ব্যতিক্রমী লড়াইকে সম্মান জানাতে এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমতার ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’


শনিবার,১৭/১০/২০২০
810

হাওড়া : দিন আনা দিন খাওয়া সংসারের গৃহবধূ বেলাদেবী স্বামীকে হারিয়ে অথৈজলে পড়েন।তবুও তিনি হার মানেননি।অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজের ছেলেমেয়েদের কাউকে বিশ্বভারতী থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করিয়েছেন আবার কাউকে স্থানীয় কলেজ থেকে স্নাতক করেছেন শ্যামপুরের গৃহবধূ বেলারাণি মন্ডল।আবার আমতার আরতি খাঁ অকালে স্বামীকে হারিয়ে প্রবল সমস্যায় পড়েছিলেন।কোনোরকমে নিজে টিউশন পড়িয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি একমাত্র ছেলেকে এমএসসি পড়াচ্ছেন।কিন্তু,দীর্ঘ লকডাউনে টিউশন বন্ধ থাকায় সংসারের আয়ও প্রায় বন্ধ।আবার বাগনানের খানপুর গ্রামের স্বপ্না সামন্ত রং কারখানায় হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে শয্যাশায়ী স্বামীর চিকিৎসা করাচ্ছেন,সাথে মেধাবী মেয়েকে ভূগোলে অনার্স নিয়ে পড়াচ্ছেন।সমাজের বুকে নীরবে এভাবেই ব্যতিক্রমী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন শত শত ঘরের দুর্গারা।দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে বাঙালি যখন মেতে উঠবে মৃন্ময়ী মা’য়ের আরাধনায় তখন এরকমই কিছু চিন্ময়ী মা’য়ের ব্যতিক্রমী লড়াইকে সম্মান জানাতে এগিয়ে এসেছে হাওড়া জেলার অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমতার ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’।সংগঠনটির পক্ষ থেকে রবিবার গ্রামীণ হাওড়ার এরকমই দশজন লড়াকু মা’য়ের লড়াইকে সম্মান জানানো হয়।সেই দশজন তালিকার মধ্যে যেমন ছিলেন

আমতা-১ ব্লকের মীরা গুছাইত,গাদিয়াড়ার লক্ষ্মী যাদব।গাদিয়াড়ার লক্ষ্মী যাদব নিজে খুব একটা পড়াশোনা না করলেও নিজের এলচিলতে ঘরে ঠাঁই দিয়েছেন তিনজন পড়ুয়াকে।অন্যলোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেও অভাবের সংসারে তাদের পড়াশোনা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন।আবার বাগনানের আগুন্সী গ্রামের সন্ধ্যা দেবী চানাচুর বিক্রির কাজ করে কোনোরকমে শাশুড়ি ও মেয়েকে নিয়ে সংসার চালান।এরকমই লড়াকু মা’য়েদের সম্মান জানাল আমতার এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।রবিবার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির সদস্য-সদস্যারা সংশ্লিষ্ট মহিলাদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সম্মান জানান।পাশাপাশি,রিঙ্কু,সন্ধ্যা,মীরা দেবীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সংসারের বিভিন্ন জিনিসপত্র।সেই তালিকায় যেমন ছিল নতুন কাপড়,স্টেশনারি সামগ্রী,মুদিখানা সামগ্রী তেমনই ছিল ফুলের গাছ,বালতি,আয়না,চিরুনি,মিষ্টি,মেডিকেল কিটস সহ প্রায় ৩৫ রকমের জিনিস।সংগঠনটির কর্তা পৃথ্বীশরাজ কুন্তী বলেন,”প্রতিবছরই দুর্গোৎসবের আনন্দকে সমাজের আর পাঁচটা মানুষের মাঝে আমরা ভাগ করে নিতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করি।তবে এহেন উদ্যোগ এবারেই প্রথম।

এবার আমরা প্রায় দু-আড়াই মাস ধরে নির্বাচনের কাজ চালিয়েছি।তা থেকে নির্বাচিত দশজন লড়াকু মা’কে আমরা সম্মান জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”তিনি আরও বলেন,”আমাদের সংগঠন মূলত শিক্ষায় স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে গ্রামীণ হাওড়ার লড়াকু পড়ুয়াদের নিয়ে কাজ করে।তাই সংশ্লিষ্ট মহিলাদের সন্তানদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে যেকোনো রকম সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা তা সবসময় করতে প্রস্তুত।এই সম্মানে আপ্লুত মায়েরাও।আবেগঘন কন্ঠে বাগনানের স্বপ্না সামন্ত জানান,”কখনো ভাবিনি এভাবে বাড়িতে এসে কেউ সম্মান জানাবে।বাড়িতে অসুস্থ স্বামী।পেটের দায়ে রং কারখানায় কাজে যাই।যেটুকু পাই তা দিয়েই কোনোরকমে সংসার চলে।তবে যত কষ্টই হোক মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাব।”

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট