বাংলাদেশে রোগীর কিডনি গায়েব: হত্যা মামলা


রবিবার,২৯/১১/২০২০
608

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: একটি কিডনি অপসারণের কথা বলে দুই কিডনি অপসারণের ঘটনায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। নিহত ওই রোগীর নাম রওশন আরা (৫৫)। দুটি কিডনি অপসারণের এক মাস পরেই রওশন আরার মৃত্যু হলে তার ছেলে মো. রফিক সিকদার বাদী হয়ে চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ২৭ নভেম্বর শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা (নম্বর ৪৩) দায়ের করেন। এই মামলায় বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল (৫৫), একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন (৪৮), চিকিৎসক মো. মোস্তফা কামাল (৪৬) ও চিকিৎসক আল মামুনকে (৩৩) আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও তিনচার জনকে আসামি করা হয়েছে। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুন অর রশিদ বলেন, নিহত রওশন আরার মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছিল। সম্প্রতি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিয়েছে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী তার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় একটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। তবে এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর দুই বছর পর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেয়ে নিহতের ছেলে রফিক সিকদার শাহবাগ থানায় মামলা করেন।

বিজ্ঞাপন

নিহত রওশন আরার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে (নম্বর১৬৪৪/১৮) বিশেষজ্ঞরা কারণ উল্লেখ করেন, অল অরগান ড্যামেজ হওয়ার কারণে রওশন আরার মৃত্যু হয়েছে এবং তার দুটি কিডনিই সার্জিক্যালি অপসারণ করা হয়েছে। এদিকে ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর রওশন আরার মৃত্যুর একদিন পর ওই বছরের ১ নভেম্বর তার ছেলে রফিক সিকদার শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর৫৩) করেছিলেন। এরপর শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) চম্পক মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠান। সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ২৭ জুন তার মাকে ঢাকার মিরপুর বিআইএইচএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানের চিকিৎসক ইউসুফ আলী পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানান, তার মায়ের ডান কিডনিটি স্বাভাবিক এবং বাম কিডনিটিএফেক্টেড অবস্থায় আছে। এরপর রওশন আরাকে ২০১৮ সালের ১ জুলাই উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই দিনই অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলালের তত্ত্বাবধানে রওশন আরাকে হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়। ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করার নির্দেশনা দেন তিনি। তবে ১২ আগস্ট অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, রওশন আরার ডান কিডনিটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তার দুটো কিডনি সেপারেট অবস্থায় আছে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট বিএসএমএমইউ থেকে ডাক্তার সৈয়দ সুলতান ফোন করে জানান, রওশন আরার বাম পাশের অকেজো কিডনি অপারেশন করার জন্য আসতে হবে। ওই বছরের ২৮ আগস্ট অধ্যাপক হাবীবুর রহমানের পরামর্শে রওশন আরার বাম কিডনি অপারেশনের জন্য তাকে ভর্তি করে বিভিন্ন টেস্ট করানো হয়। কিন্তু দুটি পরীক্ষায় জানা যায় তার কিডনি স্বাভাবিক রয়েছে। তবু ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট চিকিৎসক হাবিবুর রহমান দুলাল রওশন আরার বাম কিডনিটি অপসারণ করতে বলেন। ওই দিন দুপুরে হাসপাতালের ১০ তলার ইউরোলজি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল, সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার ফারুক হোসেন, ডাক্তার মোস্তফা কামাল ও ডাক্তার আল মামুন বাম পাশে থাকা কিডনিটি অপসারণের জন্য অপারেশন শুরু করেন। প্রায় ৩ ঘণ্টা অপারেশনের পর একটি কিডনি স্বজনদের হাতে দেওয়া হয়। তবে এরপরই রওশন আরার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রাতেই তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিতে বলা হয়। হাসপাতালে আইসিইউ খালি না থাকায় ডিউটি ডাক্তারের পরামর্শে রোগীকে মগবাজারে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল নেওয়া হয়। ৬ আগস্ট ওই হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের প্রফেসর ডাক্তার ফখরুল ইসলাম পরীক্ষা করে প্রথম জানান, রওশন আরার দুটি কিডনির একটিও নেই। নিহত রওশন আরার ছেলে রফিক সিকদার অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট