সুতপা দত্ত : সেবার স্কুলে গরম ছুটির আগে টিফিনের সময় ছেলে মেয়েদের মতো দিদিমণিদের মনেও বেজায় স্ফূর্তি। টিফিন টাইমে খালি প্ল্যানিং…মেয়ে মহিলা এদিকে তিনজন যাবে বললে, পরদিন এসে একজনের নাকচ, শ্বাশুড়িকে নিয়ে চেন্নাই যেতে হবে। আরেকজনের ছেলে ছোট তাই যাওয়া হবে না। আবার আরেক টিচার গিন্নি এসে জানালেন, বর বারণ করছে সুধু মেয়েরা কি যাবে!!!
সত্যি নানান সমস্যা টপকে আমাদের ষোলোজনের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত শিকে ছিড়লো।মনের সঙ্গে মানানসই মন্দারমণি। তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেসে যাওয়া আর রেড বাসে রামনগর হয়ে আসা। জোগাড়যন্ত্র করে ফেললাম _ ভোরবেলা হাওড়া স্টেশনে একদল হাসি খুশি চেনা মুখ। কামরায় উঠে এতো বকবকানি শুরু হলো যে ট্রেনের গরম,হকারের চিৎকার কিছুকেই পরোয়া করছি না আমরা, আর যেন কেউ ওখানে নেই। রামনগর থেকে গাড়ি ভাড়া করে গোল্ডেন বীচ রিসর্ট… সমুদ্রমুখী আটটা ঘর, কোনরকমে ব্যাগ ফেলে সমুদ্রের কোলে ঝাঁপিয়ে পরা।
সংসারের পিছুটান নেই, মুক্ত জীবনকে জড়িয়ে ধরার জন্য হাঁটুর ব্যাথায় কাবু রীনাদির তীর ধরে দৌড়। সব সঙ্গীদের একই অবস্থা। লাজুক শর্মির কামিজ গুটিয়ে জলে ঝাঁপ,মিতার ফটোশুট…সে এক নিয়ম ভাঙার খেলা। রান্না নেই, একঘেয়ে কান্না নেই এক রাত দুই দিন অনন্ত ঢেউ, আছড়ে পরা জলের আহ্বান… মনটা অনেকদিন পরে আবার যেন জেগে উঠলো। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। সন্ধ্যাবেলায় গানের লড়াই, শশা চানাচুর দিয়ে মুড়ি,ছুরি দিয়ে টুকরো করে
রোল ভাগ খাওয়া। হঠাৎ চুল টেনে ছুট আর অনেক রাত অবধি হোটেল সংলগ্ন সাগরের সামনে কেউ নিশ্চুপ, কেউ বকবকে… দিদিমণিরা সব তখন বালিকা।
রাতে খাবার খাওয়ার মাছ, মাংস, ডিম আগে থেকে বলে রাখা পছন্দের নানান সুস্বাদু পদ, খাওয়ার ইচ্ছে দ্বিগুণ করে দেয়।
অনেক রাত অবধি চলে আড্ডা।
খুব ভোরে সাগরবেলায় ঝিনুক খোঁজার ছলে জীবনের সঙ্গে গান গেয়ে আবার পরিচয় হলো।তারপর জলখাবার খেয়ে অনেকক্ষণ সমুদ্রে স্নান, মনে হচ্ছে আরো একটা দিন বেড়ান্যে বাড়লে কি ভালো হতো!
তবু দুপুরে খাওয়ার পরে পাখির মতো দিন ফুরিয়ে যাওয়ার আগে কুলায় ফেরার তাড়া। কতো হাসাহাসি পাগলামি স্মৃতির আঁচলে বেঁধে নিলাম। হোটেল থেকে আগাম বুকিং করা গাড়িতে উঠে মনে পড়ল ঝিনুকগুলোতে তো নেওয়া হলো না! ছুট্টে নিতে গিয়ে আবার চোখ চলে গেলো সাগরের দিকে, কি বিশাল তার ব্যাপ্তি! চিকচিকে বালুতে নিবিড় আছড়ে পরা। সমুদ্র যেন নোঙরে আটকে থাকা আমাদের বলছে, ‘আমার বুকের মাঝে সুধা আছে চাও কি, হায় বুঝি তার খবর পেলে না’।