নাসিম হোসাইন: বর্তমানে ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় সেলফির সমারোহ। নবীন প্রজন্মের মাঝে সেলফি তোলাটা ব্যাপক জনপ্রিয়। সেলফি হলো এমন একটি আলোকচিত্র যা স্মার্টফোন বা ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে নিজের তোলা নিজের প্রতিকৃতি।
সেলফির জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে ২০১৩ সালে অক্সফোর্ড ডিকশনারির অনলাইন ভার্সনে “সেলফি” শব্দটি সংযোজন করা হয়। তবে, সেলফি সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য আছে যা হয়তো আপনি আগে জানতেন না।
আজ আলোচনা করবো সেলফি সম্পর্কে ১৩টি চমৎকার তথ্য নিয়ে।
সেলফি সম্পর্কে মজার তথ্য :
সুপার লুকিং সেলফি তোলার ১০টি দুর্দান্ত কৌশল অনেকেরই জানা আছে। কিন্তু আমার মনে হয় না যে সেলফি সম্পর্কে সকল তথ্য সবারই জানা। চলুন আজ জানা যাক :
সেলফি সম্পর্কে মজার তথ্য
তথ্য-১: হালের জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা সেলফি আবিষ্কার হয়েছিলো ১৮৩৯ সালে। আমেরিকান ফটোগ্রাফার রবার্ট কর্ণলিউস ১৮৩৯ সালে সেলফি তুলেন এবং তার সেই ছবির পিছনে লিখেন “The First Light Picture Ever Taken”. তখনও ‘সেলফি’ শব্দটা আবিষ্কৃত হয়নি।
তথ্য-২:. ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি Selfie-কে একটি ইংরেজি শব্দ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
তথ্য-৩: মানসিক ডাক্তাররা মনে করেন মাত্রাতিরিক্ত সেলফি নেওয়া একটি ভয়ানক মানসিক সমস্যা। যারা অত্যাধিক সেলফি নেয়, তারা প্রায় সময়ই ডিপ্রেশনে ভোগে এবং তাদের মধ্যে অনেকের মাঝে আত্মহত্যা করার প্রবণতা দেখা যায়। তাই, আপনি যদি সেলফি এডিক্টেড হন, তাহলে এটা আপনার জন্য মোটেও সুখবর নয়।
তথ্য-৪: ১৫২৪ সালে ২১ বছর বয়সী একজন চিত্রশিল্পী সেলফি নেওয়ার একটি তৈলচিত্র অংকন করেন। সে সময় তিনি মোটেও জানতেন না ঠিক ৫০০ বছর পর সেলফি নেওয়ার ব্যাপারটা কতোটা জনপ্রিয় হবে।
তথ্য-৫: ফিলিপাইনের মাকাটি সিটিকে বলা হয় “Selfie capital of the world”. হ্যাশট্যাগে ‘সেলফি’ শব্দটিকে সার্চ দিয়ে দেখা যায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সেলফি এই শহরেই তোলা হয়। সেলফি নেওয়ার দিক থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে ম্যানহ্যাটান ও মিয়ামি।
তথ্য-৬: সেলফি তুলতে সবাই পছন্দ করেন, এমনকি নভোচারীরাও। আশ্চর্য হলেও সত্য, ১৯৬৬ সালে নভোযান জেমিনি ১২-তে মহাকাশ যাত্রায় বাজ আল্ড্রিন বেশ কিছু সেলফি তুলেছিলেন। এরপর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আরও অনেক মহাকাশচারীই করেছে।
তথ্য-৭: কারা বেশি সেলফি তুলেন, পুরুষ নাকি মহিলা ? এক জরিপে পাওয়া গিয়েছে এর উত্তরও। ব্যাংকককে ৫৫.২ শতাংশ সেলফি তুলে নারীরা, নিউইয়র্কে তা ৬১.৬ শতাংশ। সেলফি তোলার ক্ষেত্রে রাশিয়ার মস্কোর নারীরা রয়েছেন সবার চেয়ে এগিয়ে। মস্কোতে মোট সেলফির ৮২ শতাংশই নারীদের তোলা।
তথ্য-৮: ২০১৫ সালের মে মাসে কিম কারদাশিয়ান ৪৪৮ পেজের একটি বই প্রকাশ করেন, বইটির নাম ছিল “Selfish”. এই বইয়ের প্রতিটি পাতায় তার নেওয়া কিছু পছন্দের সেলফি ছিল। তৎকালীন সময়ে নিউইয়র্কের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই ছিল এটি।
তথ্য-৯: জেনিফার লী নামের এক মেয়ে সর্বপ্রথম ইন্সটাগ্রামে “Selfie” হ্যাশট্যাগ দিয়ে ২০১১ সালে একটি সেলফি আপলোড করেন। ইন্সটাগ্রামের মতে সেটিই ছিল ইন্সটায় আপলোড দেওয়া সর্বপ্রথম সেলফি।
তথ্য-১০: আমেরিকাতে প্রতি বছর ৩১-এ জুন ন্যাশনাল সেলফি দিবস পালন করা হয়।
তথ্য-১১: সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঘটনা একদমই নতুন না। সেলফি তুলতে গিয়ে প্রতিবছর অনেক মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন। এরুপ দুর্ঘটনার হার সবচেয়ে বেশি ভারতে।
তথ্য-১২: ২০০৫ সালে কানাডার একজন নাগরিক সেলফি স্টিক আবিষ্কার করেন। এটাই সেলফি স্টিকের ইতিহাস যেখান থেকে আরো জানবেন সেলফি স্টিক কিভাবে কাজ করে। তবে সেলফি স্টিক টুলটি মূলত ২০১৫ সালের পর থেকে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে।
তথ্য-১৩: ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে ‘No Selfie Zone”. কিছু বিপজ্জনক এলাকাতে সেলফি তোলা নিষিদ্ধ করেছে বেশ কিছু দেশ। মুম্বাইতে মোট ১৬ টি জায়গাকে No Selfie Zone বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
সেলফি তোলা মোটেও খারাপ জিনিস না। সেলফির মাধ্যমে আপনি আপনার জীবনের সুন্দর কিছু মুহূর্তকে খুব সহজেই ক্যামেরাবন্দী করে রাখতে পারেন। সেলফি তুলে আপনার ভালোলাগার অনুভূতিগুলো ছড়িয়ে দিন আপনার পরিবার- পরিজনদের মধ্যে। তবে সেলফি তোলার শখটা যেন আপনার আসক্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সেটা অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।