বাংলাদেশে তিস্তা ব্যারেজে পানি প্রবাহ কমছে

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: লালমনিরহাটের তিস্তার ব্যারেজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ কমলেও ভাটিতে এখনো ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি।লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এখনো রয়েছেন পানিবন্দি। সেখানে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবারের সংকট। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষগুলোর অভিযোগ, সামান্য ত্রাণ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি তাদের ভাগ্যে। ভাটিতে পানি প্রবেশ করায় অনাহারে থাকলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি কোনো সাহায্য সহযোগিতা। অনেক উপজেলায়ও মেলেনি জনপ্রতিনিধির দেখা। এদিকে লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়া বানভাসিরা এখনো বাড়িতে ফিরতে পারেনি। ১৪ জুলাই দুপুর ২ টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটার। যা স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যার উন্নতি ঘটতে শুরু করেছে। ১৫ জুলাই বুধবার সকাল থেকে তিস্তার পানি ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ধরলা নদীর কূলাঘাট পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া তিস্তা আর ধরলা নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় উজানের সামান্য ঢলেই ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে এ জেলার মানুষ।

কয়েকদিনের টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে গত শুক্রবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। ওই দিন দুপুর থেকে তিস্তা নদী বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়। তা অব্যাহত থেকে রবিবার রাতে আরো বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে জেলার ৫টি উপজেলার ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তাই ব্যারেজ রক্ষার্থে ফ্লাড বাইপাসের উপর দিয়ে পানি প্রবাহের আশঙ্কায় তিস্তা পাড়ে রেড এলার্ট জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং শুরু করে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তবে এ পানি পুরোপুরি নেমে যেতে আরো ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগবে বলে স্থানীয়দের দাবি। টানা পানিবন্দি থাকায় বন্যাকবলিতদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার স্রোতে ভেঙে গেছে ঘর বাড়ির বেড়াসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। পানির প্রচণ্ড স্রোতে অনেকের ঘর বাড়ির ভেতরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব মেরামত করতেও এক সপ্তাহ কেটে যাবে। পানি কমলেও ভাঙন আতঙ্কে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। তিস্তার বাম তীরের প্রতিটি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তাপাড়ের মানুষের। ত্রাণ নয়, নদী খনন করে দুই পাড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি তিস্তাপাড়ের মানুষের। তারা স্থায়ী ভাবে ভালোবাসার নীড়ে আপন ঘরে থাকার নিশ্চয়তা চান। এদিকে আলোচিত বাংলাদেশি ভূখণ্ড দহগ্রামআঙ্গরপোতা। তিন দিকে ভারত এক দিকে তিস্তা নদী বেষ্টিত ২১.৮০ বর্গমাইলের দহগ্রাম ইউনিয়ন। পূর্বদিকে বাংলাদেশিদের মূল ভূখণ্ড আসার একমাত্র পথ বিএসএফের নিয়ন্ত্রণাধীন তিনবিঘা করিডোর। দহগ্রামের দক্ষিণপশ্চিম অংশে বয়ে যাওয়া সীমান্তের ওপারের মেখলিগঞ্জ দিয়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামে প্রবেশ করেছে ভারতের সিকিমে উৎপত্তি হওয়া নদী তিস্তা।

আর এই নদীটি লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার ওপর দিয়ে চলে গেছে কুড়িগ্রাম জেলায়। যার কারণে বন্যা হলেই প্রথম ধাক্কা সহ্য করতে হয় দহগ্রামকে। লালমনিরহাটের আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়ের আলেয়া বেগম, বলেন, কত কষ্ট করি ঘর বানাইছি। বানের পানিত সেই ঘর ভাঙ্গি গেইছে। ঘরে বড় বড় খাইল (গর্ত) হইছে। এবারের মত বান (বন্যা) ৪০ বছরেও দেখি নাই। হামার খবর কায়ো নেয় না বাহে। জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার নিজ গড্ডিমারী গ্রামে ঘুমন্ত মায়ের কোল থেকে বন্যার পানিতে পড়ে ৮ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্য হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় সাপ ও পোকামাকড়ের উপদ্রুপ বৃদ্ধি পেয়েছে।  বাঁধ ভেঙে পথ পরিবর্তন করে ঘূর্ণিঝড় মতোই প্রবল স্রোতে পানি ঢুকে ঘরবাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি, পাকা রাস্তাসহ ফসলি জমি বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনের শিকার মানুষগুলো বসতভিটাআবাদীজমিসহ সবকিছু হারিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে বাঁধ, রাস্তা বা অন্যের জমিতে। তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি টানা ৩ দিন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সোমবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় কমতে শুরু করে। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) দুপুরে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছে।

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে আগামী এক/দুই দিন উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি। জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে আসায় বন্যার উন্নতি ঘটেছে। তবুও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় জিআর ও ভিজিএফ মিলে এক হাজার ১৯০ মেট্রিক টন চাল, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ২২ লাখ ২৫ হাজার ৭শ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা বিতরণ শুরু হয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে তিস্তাপাড়ে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০২টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি। দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, প্রতি বছরে দহগ্রামই তিস্তার ভাঙনে ছোট হয়ে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধে পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নিলে দহগ্রাম ইউনিয়নটি বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে। তাই বাংলাদেশের এ ভূখণ্ডটির অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসার আবেদন জানান তিনি।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

শহরের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা

সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, সৌদি আরব সহ বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ পাকিস্তানের অন্তত ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন…

2 days ago

৭১ হাজারেরও বেশি প্রাপকের হাতে চাকরীর নিয়োগ প

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ৭১ হাজারেরও বেশি প্রাপকের হাতে চাকরীর নিয়োগ পত্র…

2 days ago

ডিসেম্বরে ভারতীয় পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ২৬ হাজার কোটি টাকার লগ্নি

ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় পুঁজিবাজার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের (এফপিআই) কাছ থেকে ব্যাপক লগ্নি লাভ করেছে। পুঁজিবাজারে জমা…

2 days ago

আইএসএল: কেরালা ব্লাস্টার্সের দাপুটে জয়, মহামেডান স্পোর্টিং বিপাকে

কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে গতকাল আইএসএল ফুটবলে কেরালা ব্লাস্টার্স এক দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ৩-০ গোলে মহামেডান…

2 days ago

৩৭তম বিষ্ণুপুর মেলা: মল্লভূমের ঐতিহ্যের উন্মোচন

বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর আজ থেকে হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যের এক নতুন উজ্জ্বল মঞ্চ। সূচনা হয়েছে ৩৭তম বিষ্ণুপুর…

2 days ago

প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী ও গুরু পৌষালী মুখোপাধ্যায় প্রয়াত

প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী ও গুরু পৌষালী মুখোপাধ্যায় প্রয়াত। শনিবার কলকাতায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস…

2 days ago