পিতৃশোক কে পিছনে ফেলে উচ্চ মাধ্যমিকে সাফল্য এনে সামনে এগিয়ে যেতে চাই চন্দ্রকোনা রোডের রিয়া পাত্র


মঙ্গলবার,২১/০৭/২০২০
1099

পশ্চিম মেদিনীপুর:– পরীক্ষায় মাত্র কয়েক মাস বাকি৷ সেই সময়েই জীবনের চরমতম আঘাত পেয়েছিলেন চন্দ্রকোনা রোডের রিয়া পাত্র। আগষ্টের এক পড়ন্ত দিকে বাবা চঞ্চল পাত্র ব্রেণ হেমারেজে মারা যান। রেখে যান স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক শিশু পুত্র কে। ফলে চরম সমস্যায় পড়েন রিয়ারা। সেই আঘাত সামলে রিয়া এবার ডাবচা নবকাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪১৩। তার এই সাফল্যে খুশী রিয়ার মা ঝুম্পা দেবী থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা সকলেই।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা রোডের সাঁতবাঁকুড়ার চঞ্চল পাত্র এলাকার লরি ব্যাবসায়ী হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। আয়ও ভালোই করতেন। ফলে স্ত্রী ঝুম্পা, দুই মেয়ে পূজা, রিয়ার আর এক ছেলে অর্পণ কে নিয়ে সুখের সংসার ছিল। স্বপ্ন ছিল ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে। সেই মতো বড়ো মেয়ে পুজাকে নার্সিং পড়তে ভিন রাজ্যে পাঠান। আর রিয়া কেও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ডাক্তার করার স্বপ্ন বুনছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়৷ চঞ্চল বাবু ইন্টারনেল ব্রেন হেমারেজ হয়ে মারা যান৷

মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে রিয়ার মায়ের। তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে কি করবেন ভেবেই পাচ্ছিলেন না। স্বামী যে টুকু আয় করেছিলেন তা স্বামীর চিকিৎসার জন্য প্রায় শেষ। অবশেষে স্বামীর রাখা তিন খানা লরি বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেন রিয়ার মা৷ বড়ো মেয়ে কে নার্সিং পড়ানোর খরচের পাশাপাশি রিয়া এবং তার ভাই এরেও পড়াশুনো চালিয়ে যান।

বিজ্ঞাপন

এদিকে বাবার মৃত্যু আর কয়েক মাস পরেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। ফলে মানসিক দিক দিয়ে ভেঙ্গে পড়ে রিয়া। পরে বাবার মৃত্যু শোক কাটিয়ে বাবার স্বপ্ন পুরন করতে মনের জোর নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে সে। বাবার বিদেহী আত্মার কথা স্মরণ করেই পরীক্ষায় বসে এবং নজর কাড়া সাফল্য এনে বাবার স্বপ্ন পুরনের একধাপ এগিয়ে যায়। কিন্তু এবার?

রিয়ার মা ঝুম্পা দেবী জানান, স্বামীর স্বপ্ন ছিল রিয়া বড়ো হয়ে ডাক্তার হোক৷ কিন্তু তার অবর্তমানে তার স্বপ্ন পুরন আমি কিভাবে করবো? কারন ডাক্তারী পড়তে অনেক খরচ৷ স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারের আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লরি বিক্রির যে টাকা পেয়েছিলাম সেটাও প্রায় শেষের মুখে। তার উপর ছেলে রয়েছে একটি। জানিনা কিভাবে তার স্বপ্ন পুরন করবো৷

বিজ্ঞাপন

রিয়ার বক্তব্য বাবা স্বপ্ন দেখতেন আমি ডাক্তার হই। কিন্তু আমাদের পরিবারের বর্তমানে যে আর্থিক অবস্থায় রয়েছে তা ডাক্তারী পড়া দিবাস্বপ্নের মতো। তাই বাবার স্বপ্ন খানিকটা হলেও পুরন করতে আমি ফার্মাসিস্ট নিয়ে পড়তে চাই। বড়ো হয়ে এলাকার অসহায় মানুষের সেবা করতে চাই।

ডাবচা নবকলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, রিয়া খুবই মেধাবী ও বিনয়ী ছাত্রী। ওর কাছে আমরা আরো ভালো ফল আশা করেছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার কয়েক মাস আগেই বাবা মারা যাওয়াতে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। সেই অবস্থাতেও যে ফল করেছে তাতে আমরা সকলেই খুশী ও গর্বিত।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট