ব্যারাকপুর: ৪ অক্টোবর, ভরসন্ধ্যায় টিটাগড়ে খুন হন বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা। খুন হওয়ার পর রাত থেকেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ট্যুইট, ভিডিও পোস্ট করেছেন। খুনের প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব এবং ডিজিকে রাজভবনে তলব করেন। সোমবার বারাকপুর বনধ চলে। ঘটনাস্থলে ছুটে যান বিজেপির সর্বস্তরে নেতা-কর্মীরা। টিটাগড় হুলুস্থুল হয়।
বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে, কে এই মণীশ শুক্লা? যাঁর জন্য বাবুল সুপ্রিয় থেকে দিলীপ ঘোষ, স্বপন দাশগুপ্ত থেকে বি এল সন্তোষ, আই টি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিত মালব্য থেকে কৈলাস বিজয়বর্গীয় সহ বিজেপির একাধিক প্রথম সারির নেতা ট্যুইট করে বা ভিডিও পোস্ট করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। রাজ্য প্রশাসনকে তলব করেছেন জগদীপ ধনখড়!
ফিরে যেতে হবে প্রায় একযুগ আগে। তখন রাজ্য ক্ষমতায় বামফ্রন্ট। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোট। রাজ্য রাজনীতি সরগরম। দোর্দান্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা তড়িৎবরণ তোপদার কিছুটা কোনঠাসা হলেও দাপট পুরোপুরি কমেনি। সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের আন্দোলনের ঝাঁজে ফিকে হয়ে উঠেছে লাল। তবুও জমি আঁকড়ে থাকার আপ্রাণ লড়াই।বারাকপুর তখনও কমিশনারেট হয়নি। তখন বারাকপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রভীণ কুমার ত্রিপাঠী, এসডিপিও সুমনজিৎ রায়। লোকসভা ভোটের দিন পুলিশেরর কাছে খবর পৌঁছায়, টিটাগড়ে কিছু বুথের দিকে যাচ্ছেন মণীশ শুক্লা। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অফিসাররা কনভয় ছোটান। পুলিশ আসছে খবর পেয়েই পালিয়ে যান মনীশ। কেন বুথ ছেড়ে পালিয়েছিলেন সেই ভোটে সিপিএম প্রার্থী তড়িৎ তোপদারের হয়ে ‘কাজ’ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মণীশ?
তখন গোটা বারাকপুর জানে সিপিএম সাংসদ তড়িৎ তোপদারের ইলেকশন মেশিনারির অন্যতম স্তম্ভ টিটাগড়ের মণীশ শুক্লা। বারাকপুরের রাজনৈতিক মহলে ২০০৫-০৬ সাল থেকেই মণীশ শুক্লার একমাত্র পরিচয়, তিনি তড়িৎ তোপদারের ডানহাত সঙ্কোচ ঘোষ দস্তিদারের প্রধান লোক। দু’বছরের মধ্যেই মণীশ সিপিএমের অন্দরে আস্থার পাত্র হয়ে ওঠেন। কিন্তু ২০০৯ লোকসভা ভোটের সময় প্রশাসনের ওপর সিপিএমের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই চলে গিয়েছে।
ভোটের কিছু দিন আগে নিজের গোপন ডেরায় পুলিশ রেইডের পরই মণীশ বুঝে গেলেন, আর শেল্টার দিতে পারবে না সিপিএম। সিপিএম তখন নামেই রাজ্যের শাসক, স্থানীয় ক্ষমতা তৃণমূলের হাতে চলে যেতে শুরু করেছে। ২০০৯ লোকসভা ভোটের দিন মণীশ সরকারিভাবে সিপিএমের সঙ্গেই ছিলেন, কিন্তু ভোটে টিটাগড়ের ফলই বলে দিল, তিনি কী ভূমিকা পালন করেছিলেন সেদিন। হেরে গেলেন তড়িৎ তোপদার।
লোকসভা ভোটের পর অর্জুন সিংহের হাত ধরে তৃণমূলে প্রবেশ করলেন মণীশ শুক্লা। তারপর আবার অর্জুন সিংহেরই হাত ধরে ২০১৯ সালের পর বিজেপিতে।
অর্জুন সিংয়ের হাত ধরে দশ বছরের মধ্যে বারাকপুরের রাজনীতিতে স্ট্রং-ম্যান হয়ে উঠলেন মণীশ শুক্লা।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১০-১২ বছরে অন্তত ১৬-১৮ টা মামলা হয়েছে মণীশ শুক্লার বিরুদ্ধে। খুন, খুনের চেষ্টা, অস্ত্র আইন সহ একাধিক মামলা ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয়েছিল ২০০৪ সালে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে মূলত অভিযোগ উঠতে শুরু করে ২০০৯-১০ সাল থেকে। সেই সময় থেকেই টিটাগড়, জগদল সহ বারাকপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় মণীশ শুক্লার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠতে শুরু করে। মণীশ শুক্লা খুনের তদন্তে সেই পুরনো সব মামলাই আবার উঠে আসছে পুলিশের নজরে।