ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বসবাস কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বনবিভাগ প্রদত্ত জায়গার উপর রোহিঙ্গাদের বাসস্থান নির্মাণ পূর্বক বসবাসের দিক নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা প্রশাসনের অগোচরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে গেছে। যেসব রোহিঙ্গারা উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে তাদের একাংশ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। বিবাদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত দাঙ্গা হাঙ্গামা, অপহরণ, খুন, মুক্তিপণ আদায়, অগ্নিকান্ড প্রভৃতি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পের সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের তালিকা করে তাদের নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে স্থানান্তর জরুরী। যতদিন না পর্যন্ত এদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব না হয়। এ প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত মতামত জানতে চাওয়া হলে উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ ও আধিপত্যের প্রতিযোগিতা, রক্তক্ষরণ, বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য একসময় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
সময় থাকতে এসব রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এ সংকটময় সমস্যা একমাত্র সমাধান দিতে পারে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীন ও ভারত। বিশেষত এ দুই রাষ্ট্র বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম দেশ। তাই এদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব। তা না করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রকৃত সমাধান হতে পারে না। যেখানে শুধুমাত্র লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। বাদবাকি রোহিঙ্গাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে এটাও সাধারণ মানুষের প্রশ্ন। ক্যাম্প–৪ হেড মাঝি জকরিয়া জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, নৈরাজ্যকর পরিবেশ, সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভাবিয়ে তুলেছে। তারা বলছে প্রাণ বাঁচানোর জন্য মিয়ানমার থেকে এদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছি। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখানে যদি অপমৃত্যুর মত ঘটনা ঘটে তা হলে আবার মিয়ানমারে ফিরে যাওয়াটাই হবে প্রকৃত সিদ্ধান্ত। রোহিঙ্গাদের একাংশ সরকারের কাছে দাবী করছেন তাদেরকে ভাসানচরে স্থানান্তর না করে পূর্ণ নাগরিকত্ব মর্যাদা দিয়ে যেন মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা জালাল আহমদ বলেন, তারা ২৯ বছর ধরে ক্যাম্পে বসবাস করছে। একদিনের জন্যও সহিংস ঘটনা ক্যাম্পে ঘটেনি। তাই তারা স্থানীয়দের মত বাঁচতে চান। নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে যোগ দিয়ে প্রশাসনের কাছে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ হতে চান না। তিনি বলেন, নতুন রোহিঙ্গারা তাদেরকে দলে যোগ দেওয়ার জন্য অনেকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ক্যাম্পের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের পরামর্শে তাদের আমন্ত্রণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। দাবী করা হয়েছে সন্ত্রাসীদের রোহিঙ্গাদের আইনের আওতায় এনে ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য। কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ মো: খলিলুর রহমান জানান, ক্যাম্পে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের তালিকা করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা বা ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়টি তাদের মতো হয়েছে।বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।