ফাইট ক্ষিদদা ফাইট ! !
অনিন্দিতা মাইতি নন্দী : এটা কি হচ্ছে ক্ষিদ দা!!! কাম অন এন্ড ফাইট ক্ষিদ দা। সারা বাঙালী তথা ভারতবাসী আজ বড্ড অস্থির, ছটছট করছে তোমার জন্য ‘ক্ষিদ দা’। তুমি তো ‘কোনি’ কে শিখিয়েছিলে ফাইট করতে,- আজ তবে কেন তুমি অসহায় ভাবে হাসপাতালে? হাজার হাজার ‘কোনি’ এখনো তোমার অপেক্ষায়- এখনো যে বহুকিছু বাকী।
ভবানন্দের খেলা সাঙ্গ করে, মন্দার বোসের গ্লোব পরিক্রমাকে চিরতরে ঘুচিয়ে দিয়ে ঋজু দেহের ‘মগজাস্ত্র’ ব্যবহার করা বলিষ্ঠ চিরসবুজ তরুণ তুমি, তোমার কি সাজে ‘ বেলভিউ’ এর ঘেরাটোপে আটকে থাকা!! এই কি আমাদের সেই ফেলুদা যার ‘মগজাস্ত্র’ ও রিভলবার একসাথে ঘায়েল করে ‘মগনলাল মেঘরাজ’ কে তার তো এক ভাইরাসের কাছে হার মানা অসম্ভব!! ওঠো-জাগো-ফেলুদা ফাইট এগেন ‘ক্ষিদ দা’–, আমাদের জন্যে জাগো।
তুমি কি সেই ‘দেবদাস’ ?- পারুর কথা রাখার জন্য পেটের প্রচন্ড ব্যথা নিয়েও সারারাত গরুর গাড়ী চেপে রওনা দিয়েছিলে, -মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানিয়েও শুধু পারুর কথা রাখার জন্যে পৌঁছে যাও গন্তব্যস্থলে, তবে আমাদের কথা রাখার জন্যও,– জেগে ওঠো ‘দেবদাস’–, তোমার সাথে তোমার সব পার্বতীরা আজ রাতজাগা।
আজ তুমি লাইভ-সাপোর্ট সিস্টেমে!!! তুমি না সেই ‘উদয়ন পণ্ডিত’ যার পান্ডিত্যে, বুদ্ধির প্রখরতার পরম অত্যাচারী হীরকরাজাও মাটিতে পতিত হয়- দড়ি ধরে টান মারতে শিখিয়েছ তুমি ‘উদয়ন পন্ডিত’রূপে। আজ লাইভ-সাপোর্ট সিস্টেমের দড়িটা কে টান মেরে বেরিয়ে এসো ‘উদয়ন পন্ডিত’।
আচ্ছা ফেলুদা- সারা ভারতবাসীর টেলিপ্যাথির জোর কি তোমাকে ‘বেলভিউ’ তে থাকতে দেবে? জেগে ওঠো, তন্দ্রাচ্ছন্ন তোমায় সাজেনা। জেগে ওঠে একবার বলো “কি বিষের ছোবল দিবি কালনাগিনী তুই, আমারো কি বিষ আছে দেখবে যদি ছুঁই-হাতে হাতে প্রমান পাবি কেমন করে হয়,–বিষে বিষে বিষক্ষয়।”
মনে পড়ে ফেলুদা – ‘বেলভিউ’ তে ভর্তি থাকাকালীন একটানা দশদিন লিখে ‘সত্যজিত রায়’ শেষ করেছিলেন “এবার কান্ড কেদারনাথে”। তুমি তো ‘বেলভিউ’ তে চশমা, কলম ও খাতা নিয়ে লিখতে চেয়েছিলে- লেখাটা যে অসম্পূর্ণ হয়ে রইল,- শেষ করতে হবে তোমাকে ‘ফেলুদা’।
তুমি না সেই বিখ্যাত ‘ময়ুরবাহন’ যার তরবারির কোপে সব বাঁধন কেটে যায়- ঘোড়া ছুটিয়ে ছুটে চল লক্ষ্যভেদের পথে, আজ ঘোড়া যে দাঁড়িয়ে আছে তোমার নির্দেশের অপেক্ষায়, জেগে ওঠো ময়ুরবাহন, ধরো তরবারি।
তুমি না ‘অগ্রদানী’র ‘পূর্ণ চক্রবর্তী’, সমস্ত যন্ত্রণা বুকে চেপেও পূর্ণ কর জমিদারের সাধ। ‘অপু’ তোমার সেই নিষ্পাপ চাউনির আশায় এখনো যে সবাই বিহ্বল, উদ্বেল। ‘সাত পাকে বাঁধা’র ‘সুখেন্দু দত্ত’ ফিরে এসো,– কিংবা ‘নরেন’ রূপী ‘দত্তা’র প্রেমিকপ্রবর। আমরা যে তোমার অপেক্ষায়- ‘মন্টু’ – প্রতীক্ষায় আছি আবার কবে যে বলবে ‘কে তুমি নন্দিনী, আগে তো দেখিনি’ কিংবা মুগ্ধ চোখের বিহ্বলতায় ডাক দেবে ‘হয়তো তোমারি জন্য, হয়েছি প্রেমেতে বন্য’।
কখন জাগবে তুমি ‘মন্টু’? বেলভিউ এর ঘেরাটোপে তো তোমায় মানায় না। তোমার জীবনরেখা শুধু মনিটরে ফোটা একটি গ্রাফ বা লেখচিত্রের উপর নির্ভর করতে পারেনা। মনিটর তোমার কথা শুনবে- ওঠো, জাগো- সামনের দাঁড়িয়ে থাকা সাদা পোশাকের সিস্টার-ডক্টরদের শুনিয়ে দাও ‘জীবনে কি পাব না, ভুলেছি সে ভাবনা’।
‘ডঃ অশোক গুপ্ত’ যে আজও তোমার প্রতীক্ষায়—‘চারুলতা’র ‘অমল’ যে আজও হাতছানি দেয় তোমাকে-প্রবল মহামারি কে উপেক্ষা করেও তুমি শুটিং করে গেছ,-সামান্য ভাইরাস কি তোমায় ঘায়েল করতে পারে? চিরতারুন্যের প্রতীক তুমি রঙিন পাঞ্জাবিতে (বেশীবার লাল) সদাহাস্যময় ভরাট কন্ঠস্বর নিয়ে বারবার এসেছো আমাদের মাঝে ‘প্রেমের কবিতা’ নিয়ে কখনো বা ‘ছোট বড়’ নিয়ে, ধরা দাও উদান্ত কণ্ঠে ‘শেষ বসন্ত’ নিয়ে।
কিন্ত তুমি চিরযুবা,– কখনোই ‘শেষ বসন্ত’ নয়। ‘ক্ষিদ দা’ ফাইট এগেন এন্ড এগেন, তোমার ললিতা যে অপেক্ষায়,– উঠে এসো, জাগো ‘শেখর’ । উঠে পড়ো, ‘মাস্টারমশাই’- একবার বলো ঐ সংলাপ টাতো ভুল ছিল- ‘মাস্টারমশাই আপনি কিছুই দেখেন নি।’ আসলে বলো ‘আমি তো ‘বেলভিউ’ থেকে সব দেখছিলাম-তোমাদের টেলিপ্যাথির জোরেই মৃত্যুকে হার মানিয়ে ফিরে এসেছি তোমাদের কাছে।’
*********