করোনা আবহে জৌলুস ছাড়াই হবে আশকোলা গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন মনসা পুজো, বন্ধ থাকছে ‘ঝাঁপান উৎসব’

ঝাড়গ্রাম:– ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর ২নং ব্লকের আশকোলা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মনসা পুজা। এই পুজা উপলক্ষ্যে আজও পুরোনো রীতি মেনেই এই এলাকায় পুজিতা হয়ে আসছেন মনসা বুড়ি। প্রায় ১০০বছর ও তার আগে থেকে এই পুজোর শুভারম্ভ হয় আশকোলা গ্রামে। আশকোলা গ্রামবাসীবৃন্দের পরিচালনায় হয় এই পুজো। এই গ্রামে পুজো ছাড়াও লোকজনের সমাগম হয় ‘ঝাঁপান’ দেখতে। ঝাঁপান এর অর্থ সাপের খেলা। এই ঝাঁপান দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। ঘট উত্তোলনের পর ঘটের সামনে সাপের খেলা দেখিয়ে দেখিয়া সারা গ্রাম ঘুরে মন্ডপে পৌঁছান৷ সাপের খেলা দেখাতে পয়সার বিনিময়ে বাইরে থেকে লোক আনা হয়৷ সাপের খেলা দেখাতে প্রায় ১০-১৫ টি বিষধর সাপ নিয়ে আসেন ওই ব্যক্তি৷ মুখে সাপ ঢুকিয়ে, ৩/৪টে সাপ একসাথে নিয়ে, সাপ গলায় জড়িয়ে হাত দিয়ে টানা এক চাকা লাগানো এক গাড়ির উপর এই সব খেলা দেখান। এই খেলা দেখতেই মেতে উঠে গ্রামের আট থেকে আশি সকলেই। এই প্রসঙ্গে গ্রামের প্রবীন বাসিন্দা বল্লভ বাগ, শসাঙ্ক পাল ও শক্তিপদ পাল’রা বলেন,”এটি আমাদের একটি প্রাচীন রীতি। সাপের খেলা দেখানোর পরই পুজিতা হন মনসা বুড়ি।” বৈকুণ্ঠ দাস নামে একজন ব্যাক্তির হাত ধরেই এই পূজার সুত্রপাত হয় এই গ্রামে।

ওই ব্যক্তির স্বপ্নাদেশ থেকেই এই পুজো শুরু হয়। ২টি ঘট বসানো হয় এই পুজোয়। কেবলমাত্র আশকোলা গ্রামের পুজোতেই এই রীতি লক্ষ্য করা যায়। কারন জানতে চাইলে বৈকুন্ঠ দাসের বংশধর দেবাশীস দাস বলেন, “বৈকুণ্ঠ দাস যখন আশকোলা গ্রামে পূজো শুরু করেন তারপরে একবছর গ্রামের নদী থেকে ঘট তুলে আনার সময় হঠাৎ ভেঙে গিয়েছিল ঘটটি। তখনকার নিয়ম অনুযায়ী সবাই পরামর্শ নিতে যেত চোরচিতা গ্রামের এক মহারাজের কাছে। এবং সেই মহারাজ জানান আপনাদের পুজোতে আপনারা ২টি ঘট তুলবেন ঘট পূজোস্থানে পৌঁছে যাওয়ার একটা মনসা মায়ের ঘট ও আর একটা শিতলা মায়ের ঘট হিসেবে প্রতিস্থাপন করবেন। এই গ্রামের পূজোতে কোনো পুরোহিত এর প্রয়োজন হয় না যাঁরা এই পুজোটি শুরু করেছিলেন তাঁদের পরিবারের সদস্যের হাতেই পুজিতা হন মনসা বুড়ি।” এই পুজোর সঙ্গে মা লক্ষী ও সরস্বতিও পুজো হন। কারন যানতে চাইলে তিনি বলেন, পুজোর ঘট আনতে যাওয়ার আগের দিন রাতে গিয়ে যেই জায়গায় ঘট উঠানো হবে সেই জায়গা টা চিহ্নিত করে রেখে আসতে হয়। একবছর সেই ঘাট চিহ্নিত করতে যাওয়া গ্রামবাসীর মধ্যে কেউ একজন আমিশ খেয়ে ছিলেন।

তারপর থেকেই সেই ভূল স্বরূপ আজও মনসা মায়ের সঙ্গে লক্ষী ও সরস্বতি কেও পুজো করতে হয়। এই পুজো দু’দিন ধরে হয় এবং দ্বিতীয় দিনের পুজোতে সংস্কৃত নিয়ম অনুযায়ী চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। এছাড়াও গ্রামের স্থায়ী মন্ডপে পুজো করার পর প্যান্ডেলে পুজিতা হন মনসা বুড়ি। গ্রামবাসী অম্বুজ বাগ, বুবুল বাগ ও শিবশঙ্কর দেহুরী’রা বলেন,”গ্রামের ছোটো বড় সবাই এই পুজোতে মেতে ওঠে। সাপের খেলা আর পুজো ছাড়াও সন্ধ্যাকালীন বিভিন্ন যাত্রা ও অনুষ্ঠান হয়। পুজোর সময় বাদ দিয়ে এই সময়ই আমাদের গ্রামের সবার বাড়িতে আত্মীয় সজনরা আসেন।”

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী

আজ, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, আমরা উদযাপন করছি স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি কেবল তাঁর…

2 months ago

কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম উপন্যাস “অতল জলে জলাঞ্জলি” প্রকাশিত।

১০ জানুয়ারি ২০২৫ এর বই মেলা উপলক্ষে বাজারে এসেছে কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম…

2 months ago

উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া আপডেট

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের আবহাওয়া রইবে বিশেষভাবে পরিবর্তনশীল। পার্বত্য অঞ্চল ও…

2 months ago

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের উপর কড়া নির্দেশ জারি

রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশিকা জারি করল…

2 months ago

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ আজ, অপেক্ষা ভোটের দিন ঘোষণার

জাতীয় নির্বাচন কমিশন আজ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করবে। দুপুর ২টায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের…

2 months ago

নেপাল-তিব্বত সীমান্তে তীব্র ভূমিকম্পে ৫৩ জনের মৃত্যু, আহত ৬২ জন

নেপাল-তিব্বত সীমান্তে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত ৫৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আরও ৬২…

2 months ago