বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদন কমেছে

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: বিরূপ আবহাওয়ায় চলতি বছর দেশে চায়ের উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। গত ২০১৯ সালের চেয়ে চলতি ২০২০ সালে চায়ের  উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকের নিচে নেমে এসছে। বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে দেশে ৯ কোটি ৬৭ লাখ কেজি চায়ের উৎপাদন হয়। এই উৎপাদনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ চাশিল্পের ইতিহাসে উৎপাদনের সর্ব্বোচ রেকর্ড গড়ে। এর আগে ২০১৮ সালে  ৮ কোটি ২১ লাখ, ২০১৭ সালে ৭ কোটি ৯০ লাখ এবং ২০১৬ সালে ৮ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়। যদিও ২০০১ সালে এর উৎপাদন ছিল ৫ কোটি ৩১ লাখ কেজি। গত বছর ২০১৯ সালে প্রায় ১০ কোটি কেজি চায়ের উৎপাদনের বিপোরীতে চলতি ২০২০ সালে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয় ৭ কোটি ৭০ লাখ কেজি। কিন্তু এ বছরের জুলাই পর্যন্ত অর্জিত চায়ের পরিমান দাঁড়ায় মাত্র ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার কেজি। চাসংশ্লিষ্টরা প্রতিকূল আবহাওয়ার পাশাপাশি অধিক উৎপাদনের আশায় টি প্লান্টারদের অধিক হারে পেষ্টিসাইট ব্যবহার ও আবহাওয়া অনুযায়ী পেষ্টিসাইট প্রয়োগে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহন উৎপাদনে বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের (বিটিআরআই) পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, এক দিকে খরা অন্যদিকে অতিবৃষ্টি এবং মেঘলা পরিবেশের কারণে এবার দেশে চা উৎপাদনে প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, এবারের চা মৌসুমের নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত খরা এবং এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত অতি বৃষ্টি চায়ের জন্য উপযোগী আবহাওয়া ছিল না। শুধু জুন মাসে ৩৪০.৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এছাড়া পর্যাপ্ত সূর্যতাপ না পাওয়া ও মেঘলা আকাশের কারণে চা গাছ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের খাদ্য প্রস্তুত করতে ব্যর্থ হয়। ড. মোহাম্মদ আলীর মতে, রাতে বৃষ্টি ও দিনে রোদ চায়ের জন্য অধিকতর উপযোগী, কিন্তু মে জুনে দিনেরাতে অবিরত বৃষ্টিপাতের কারণে চা গাছের কুঁড়ি তৈরি করতে বাধাগ্রস্ত হয়। এতে করে চলতি বছর চার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে বছরের বাকি সময়ের মধ্যে চায়ের উৎপাদন ঘুরেও  দাঁড়াতে পারে, এমনটা মনে করেন এই চা বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট ভ্যালি সভাপতি ও জেমস ফিনলের ভাড়াউড়া চা ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, এবছর প্রচন্ড খরার মুখে চায়ের উৎপাদন ব্যহত হয়। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাত্র ২১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গত বছরে এই সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৩৫.৮৯ মিলিমিটার। জুলাইআগস্ট মাসে আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে থাকায় উৎপাদন কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। তবে তা গত বছরের তুলনা প্রায় ৩০ শতাংশ কম। এদিকে উৎপাদন ধরে রাখতে সরকারি সিদ্ধান্তে চাবাগানগুলো চালু রাখা হলেও দেশে করোনার সংক্রমনের মুখে সার্বিক ভাবে চায়ের বেচাকেনা কমে গেছে। লকডাউনের কারণে মার্চ থেকে এপর্যন্ত  চায়ের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় চায়ের  নিলামে তোলা বেশির ভাগ চা পাতা অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। এর প্রভাবে বাজারে চায়ের দামও কিছুটা কমে এসছে বলে স্থানীয় চা ব্যবসায়রা জানিয়েছেন।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

শহরের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা

সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, সৌদি আরব সহ বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ পাকিস্তানের অন্তত ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন…

3 days ago

৭১ হাজারেরও বেশি প্রাপকের হাতে চাকরীর নিয়োগ প

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ৭১ হাজারেরও বেশি প্রাপকের হাতে চাকরীর নিয়োগ পত্র…

3 days ago

ডিসেম্বরে ভারতীয় পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ২৬ হাজার কোটি টাকার লগ্নি

ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় পুঁজিবাজার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের (এফপিআই) কাছ থেকে ব্যাপক লগ্নি লাভ করেছে। পুঁজিবাজারে জমা…

3 days ago

আইএসএল: কেরালা ব্লাস্টার্সের দাপুটে জয়, মহামেডান স্পোর্টিং বিপাকে

কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে গতকাল আইএসএল ফুটবলে কেরালা ব্লাস্টার্স এক দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ৩-০ গোলে মহামেডান…

3 days ago

৩৭তম বিষ্ণুপুর মেলা: মল্লভূমের ঐতিহ্যের উন্মোচন

বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর আজ থেকে হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যের এক নতুন উজ্জ্বল মঞ্চ। সূচনা হয়েছে ৩৭তম বিষ্ণুপুর…

3 days ago

প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী ও গুরু পৌষালী মুখোপাধ্যায় প্রয়াত

প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী ও গুরু পৌষালী মুখোপাধ্যায় প্রয়াত। শনিবার কলকাতায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস…

3 days ago