ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রবলবর্ষণ ও জোয়ারের জল নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় জলবন্দি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বরগুনায় জলের চাপে প্রায় ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগেরহাটের শরণখোলায় জোয়ারের পানিতে ডুবছে বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা প্রায় ৬০০ পরিবার। বাড়িঘর পানিমগ্ন হয়ে পড়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। মোংলায় ভেসে গেছে প্রায় ৬ কোটি টাকার মাছ। প্রবলবর্ষণ ও অমাবশ্যার প্রভাবে নদনদীতে অধিক উচ্চতায় জোয়ারের তোড়ে গতকাল রবিবার পর্যন্ত বরগুনার কয়েকটি এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোর মধ্যে রয়েছে—সদর উপজেলার কুমড়াখালী, ফুলতলা ও মাইঠার সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার, পাথরঘাটার কালমেঘা, ছোনবুনিয়া ও তালুকের চরদুয়ানী এলাকার দেড় কিলোমিটার, বামনার অযোদ্ধা ও কালিবাড়ীতে আধা কিলোমিটার, তালতলীর জয়ালভাঙা এলাকার দেড় কিলোমিটার, বেতাগী উপজেলার বুড়ামজুমদার এলাকার দশমিক ২৫ কিলোমিটার। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের অস্বাভাবিক জোয়ারের প্রচণ্ড তোড়ে জেলার ২২টি পোল্ডারের ৯০৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিন সদর উপজেলার বিষখালী নদী তীরবর্তী ফুলতলা ও কুমড়াখালী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধের নিচের মাটি পানির তোড়ে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া মাইঠা এলাকার ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের জল মাঠে–ঘাটে ও লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে কয়েকটি গ্রামের মানুষ জলবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ডুবে গেছে বিভিন্ন ফসলের জমি। ভেসে যাচ্ছে ঘের ও পুকুরের মাছ। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কায়ছার আলম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা প্রয়োজন। এজন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে। এদিকে টানা ১০ দিনের বৃষ্টিপাত ও নদীর জোয়ারের পানিতে শরণখোলায় গ্রামাঞ্চলে বাড়িঘর পানিমগ্ন হয়ে পড়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। জোয়ারের পানিতে ডুবছে বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা প্রায় ৬০০ পরিবার। জানা যায়, উপজেলার বলেশ্বর নদী পাড়ের রাজৈর মারকাজ মসজিদ থেকে বান্দাঘাটা পর্যস্ত ৩০০ পরিবার এবং সাউথখালীর বগি, ত্যাড়াবেকা, পানিরঘাট, সোনাতলা ও খুড়িয়াখালী গ্রামের ২৮০ পরিবার বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করছে। সারা বছরই জোয়ার–ভাটার ওপর নির্ভর করে চলে তাদের জীবন। রাজৈর গ্রামের বাসিন্দা আ. হাকিম হাওলাদার জানান, জোয়ার ও প্রবল বর্ষণে তার ঘরের মধ্যে অন্তত দেড় থেকে দুই ফুট পানি উঠেছে। বগি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী হাওলাদার জানান, দিনে দুইবার তাদের জোয়ারের পানিতে ডুবতে হয়। খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আব্দুর রহিম হাওলাদার জানান, স্থানীয় কিছু লোকের খামখেয়ালির কারণে জোয়ারে ডুবে মরছে ৩০০ পরিবার। রা
য়েন্দা খালের পাড় থেকে বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হলে এই পরিবারগুলো রক্ষা পেত। বগি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রিয়াদুল পঞ্চায়েত জানান, আকাশে মেঘ দেখলেই সাউথখালীর পাঁচ গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। নদীর কাছাকাছি বাঁধের বাইরে থাকা এসব ভূমিহীন ও নিম্ন আয়ের মানুষের সারা বছরই ঝড়–জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে মানবেতর দিন কাটে। ধানসাগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম টিপু জানান, অবিরাম বৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলে বাড়িঘরে পানি ওঠায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। অন্যদিকে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও নদীতে আকস্মিক জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ এবং রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে মোংলার নিচু এলাকার কয়েক হাজার চিংড়ি ঘের। এতে ভেসে গেছে ঘেরের বাগদা চিংড়িসহ অন্যান্য সাদা মাছও। বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে গত দুই–তিন দিনে এখানকার প্রায় ১ হাজার ৭৬৫টি চিংড়ি ঘের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। এতে প্রায় ৬ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা এ জেড এম তৌহিদুর রহমান। ঘের মালিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত সুপারিশ পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। অপরদিকে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন দৈনন্দিন খেটে খাওয়া দিনমজুরেরা।