কৃষক বিলের প্রতিবাদে সোচ্চার দেশ


মঙ্গলবার,২২/০৯/২০২০
1488

কৃষক বিলের প্রতিবাদে সোচ্চার গোটা দেশ। বিজেপি বিরোধী সব রাজনৈতিক দলই এই বিলের প্রতিবাদে পথে নামছে। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী এই বিলের প্রতিবাদ করেছিলেন। আর তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন। স্বাধীনতার পর যারা দেশ পরিচালনা করেছে দীর্ঘ বছর ধরে তারা কৃষকদের উন্নয়নের কোন ভূমিকা পালন করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর তীব্র শ্লেষের মুখে যখন কংগ্রেস ঠিক তখনই এক ঝাঁক বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী সব রাজনৈতিক দল এক সুরে কথা বলতে শুরু করে দেয়। আর এই পরিপ্রেক্ষিতে এখন যথেষ্টই চাপের মুখে বিজেপি।

এই ইস্যুতে আজ মঙ্গলবার থেকেই পথে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা সংগঠন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে। পাশাপাশি টানা আন্দোলন চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে কেন্দ্রের এই কৃষক বিলের প্রতিবাদে সোচ্চার হন মমতা। তিনি বলেন, কৃষক ও খেত মজুরদের সমস্ত অধিকার কেড়ে ভুঁইফোড় ও জোতদারদের হাতে জমি তুলে দেওয়া হচ্ছে। রবিবার রাজ্যসভায় কৃষক বিল পাশ করাকে ইতিহাসের ‘ব্ল্যাক সানডে’ বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে থেকে কৃষি বিল পাশ নিয়ে মমতা বলেন, কোনও নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরে বিল পাশ করিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। রাজ্য সরকারগুলির সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। হিটলারি শাসনের মতো দেশ চালাচ্ছে বিজেপি। রাজ্য তথা দেশবাসীকে এই বিলের বিরোধিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন, মঙ্গলবার থেকে রাজ্যে শুরু হচ্ছে আন্দোলন। তাঁর ঘোষণা, মোদী সরকারের কৃষি সংস্কারের দুই বিল এবং বেসরকারি সংস্থায় কর্মী নিয়োগ ও ছাঁটাই সংক্রান্ত তিনটি বিলের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস কলকাতার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধরনা দেবে। এরপর যথাক্রমে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন এবং কৃষক সংগঠন পথে নামবে। কৃষি বিল নিয়ে এদিন মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে মমতা বলেন, এই ঘটনা দেশকে আরও একটা মন্বন্তরের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দলের দুই সাংসদ সহ বিরোধী দলের এক ঝাঁক সাংসদদের সাসপেন্ড করা নিয়ে সকালেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মমতা।মমতার ট্যুইটে মাথা নত না করার হুঁশিয়ারি ছিল। মমতা বলেন, কৃষক স্বার্থ রক্ষায় লড়াই করা আট সাংসদের সাসপেনশনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। এই ঘটনা সরকারের স্বৈরাচারী মানসিকতাকে তুলে ধরেছে। কারা গণতান্ত্রিক নিয়ম নীতি কে সম্মান করে না আমরা মাথা নত করব না এবং সংসদ রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করব। রাজ্যসভায় আট বিরোধী সাংসদকে এক সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ডের ঘটনায় টুইটে এ ভাষাতেই হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

উল্লেখ্য, কৃষি বিল পেশের সময় সংসদে হট্টগোলের ঘটনায় সোমবার সকালে ৮ সাংসদকে সাসপেন্ড করার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করে বিজেপি। ধ্বনি ভোটে সেই প্রস্তাব পাশ হয়ে যায়। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, দোলা সেন, আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিং, কংগ্রেসের রাজু সাতাব, সঈদ নাজির হুসেন, রিপুন বোরা, সিপিএমের কেকে রাগেশ ও ইলামারান করিমকে সাসপেন্ড করেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু।

সোমবারই কলকাতায় কৃষি বিল নিয়ে পথে নামে কংগ্রেস, সরব হন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী সহ রাজ্যে বিজেপি বিরোধী সব দলের নেতারাই। কৃষি বিলের প্রতিবাদে গর্জে উঠল যুব কংগ্রেস। সোমবার কয়েকশো কংগ্রেস কর্মী রাজভবনের গেটের বাইরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে কেন্দ্রের এই কৃষি বিলের প্রতিবাদে। এই বিল কৃষক বিরোধী বিল বলে মনে করছে কংগ্রেস। এদিন যুব কংগ্রেসের এই বিক্ষোভকে ঘিরে ব্যাপক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজভবন চত্বর। বিক্ষোভকারীদের হটাতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক ধস্তাধস্তি শুরু হয়। কেন্দ্রের এই নয়া কৃষি বিল কৃষকদের আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেবে বলে এদিন বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন।

কেন্দ্রের এই কৃষি বিলের প্রতিবাদে সোচ্চার হলেন বাম পরিষদীয় দল নেতা সুজন চক্রবর্তীও। তিনি বলেন বিজেপি সরকার গায়ের জোরে এই বিল পাশ করিয়েছে। বিরোধীরা প্রতিবাদ করায় বিরোধী সাংসদদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। এর নিন্দার কোন ভাষা হয় না। অবশ্য এই বিলের সমর্থনে এবং বিরোধী সাংসদদের সাসপেন্ড হওয়ার পক্ষেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা। এদিন তিনি বলেন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা যথাযথ।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ইস্যুতে বিরোধীরা যথেষ্টই জমি তৈরি করে নিতে পারবে। কেন্দ্রের কৃষি বিল এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সংসদে হট্টগোলের ঘটনায় বিরোধী সাংসদদের সাসপেন্ড করার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীরা একজোট হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল। যা বিজেপির পক্ষে শুভ নয়। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারে কৃষি বিল হাতিয়ার হতে পারে বিরোধীদের কাছে। রাজ্যের বিজেপি বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম, কংগ্রেস একজোটে এই বিল নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে গেলে তার মোকাবিলা করা বিজেপি নেতাদের কাছে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। করোনা আবহের মধ্যেই এই কৃষি বিল দেশের রাজনীতিতে যে নতুন করে সরগরম করার অস্ত্র নিয়ে এলো তা বলা যেতেই পারে।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট