|| আগে ‘সাইন্স’ পরে ঈশ্বর ||


রবিবার,২০/০৯/২০২০
4256

|| আগে ‘সাইন্স’ পরে ঈশ্বর ||

অনিন্দিতা মাইতি নন্দী: এই বাংলায় আমি জন্মেছি, বড় হয়েছি-তাই বাংলার গৌরবময় সংস্কৃতির বুনিয়াদ যারা গড়ে দিয়েছিলেন তাদেরকে জানার এক অদম্য কৌতূহল আমার। সেই কৌতূহলের টানেই বিজ্ঞানের ছাত্রী হওয়া সত্বেও সাহিত্যে রসের রস আস্বাদনে আমার সবসময় গভীর প্রচেষ্টা। তাই নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়েও ‘সাহিত্য সম্রাট’ কে আপন আলোয় জানার একটা অদ্ভুত আকুলতা আমার। সেই জানবার আকুলতায় সাহিত্য সম্রাটের উপন্যাসগুলিতে ডুব দিই, ভাষার রূপসৃষ্টিতে, বর্ণনার ঘনঘটায়, প্রাচীন ইতিহাসকে কোথাও সুনিপুন ভাবে চিত্রণে, আবার স্বদেশে প্রীতির টানে ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনিতে আপ্লুত হই।

কোনো কোনো উপন্যাসে নর-নারীর জটিল মনস্তত্ব, নিয়মের বেড়াজাল ভাঙা, ছক-ভাঙা সম্পর্ক পরিণতিতে বিস্মিত হই বারবার। সেই বিস্ময়ের রেশ যে সাহিত্য সম্রাটের সাহিত্য চেতনা থেকে তার বিজ্ঞান মনস্কতার নিখাদ তাত্বিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রবন্ধগুলির দ্বার অব্দি পৌঁছাবে তা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল।উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনার পাশাপাশি বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ লেখেন সাহিত্য সম্রাট। তরুণ বঙ্কিমচন্দ্র বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন বললে কম বলা হয়, তিনি সত্যিকারের বিজ্ঞান অনুসন্ধিৎসু ছিলেন। তিনি ”বিজ্ঞান কৌতুক”,”আশ্চর্য সৌরৎপাত” নামক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লেখেন।

বিজ্ঞানের ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু ছাত্রদের কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের ”The Study of Hindu Philosophy” প্রবন্ধটি নিঃসন্দেহে একটি দিক নির্দেশক। এই প্রবন্ধটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ বঙ্কিমচন্দ্র এখানে খুবই সুস্পষ্টভাবে বলেন-

ভারতের বিভিন্ন দার্শনিক চিন্তাধারা ঠিকমতো বুঝতে গেলে আধুনিক বিজ্ঞানকে জানতে হবে। তিনি আমাদের দেশের পদ্বতিগত গলদকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন।ভারতবর্ষ ও ইউরোপের বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসকে নিয়ে তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে সাবলীল সরল ও অত্যন্ত কুট প্ৰশ্ন তিনি জনমানসে তুলে ধরেছিলেন- তাঁর মতানুযায়ী, বিজ্ঞানের নতুন তত্ব আবিষ্কারের জন্য চাই দুটি জিনিস-

প্রথমতঃ হাতে কলমে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সত্যকে যাচাই করার তাগিদ ও ক্ষমতা। দ্বিতীয়তঃ বিজ্ঞানীদের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন সহযোগ; অর্থাৎ এক বিজ্ঞানীর আবিষ্কারের সূত্র সংকেত থেকে অন্য বৈজ্ঞানিক নতুন নতুন পথ বাতলে আবিষ্কারের রাস্তা তৈরী করে দেবেন। অর্থাৎ এক কথায় বিজ্ঞানের রিলে-রেস।

আমি সাহিত্য সম্রাটের বিজ্ঞানের প্রতি যে নিখাদ ভালোবাসা, যে অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টি ওই ইংরেজী প্রবন্ধ, ”The Study of Hindu Philosophy” –এর ছত্রে ছত্রে তাতে মুগ্ধ ও অবিভূত ও বিস্মিত হই। একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিকের কি অসাধারণ বৈজ্ঞানিক প্রজ্ঞা বিজড়িত অন্তর্দৃষ্টি।মনে হয় ইংরেজিতে লিখেছিলেন বলেই হয়তো সাহিত্যমনস্ক বাঙালির নজরে কোনোভাবে এড়িয়ে গিয়েছিল তা নইলে এই লেখাটিকে নিয়ে যথেষ্ট হৈ চৈ পড়ে যাওয়া উচিৎ ছিল ওই সময়।

বঙ্কিমচন্দ্রের আক্ষেপ ছিল ভারতের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নিয়ে, সেই আক্ষেপ অত্যন্ত সঠিক বলে আমার সাধারণ বোধ বলে। তিনি যথেষ্ট আক্ষেপ করে বলেন- ‘অভিকর্ষ’ কিংবা ‘মাধ্যাকর্ষণ শক্তি’ -এই আবিষ্কারটি ভারতেই হতে পারতো যদি ভারতের বিজ্ঞানী দার্শনিকেরা বিজ্ঞানের পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন থাকতেন। কিন্তু তার পরিবর্তে কি হল ? তিনি বলেন- ”ভারতবর্ষে আর্যভট্টের (৪৭৬-৫৫০) অতি উল্লেখযোগ্য ঘোষণা থেকে ভবিষ্যতে নূতন কোনো বিকাশ যাতে না ঘটে সেটাই সুনিশ্চিত করে তোলা হলো।”

কি অসম্ভব মারাত্বক অভিযোগ তুললেন বঙ্কিমচন্দ্র। সত্যি তো একজন বৈজ্ঞানিকের প্রজ্ঞা প্রজ্জ্বলিত জ্বালানো প্রদীপ থেকে অন্য বিজ্ঞানীদের প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ভারতে।বিজ্ঞানের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্রের আগ্রহ যে সত্যিকারের ছিল, তা তাঁর কর্মচারী কালীনাথ দত্তের স্মৃতিচারণ থেকে জানতে পাই-

১৮৬৮ সালে, ছাব্বিশ বছর বয়সে, বঙ্কিমচন্দ্র চাকরি উদ্দেশ্যে থাকতেন বারুইপুরে- সেখানে নানান ধরণের বই পড়া ছাড়াও হাতে কলমে বিজ্ঞান শেখার চেষ্টা করতেন। এক ডাক্তারের (মহেন্দ্রনাথ ঘোষ) কাছ থেকে বঙ্কিমচন্দ্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রটি ধার করে এনে তা দিয়ে ”কীটাণু, নানা পুস্করিণীর দূষিত জল, উদ্ভিদের সূক্ষ্ম ভাগ এবং জীবশোনিত প্রভৃতি সূক্ষ্ম পদার্থ জাতি নিয়ে পরীক্ষা করতেন। এই সমস্ত পরীক্ষার সময় আমি কখনো তাঁহার মধ্যে ঈশ্বর ভক্তির পরিচয় পাই নাই। বঙ্কিমবাবুর এতগুলি সদ্গুণ সত্ত্বেও তাঁহার জীবনে ঈশ্বর বিশ্বাসের অভাবে আমার বড় কষ্ট হইতো।”

বঙ্কিমচন্দ্র সম্পাদিত মাসিক সাহিত্য পত্রিকা বঙ্গদর্শনে দুটি বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ বের হয়েছিল। প্রথম প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্রের জিজ্ঞাসা ছিল, ”পৃথিবীতে জীবের সৃষ্টি হইল কি প্রকারে?” স্যার উইলিয়াম টমসন বলেছেন,”অনেক উল্কাপিন্ড বীজবাহী, অন্য গ্রহ হইতে বীজ আনিয়া এই পৃথিবীতে বপন করিয়াছে।” এখানে বঙ্কিমচন্দ্র এই মতের প্রতিবাদ করেছেন অত্যন্ত সুচারুভাবে, বলেছেন,

“বুঝিলাম, এই পৃথিবী, অন্য গ্রহ প্রেরিত বীজে উদ্ভিজ ও জীবাদি সৃষ্টি বিশিষ্ট হইয়াছে, কিন্তু সে গ্রহেই বা প্রথম জীব কোথা হইতে আসিল?আবার বলিবেন, ‘অন্য গ্রহ হইতে’ আমরা আবার জিজ্ঞাসা করিব, সেই অন্য গ্রহেই বা বীজ আসিল কোথা হইতে? এইরূপ পারস্পর্ষের আদি নাই।প্রথম বিজোৎপত্তির কথা যে অন্ধকারে ছিল, সেই অন্ধকারেই রহিল”। ওনার অসাধারণ বাগ্মিতা, সুচারু প্রশ্ন, চিন্তাশক্তি ও বিজ্ঞান অনুসন্ধিৎসা আমাকে বারবার মুগ্ধ করে দেয়।

বিজ্ঞান বিষয়ক দ্বিতীয় প্রবন্ধ ‘আশ্চর্য সৌরৎপাত’- এখানে তিনি বর্ণনা দিয়েছেন, ”নিম্ন হইতে উৎক্ষিপ্ত কোনো ভয়ঙ্কর বলের বেগে মেঘখণ্ড ছিল ভিন্ন হইয়া গিয়াছে, তৎপরিবর্তে সৌর গগন ব্যাপিয়া ঘনবিকীর্ণ উজ্জ্বল সূত্রধর পদার্থ সকল ঊর্ধ্বে-ধাবিত হইতেছে। ওই সূত্রাকার পদার্থ সকল ঊর্ধ্বে-ধাবিত হইতেছিল।” -এই ধরণের প্রবন্ধে তিনি শুধু কয়েকটি চমপ্রদ তথ্য পরিবেশন করেন নি, তার সাথে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি দিয়ে সঠিক বিশ্লেষণও করেছেন। আজ যখন রকেট পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ছাড়িয়ে গ্রহান্তরে পাড়ি দেয়, আমরা মহাকাশ যান পাঠাই তখন মাধ্যাকর্ষণ টান অতিক্রম করার ব্যাপারটা আমরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি, কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রের সময়ে এটা কল্পনা করা শক্ত ছিল। তবু তাঁর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুসন্ধিৎসু অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তিনি যা অনুভব করেছিলেন তা লিখে গেছেন-

”আমরা কোন মৃৎপিন্ড ঊর্ধ্বে নিক্ষেপ করি, তাহা আবার ফিরিয়া আসিয়া পৃথিবীতে পড়ে। তাহার কারণ এই যে, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণী শক্তির বলে এবং বায়বীয় প্রতিবন্ধকতায়, ক্ষেপনিয় বেগ ক্রমে বিনষ্ট হইয়া, যখন ক্ষেপণী একেবারে বেগহীন হয়, তখন মাধ্যাকর্ষনেই বলে পুনর্বার তাহা ভূপতিত হয়। সূর্যালোকেও অবশ্য তাহাই হওয়া সম্ভব। কিন্তু মাধ্যাকর্ষণী শক্তি বা বায়বীয় প্রতিবন্ধকতায় শক্তি কখনও অসীম নহে।

উভয়েরই সীমা আছে। অবশ্য এমত কোন বেগবতী গতি আছে যে, তদ্দারা উভয় শক্তিই পরাভূত হইতে পারে। এই সীমা কোথায়, তাহাও গণনা দ্বারা সিদ্ধ হইয়াছে”।

বিস্ময় লাগে যে একজন প্রকৃত সাহিত্যিক মানুষের বিজ্ঞান চেতনার পরিধির ব্যপ্তি এতটাই যে প্রায় আজ থেকে ১৬০ বছর আগে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকেও অতিক্রম করা যায়।

‘জৈবনিক’ নামক একটি প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র প্রাচীনকালে ‘এলিমেন্ট’ বলতে কি বোঝাতো আর ১৮৭৫ নাগাদ এই ‘এলিমেন্ট’ এর অর্থ কি তার একটি অনবদ্য বিশ্লেষণমূলক দিক আলোচনা করে গেছেন।সাহিত্য সম্রাটের বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ পড়ে আমার একটি কথাই মনে হচ্ছে বারবার—-বিজ্ঞান নিয়ে পড়া মানেই কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া নয়। আবার একজন সাহিত্যিক ও অনেক বেশী বিজ্ঞান অনুসন্ধিৎসু, বিজ্ঞানমনস্ক, বিজ্ঞানপ্রেমী হতে পারেন। আর তাই প্রখ্যাত সাহিত্যিক উপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র কত অবলীলাক্রমে বলতে পারেন-

”বিজ্ঞান আমাদিগকে বলিতেছেন- আমি তোমাকে সহসা বিশ্বাস করিতে বলি না, যে সহসা বিশ্বাস করে, আমি তাহার প্রতি অনুগ্রহ করি না, সর্বদা আমার প্রতি সন্দেহ করিও, দর্শনের প্রতি সন্দেহ করিলেই সে ভস্ম হইয়া যায়, কিন্তু সন্দেহেই আমার পুষ্টি।” যেখানে ভারতবর্ষের ইষ্টমন্ত্র, ‘বিশ্বাসে মিলয়ে বস্তু’ -সেখানে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, বিশ্বাস নয় ‘তর্কেই মিলয়ে বস্তু’।

কি অসম্ভব দামি কথা বললেন বঙ্কিমচন্দ্র-যেখানে সচরাচর মানুষের বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা যে বিজ্ঞান যা বলে তা একেবারে নিশ্চিত- প্রশ্ন চলেনা – কিন্তু সাহিত্যিক-বিজ্ঞানমনস্ক বঙ্কিমচন্দ্র বললেন- ‘বিজ্ঞান’ ঠিক তার উল্টো কথা বলে। বিজ্ঞানের মূলমন্ত্রই অনিশ্চয়তা -প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান এগোয় ভুল সংশোধন করতে। বিজ্ঞানে চরম সত্য বা পরম সত্য বলে কিছু নাই।

প্রায় ১৫০বছর আগে বিজ্ঞানচেতা, স্বাধীনচেতা বঙ্কিমচন্দ্র উপলব্দি করেছিলেন ধর্ম আর বিজ্ঞানের পরম সংঘাত, পরম পার্থক্য। যেখানে ‘ধর্ম’ তো ”সন্দেহ করলেই ভস্ম হইয়া যায়।” ধর্মশাস্ত্র বলে, আমাকে চ্যালেঞ্জ করা যায় না, আমি চির অভ্রান্ত সেখানে ‘বিজ্ঞান’ বলে আমি সর্বদা তৈরী আছি চ্যালেঞ্জ নিতে, এসো, আমাকে ভ্রান্ত বলে প্রমান করো।

১৮৮৪ খ্রী ৬ ডিসেম্বর রামকৃষ্ণদেব ও বঙ্কিমচন্দ্রের সাক্ষাৎ হয়। রামকৃষ্ণদেব, বঙ্কিমচন্দ্রের থেকে দুই বছরের বড় ছিলেন।পরমহংসদেব কথায় কথায় বলেছিলেন যে, ”শুনিয়াছি আপনার বড় বিদ্যার অভিমান।” বঙ্কিমচন্দ্র তাতে ক্ষুব্ধ না হয়ে বরং ধর্মোপদেশ শুনতে চেয়েছিলেন। কিছুক্ষন কথাবার্তার পর আবার রামকৃষ্ণদেব বলেন (বঙ্কিমচন্দ্রে প্রতি),”কেউ কেউ মনে করে শ্রাস্ত্র না পড়লে, বই না পড়লে ঈশ্বরকে পাওয়া

যায় না। তারা মনে করে আগে জগতের বিষয়, জীবের বিষয় জানতে হয়, আগে সায়েন্স পড়তে হয়। ……তারা মনে করে ঈশ্বরের সৃষ্টি এ সব না বুঝলে ঈশ্বরকে জানা যায় না, তুমি কি বল ? আগে সায়েন্স না আগে ঈশ্বর?”

অবাক করে দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র বলেন,”হ্যাঁ আগে জানতে হয় জগতের বিষয়। একটু এ দিককার জ্ঞান না হলে, ঈশ্বর জানবো কেমন করে? আগে পড়াশুনো করে জানতে হয়”। আমার মতে “আগে সায়েন্স, পরে ঈশ্বর”-এইশুনে শ্রীরামকৃষ্ণ চটে যান। সেদিনের আলোচনা যে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল, কারণ ফেরার সময় বঙ্কিমচন্দ্র রামকৃষ্ণদেবকে বলে এসেছিলেন, ‘মহাশয়, যত আহাম্মক আমাকে ঠাওরেছেন তত নয়।”

আসলে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ভাবধারায় পশ্চিমবঙ্গীয় হিন্দু বাঙালী ভদ্রসমাজে প্রবল প্রভাব পড়লেও বঙ্কিমচন্দ্র সেই ভক্তিবিহ্বল উন্মাদনায় সারা দেননি।বঙ্কিমচন্দ্র সর্বদাই গুরুতর তত্বের মীমাংসা করতেন নিজের বুদ্ধিতে আস্থা রেখে, তাই বলেন,”যিনি প্রমান দেখাইবেন তাঁহার কথাই বিশ্বাস করিব। যিনি কেবল আনুমানিক কথা বলিবেন, তাহার কোনো প্রমান দেখাইবেন না, তিনি পিতৃপিতামহ হইলেও তাঁহার কথায় অশ্রদ্ধা করিব।”

১৮৮৫ সালে বঙ্কিমচন্দ্র ‘ধৰ্ম’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ ব্যবহার করে বললেন,”যাঁহার চিত্তশুদ্ধি আছে, তিনি শ্রেষ্ঠ হিন্দু, শ্রেষ্ঠ খ্রিস্টিয়ান, শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ, শ্রেষ্ঠ মুসলমান, শ্রেষ্ঠ পজিটিভিস্ট।” এইভাবেই বিজ্ঞানের সাথে ঈশ্বর ও হিন্দু ধর্মকে মিলিয়ে দিলেন শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক, অন্যতম সেরা সাহিত্যিক, সেরা চিন্তক-বিজ্ঞানমনস্ক বঙ্কিমচন্দ্র।

লেখিকা: অনিন্দিতা মাইতি নন্দী

 

 

 

 

রচনাসূত্র (Reference):

1)বঙ্কিমজীবনী, অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য
2)বঙ্কিম রচনাবলী
3)বঙ্গে বিজ্ঞান (উন্মেষ পর্ব)-আশীষ লাহিড়ী
4)প্রতিভার অবতার বঙ্কিমচন্দ্র, নব্য ভারত ১৩০১ বৈশাখ
5)বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ভারতী ১৩০১ আঃ
6)ছবি: ভারত সরকারের নথি থেকে সংগৃহীত

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট