একশত পাচ বছর ধরে পোড়া শোল মাছ আর কাঁচা মাংসের প্রসাদ দিয়েই পুজিতা হন গোয়ালতোড়ের চক্রবর্তী বাড়ির মা কালী

পশ্চিম মেদিনীপুর:– পোড়া শোল মাছ, কাঁচা মাংস আর কারণসুধা এই তিনের প্রসাদ দিয়েই শক্তির আরাধনা করা হয় গোয়ালতোড়ের চক্রবর্তী বাড়িতে৷ পুর্বপুরুষের শুরু করা পুজোর এই নিয়ম এখনো বহাল রয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত গোয়ালতোড়ের কিয়ামাচা একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম। এই গ্রামেই বাস করতেন এক ব্রাহ্মণ দীননাথ চক্রবর্তী৷ দীননাথ ও গিরিবালা দেবীর তিন সন্তান। গোপাল, পশুপতি আর হরিপদ। দুই সন্তান সংসারে মন দিলেও বড়ো সন্তান গোপালের সংসারের দিকে মন ছিল না। কারন তিনি ছোটো বেলা থেকেই মা তারার পরম ভক্ত ছিলেন। সংসারের থেকে শ্মশান তাকে বেশী করে টানতো। সবে আট বছর বয়স। হঠাৎ করেই বাবা মারা যায়। তার দুই বছরের মাথায় মাও মারা যায়৷ ফলে পিছু টান হীন হয়ে পড়ে। সেই সময় গ্রামেরই শ্মশানের এক প্রান্তে তিনি শক্তির সাধনা করতে থাকেন। পারিবারিক সুত্রে জানা যায় তিনি প্রায় চৌদ্দ বছর শ্মশানে সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেন এবং এলাকায় সাধক গোপাল হিসেবে সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। পরে দাদাদের চাপে পড়ে সংসার ধর্ম পালন করেন।

বিজ্ঞাপন

কথিত আছে একদিন গোপাল চক্রবর্তী সাধনা করার সময় দৈববাণী পান যে মেদিনীপুরের আবাসগড়ের এক ঝুপড়ি তে তার অষ্টধাতুর মুর্তি রয়েছে৷ সেখান থেকে তা এনে প্রতিষ্ঠা করার। দৈববাণী পেয়েই পরদিন সাধক গোপাল তার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে সেই ঝুপড়ি থেকে মা কালীর অষ্টধাতুর সেই মুর্তি উদ্ধার করে নিয়ে আনেন বাড়িতে। পরে সেই মুর্তি শ্মশানে নিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন সাধক গোপাল। এদিকে মায়ের এই মুর্তির প্রতিষ্ঠার কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই দুরদুরান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন মায়ের দর্শন করতে। এমনই এক ভক্তের অর্থানুকূল্যে গড়ে উঠে মায়ের কংক্রিটের মন্দির। গোপাল সাধক শ্মশানের ওই মন্দিরে প্রায় ৬০ বৎসর সাধনা করেন৷ তার মৃত্যুর পর সেই পুজোর দেখভালের দায়িত্ব নেন তার ছেলে বিনয় চক্রবর্তী। যিনি এখনোই মায়ের সেবায় নিয়োজিত। বিনয় বাবু জানান, ” আজ থেকে একশত পাচ বছর আগে গোপাল সাধকের শুরু করা পুজো নামেই চক্রবর্তীদের, আদপে এখন তা গ্রামের পুজো হয়ে উঠেছে। পুজো উপলক্ষে গ্রাম ছেড়ে দুরদুরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন পুজো দিতে৷ অনেকেই মায়ের কাছে নিজের মনস্কামনা জানিয়ে মায়ের কাছে মানত করে যান৷ তবে আমাদের এই পুজোতে মা কে পোড়া শোল মাছ, কাচা মাংস আর কারন সুধা দিয়ে নৈবেদ্য দেওয়া হয়৷ যে সমস্ত ভক্তরা পুজো আসেন তাদের জন্য বলির মাংস আর খিচুড়ির প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়। তবে পুরো রান্না শ্মশানের মড়া পুড়ানো কাঠে রান্না করা হয়”৷ চক্রবর্তী পরিবারের আরেক সদস্য সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, “দাদুর শুরু করা পুজো প্রতিবছরই জাকজমক ভাবেই হয়ে আসছে৷ তবে করোনার কারনে এই ঐতিহ্যবাহী পুজো কিছুটা হলেও ম্লান। কারন ভক্ত সমাগম ঘটবে না এবার৷ যারা মায়ের কাছে মানত করেছিলেন তাদেরও নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। আর যারা উপস্থিত থাকবেন তাদের জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক। মন্দিরে ভক্তদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না৷ প্রতিদিন মন্দির চত্বর স্যানিটেশন করার ব্যাবস্থা থাকছে “।

বিজ্ঞাপন

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন দোহাল

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোহাল আজ বেজিংয়ে, ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন।…

4 days ago

ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন

আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন। ৩৯ টি দেশের…

4 days ago

তারা আর কোনো চাকরির পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সী’- NTA, আগামী বছর থেকে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা…

4 days ago

গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।…

4 days ago

‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি :সুকান্ত

রাজ্য সরকারের উদাসীনতার কারণে ন্যাশনাল ‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি বলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা…

4 days ago

বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে নিবন্ধিকৃত হতে হবে

সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া SEBI জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে…

4 days ago