ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক একটি নতুন মাইলফলকে পৌঁছাল। দেশ দুটি এখন থেকে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, পরিবেশগত উন্নয়ন নিয়ে একে অপরকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশ দুটির পারস্পরিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করার জন্য তরুণদের অংশগ্রণ আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছেও বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ‘প্রতিবেশীরাই প্রথম‘- এই নীতি অনুসরণ ভ্যাকসিন এবং চিকিত্সার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেবে ভারত । ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার বাংলাদেশ সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়গুলোর সঙ্গে এগুলো নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। কয়েক ঘণ্টার জন্য ঝটিকা সফরে ১৮ আগস্ট মঙ্গলবার বাংলাদেশে আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। জানা গেছে, বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী এবং আগামী বছর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি যৌথভাবে উদযাপন করার পরিকল্পনা করতেই এই সফর করেন শ্রিংলা। সূত্র জানায়, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি স্মারক স্ট্যাম্প প্রকাশ করবে ভারত।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জীবন এবং মূল্যবোধ নিয়ে একাধিক অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করবে ভারত এবং বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাও জানাবে ভারত ও বাংলাদেশ। জানা গেছে,সফরে শ্রিংলা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান। এই বছরের মার্চে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশের আসার কথা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে তখন আর বাংলাদেশে আসতে পারেননি মোদি। তবে সেই সময় ভিডিও বার্তায় বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জানা গেছে, বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে করোনা প্রতিরোধে ভারতের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শ্রিংলা। সূত্র অনুযায়ী বৈঠকে শ্রিংলা জানান, ভারতে তিনটি ভ্যাকসিনেরর ট্রায়াল চলছে এবং অনুমোদন পেলে এই ভ্যাকসিনগুলোর বৃহৎ উৎপাদন শুরু করবে ভারত। শ্রিংলা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন যে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রত্যেক জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে ইতোমধ্যে পরিকল্পনা তৈরি করেছে ভারত সরকার। ভারত বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে করোনার কিট, মেডিসিন এবং পিপিই দিয়ে সহায়তা করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের চিকিৎসকদের বাংলা ভাষায় প্রশিক্ষণও দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে ভারত। এই করোনাকালীন সময়েও বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে ভারত সরকার। জানা গেছে, এই সম্পর্ক আরো জোরদার করতে পরবর্তী যৌথ পরামর্শমূলক কমিশন সভায় অংশ নেবে ভারত এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন বন্দর, বিদ্যুৎ, রেল এবং রাস্তাঘাট নির্মাণে সহায়তা করছে ভারত। এছাড়া চট্টগ্রামের মিরসরাই এবং খুলনার মোংলায় ইকোনমিক জোন তৈরি করছে ভারত যা আগামী বছর বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তিতে চালু হবে। এছাড়া আখাওড়া– আগরতলা রেল সংযোগ এবং মৈত্রি বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো কিছু কৌশলগত প্রকল্পও সেই সময় উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও ভারতের হাই ইম্প্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টে প্রজেক্টের (এইচআইসিডিপি) আওতায় বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা,স্যানিটেশনের মতো আর্থ সামাজিক প্রকল্পগুলোতেও সহায়তা করছে ভারত। বাণিজ্যিক দিক দিয়েও বাংলাদেশ সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। জানা গেছে, ভারতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রফতানি করে থাকে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। নিরাপত্তা ইস্যুতেও দু দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পারস্পরিক সহযোগিতা করছে। দুই দেশই সন্ত্রাস দমনে একে অপরকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও দুদেশের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে ৯ শতাংশ কম দামে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এছাড়া খুলনায় ১৩২০ মেগাওয়াটের আরেক পাওয়ারপ্ল্যান্ট তৈরি করছে ভারত। এছাড়া পারমাণবিক শক্তি কাজে লাগাতেও বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সহায়তা করছে ভারত সরকার। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে এয়ার বাবল ফ্লাইট চালুর প্রস্তাব দিয়েছে ভারত।ট্রাভেল বাবল বা এয়ার বাবল হলো তৃতীয় কোন দেশকে যুক্ত না করে নির্দিষ্ট নিয়মনীতি মেনে দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করা। এর ফলে দুই দেশের যাত্রীরাই উপকৃত হবে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী এবং রোগী যারা চিকিৎসায় জন্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায়। গত বছর বাংলাদেশের ১৬ লাখ মানুষ ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। নৌপ্রটোকল ট্রান্সশিপমেন্ট ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’ (পিআইডব্লিউটিটি) দ্বিতীয় সংযোজনীপত্র স্বাক্ষররের মাধ্যমে ভারতের পূর্বাচঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশ হয়ে উত্তর–পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক যোগাযোগ সহজতর হয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে কলকাতা থেকে আগরতলা যায় একটি পণ্যবাহী জাহাজ । এতে ভারতের উত্তর–পুর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। এছাড়া রেল পথে খুব সহজেই বাণিজ্য করতে পারছে দুই দেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশের যোগাযোগ খাতকে আরো শক্তিশালী করতে বাংলাদেশকে ১০ টি রেল ইঞ্জিন দিয়েছে ভারত। জানা গেছে, পানি পথ, আকাশপথে এবং স্থল পথে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি বাংলাদেশ এবং ভারতের উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করেছে।