আমেরিকায় মন্ত্রিসভায় বাঙালির জায়গা হয়, কিন্তু দিল্লিতে হয় না , হোয়াইট হাউজে বাঙালি। তৃণমূল হাতিয়ার করল এই উদাহরন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় কোন বাঙালির পূর্ণমন্ত্রী না হওয়াটা বাঙালি বিদ্মেষের মধ্যেই পড়ে। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই ভাবেই বিজেপিকে খোঁচা দিলেন। ব্রাত্য বলেন, আমেরিকায় মন্ত্রিসভায় বাঙালির জায়গা হয়, কিন্তু দিল্লিতে হয় না। কেন্দ্রের মোদি সরকার এবং বিজেপি পদে পদে বাঙালিকে পদদলিত করে রাখতে সচেষ্ট হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। ব্রাত্য বসুর কথায়, বাংলা কে পরিচালনা করবে তা ঠিক করে দিতে চাইছে গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা বহিরাগতরা। এটা বাঙালিকে অমর্যাদা করার সামিল।
২০১৯ লোকসভা ভোটের পরে বিজেপিকে বাংলা বিরোধী আখ্যা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘বিজেপি বাংলা ও বাঙালি বিরোধী দল’, এই ইস্যুই যে আগামী বিধানসভা ভোটে প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হবে তৃণমূলের, তা ফের একবার পরিষ্কার হল শুক্রবার মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সাংবাদিক সম্মেলনে।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক থেকে ব্রাত্যর খোঁচা, আমেরিকায় মন্ত্রিসভায় বাঙালির জায়গা হয়, কিন্তু দিল্লিতে হয় না। গত সাত বছরে বাংলা থেকে একজন বিজেপি সাংসদকেও পূর্ণ মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়নি। ‘হাফ প্যান্ট’ মন্ত্রী করে রেখে দেওয়া হয়েছে বলে নাম না করে বাবুল সুপ্রিয়দের কটাক্ষ করেন ব্রাত্য বসু। তাঁর অভিযোগ, বহিরাগতদের দিয়ে বাংলাকে পরিচালনার ষড়যন্ত্র চলছে। অন্য রাজ্যের অবাঙালি মুখকে নেতা করে, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ করে বাংলায় আনা হচ্ছে। এরপরেই তাঁর কটাক্ষ, যাঁরা বাঙালি সংস্কৃতি জানেন না তাঁদের হাতে বাঙালি জাতিকে নিয়ন্ত্রিত হতে হবে এই দুর্দশা এখনও আসেনি। তাঁর অভিযোগ, বাংলা বিরোধিতা সেই ইংরেজ আমল থেকে প্রবহমান। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রথম থেকেই বাঙালিরা লড়েছেন, সেখানে কতজন গুজরাতি ছিলেন প্রশ্ন ছোড়েন ব্রাত্য। তিনি বলেন, বাংলা উদারতায় বিশ্বাসী, তাই এ রাজ্যে অবাঙালি মন্ত্রী প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত থেকে কেন কোনও বাঙালি মন্ত্রী হন না সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। ব্রাত্য প্রশ্ন করেন কেন আরএসএসের জন্মলগ্ন থেকে কোনও বাঙালি তার প্রধান হন না? বিজেপিকে বাংলা বিরোধী বলে দাগিয়ে ব্রাত্যর আরও বলেন, ইংরেজদের পাঁচবার মুচলেকা দেওয়া সাভারকরের নামে আন্দামানের সেলুলার জেলের নামকরণ হয়। কিন্তু সেখানেই বন্দি থেকে আমরণ লড়াই করে যাওয়া বাঙালি বিপ্লবী বারীণ ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত, ইন্দুভূষণ রায়দের নামে সেলের নাম করা হয় না।
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকের শুরু থেকে শেষ বিজেপিকে বাংলা বিরোধী তকমা দিয়ে আক্রমণ করে যান ব্রাত্য। নাম না করে অমিত শাহকে তাঁর কটাক্ষ, যাঁরা বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস জানেন না, তাঁরাই অন্য মূর্তির গলায় মালা দিয়ে বলবেন বিরসা মুণ্ডার গলায় মালা দিলাম, বলবেন রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়েছিল বোলপুরে। তিনি বলেন, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা বহিরাগত তাণ্ডবেরই পরম্পরা।