মিজান রহমান, ঢাকা: বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স বা জীবন রহস্যে ৮টি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পেয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)। ১৭১টি করোনা নমুনার জীবন রহস্য উন্মোচন করে সংস্থাটি বলছে, এসব বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায়নি। বিষয়টি অনুজীব বিজ্ঞানের জন্য এক বড় গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। ১৯ জুলাই রবিবার বিসিএসআইআরের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়েছে। ‘করোনার ৩০০ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনের লক্ষ্য অবহিতকরণ’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিসিএসআইআরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শওকত আলী। এতে জানানো হয়, এসব গবেষণার ফল ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের জীবন রহস্য উন্মোচনের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ড্যাটাতে (জিআইএসএআইড) প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিসিএসআইআরের বায়োলজিক্যাল রিসার্চ বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম খান বলেন, করোনাভাইরাসে ১ হাজার ২৭৪টি প্রোটিন থাকে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস তার জিনোমিক পর্যায়ে ৫৯০টি স্বতন্ত্র রূপ পরিবর্তন করেছে। এসময় প্রোটিন পর্যায়ে পরিবর্তন ঘটেছে ২৭৩ বার। অর্থাৎ প্রোটিন পর্যায়ে সব স্তরে পরিবর্তন ঘটেনি।
যতগুলো জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে সবগুলোতে ডি–৬১৪জি পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। এর কারণে বাংলাদেশে করোনার ব্যাপক সংক্রমণ হয়েছে। তিনি বলেন, বিসিএসআইআরের গবেষণায় জিন পর্যায়ে ৮টি ব্যতিক্রম (ইউনিক) স্বতন্ত্র রূপ পাওয়া গেছে। যা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেনি। সংবাদ সম্মেলনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, বাংলাদেশে করোনার এসব জীবন রহস্যের সঙ্গে ইতালির করোনাভাইরাসের সঙ্গে বেশি মিল পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত বলার সময় আসেনি। লক্ষ্য অনুযায়ী ৩০০ করোনা নমুনার জীবন রহস্য উন্মোচন করতে পারলে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন ও ঔষধ উৎপাদনে অংশীদার হতে পারবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে করোনাভাইরাসের জীবন রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্যে সংক্রমণ ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে আট বিভাগ থেকে ৩০০ করোনা কেসের নমুনা, মেডিকেল হিস্ট্রি ও জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রকল্প চলছে।
একাজে বিসিএসআইআরকে সহযোগিতা করছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ (এনআইএলএমআরসি)। মানুষ হতে মানুষে সংক্রমণ বিস্তারের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের জিনোম ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে থাকে। এই পরিবর্তনগুলো রেকর্ড ও বিশ্লেষণ করে ভাইরাসটির জিন ঠেকানো সম্ভব। সারাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রাক্কালে অঞ্চলভেদে ভাইরাসটি তার স্বতন্ত্র রূপ (মিউটেশন) তৈরি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে জীবন রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে অঞ্চলভিত্তিক এই স্বতন্ত্র ভাইরাস শনাক্তকরণের মাধ্যমে মহামারির দ্বিতীয় পর্যায়ে দ্রুত করোনা ঠেকানো সম্ভব হবে। অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশের (এনআইএলএমআরসি) পরিচালক অধ্যাপক একেএম শামসুজ্জামান বলেন, বিসিএসআইআরের জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ে নতুন গবেষণার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এখানে যেসব ইউনিক বিষয় পাওয়া গেছে, সেগুলো করোনাভাইরাস বিদায় নেওয়ার পরও দীর্ঘদিন অনুজীব বিজ্ঞানের বড় গবেষণার বিষয় হয়ে থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আনোয়ার হোসেন। জিনোম সিকোয়েন্স বা জীবন রহস্য হচ্ছে– ভাইরাসের উৎস, গতি, প্রকৃতি ও পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা।