অভিজিৎ : এইতো পুজোর কিছুদিন আগের কথা। কালনা বসবাসকারী আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহাশয় শ্রী অভিজিৎ ব্যানার্জি (অভিজিৎ স্যার)
Abhijit Banerjee, মহাশয় কে অনলাইনে দেখে মেসেজ করলাম যে ; কালনা সম্পর্কে একটি তথ্যচিত্র করতে চাই। স্যার যেহেতু নিজস্ব প্রকাশনা ও কালনার অব্যবসায়িক ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন, এবং নিজেও কালনার বিভিন্ন উন্নতি মুলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন তাই আমার কথা ফেলতে পারলেন না। সময় দিলেন এক সপ্তাহ পর সেইমতো একদিন সকালে শান্তিপুর কালনা ঘাট পার হয়ে পৌঁছে গেলাম স্যারের বাড়িতে। সেখানে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে এবং তার স্নেহপূর্ণ আতিথেয়তা ও জলখাবার খেয়ে দুজন মিলে বেরিয়ে পড়লাম কালনা পরিভ্রমণে। যেহেতু অনেকগুলো স্থান কভার করতে হবে তাই তিনি আমাকে ঘড়িতে সময় বেঁধে দিলেন এবং প্রতিটি স্থানে যাবার পর আমাকে এলার্ম এর মতন মনে করাতে থাকলেন ‘সময় শেষ হয়ে এসেছে’ আমি সেই মতো আমার মতন কাজ করতে লাগলাম।
আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানবার জন্য এবং এই স্থানগুলি ছাড়াও মোট দশটি স্থানের সিনেমাটিক ভিডিও এবং তাছাড়াও অনেক তথ্য জানার জন্য অনুগ্রহ করে আমার তথ্যচিত্রটি দেখুন। ভিডিও লিংক :
✓ জোড়া শিবমন্দির :
প্রথমে পৌছালাম জোড়া শিবমন্দির। তৎকালীন বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ টেরাকোটার কাজ দেখা যায় এই মন্দিরের ভাস্কর্যে। ১৭৫৩/৫৪ সাল নাগাদ বর্ধমান রাজ চিত্রসেনের পত্নি ছাঙ্গ কুমারী দেবী ও ইন্দ্র কুমারী দেবী রামেশ্বর ও ভুবনেশ্বর নামক এই দুটি শিব মন্দির তৈরি করেছিলেন। বর্তমানে মন্দিরের গায়ে অনেক টেরাকোটার কাজ থাকলেও বেশকিছু ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে এবং স্যারের মুখে জানতে পারলাম আর্কিওলজি ডিপারমেন্ট এই মন্দিরটি কে তাদের অধীনে নেবার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে।
✓ সিদ্ধেশ্বরী কালী বাড়ি:
অনেকের মতে এই সিদ্ধেশ্বরী কালী বাড়ির জন্য দেবী অম্বিকার নাম অনুসারে কালনার নাম অম্বিকা কালনা হয়। যদিওবা কালনার প্রাচীন ইতিহাস ঘাটলে অন্য কথা বলে। সেই আলোচনার বিষয়বস্তু এই ছোট্ট পরিসরে ব্যাখ্যা করার এই মুহূর্তে সম্ভব হয়ে উঠছে না, তা নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা করা যাবে । ১৭৪০ সালে বর্ধমান রাজা চিত্রসেন রায় বর্তমান মন্দির নির্মাণ করেন পাঁচটি শিব মন্দির উত্তর একটি জোড় বাংলা মন্দির নিয়ে দেবী অম্বিকা সিদ্ধেশ্বরী রূপে এখানে বিরাজিত।
✓ মহাপ্রভু মন্দির:
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জীবন কালে পৃথিবীর সর্বপ্রথম নির্মিত তার দারু মূর্তি এখানে অধিষ্ঠিত। জানা যায় শ্রী চৈতন্যদেব বৈঠা বেয়ে নৌকা চালিয়ে কালনা ঘাটে এসেছিলেন সেই নৌকার বৈঠা ও নিজের লেখা গীতা তা এই মন্দিরে সংরক্ষিত আছে।
✓ চৈতন্যদেবের বিশ্রাম স্থল:
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দির থেকে অদূরে অবস্থিত চৈতন্যদেবের বিশ্রাম স্থল। প্রায় পাঁচশো বছর পুরনো বিশাল তেঁতুল গাছের নিচে বেলে পাথরে শ্রীচৈতন্যদেবের পদচিহ্ন রাখা আছে। এখানে নিত্যদিন পূজা হয়। ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীচৈতন্যদেব এখানেই গৌরী দাস এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন।
✓ ১০৮ শিব মন্দির:
কালনার অন্যতম মূল আকর্ষণ এই ১০৮ শিব মন্দির। ১৮০১ সালে বর্ধমানের মহারাজ বীরচন্দ্র বাহাদুর এই মন্দির নির্মাণ করেন এবং নামকরণ করেন নব কৈলাস ধাম। এখানে বাইরের ৭৪ টি মন্দির ও ভেতরে ৩৪ টি মন্দির আছে সব মিলিয়ে ১১২ টি মন্দির থাকলেও ১০৮ টি শিব শিবলিঙ্গ আছে।
বাকি চারটে মন্দিরের শিবলিঙ্গ নেই কেন? এছাড়াও এখানে কি একসঙ্গে কতগুলি শিবলিঙ্গ দর্শন করা যায়? এবং কিভাবে তা সম্ভব?
✓ গোপাল জিউ মন্দির:
মন্দিরের চারপাশে এখনও অসামান্য টেরাকোটার কাজ দেখা যায় যেখানে কৃষ্ণবর্ণের নাড়ুগোপাল জগমোহন নামে পূজিত হন। ২৫ টি রত্ন বা ২৫ টি চূড়া প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই মন্দিরটি কিন্তু কোন রাজ পরিবার কর্তৃক নির্মিত নয়।
তবে কে এই বিশাল মন্দিরটি নির্মাণ করলেন?
✓ নাম ব্রহ্মমন্দির:
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে যুগপুরুষ শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের পদধূলি পড়েছিল এই স্থানে। ঠাকুর ভগবান দাস বাবাজির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। এই স্থান বৈষ্ণবধর্ম অবলম্বনকারীদের একটি তীর্থস্থান বলা চলে। এখানে একটি ইদারা আছে যেখানে ভগবান দাস বাবাজী বয়স কালে স্নান করতেন। গঙ্গাজল বাড়লে এখানকার জল বারে এবং জল ঘোলা হলে এই জল ঘোলা হয় তাই বিতর্কিত ভাবে অনেকের মতে এই ইদারা টি সুরঙ্গপথে গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত। এই ইঁদারার নাম পাতালগঙ্গা।
একবার দেখবেন নাকি এই পাতালগঙ্গা কে?
• এই তথ্যচিত্রটি তৈরীর জন্য আমি আমার শিক্ষক মহাশয়ের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। এবং তার উপহারের অনেকগুলি বইয়ের মধ্যে ‘কালনার ইতিবৃত্ত’ ও ‘কালনার টুরিস্ট গাইড’ থেকে অনেক তথ্য নিয়ে এই লেখাটি ও তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছি। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য সংশোধন কাম্য।