওয়ালা নিয়ম করে পাক দিচ্ছে ক্রেতার প্রতীক্ষায় মদনমোহন-সিঙারা অলাও বাঁক কাঁধে করে ক্রেতার প্রতীক্ষায়, উট ও ঘোড়াঅলাও সওয়ারির প্রতীক্ষায় জগন্নাথ মন্দিরের পান্ডারাও যজমানের প্রতীক্ষায় মেঘমুক্ত আকাশে প্রতিদিনের উদীয়মান সূর্যও নতুন প্রভাতের, রোগমুক্ত পৃথিবীর প্রতীক্ষায়
দ্রুত অবসান হোক প্রতীক্ষার , প্রভু জগন্নাথের কাছে এই প্রার্থনা।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট