ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: অস্বাভাবিকভাবে কুড়িগ্রাম অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ–নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলা ও তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্রুত বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ–নদীর পানিও। এছাড়া সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে আবারো নদীর পানি বৃদ্ধি শুরু করেছে। তবে যমুনার পানি এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম জেলায় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চলছে জরুরি সভাও। প্রথম দফা বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চরাঞ্চলসহ নদ–নদীর অববাহিকায় বসবাসরত মানুষজন। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, শনিবার বিকেল ৩টায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ও তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলার পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়া এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। ধরলা ও তিস্তা নদীর অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে বলেও জানান আরিফুল ইসলাম।
এদিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদ–নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সেসব এলাকায় বসবাসকারী মানুষজন। প্রথম দফা বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতেই আবারো বন্যার কবলে পড়লে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে তাদের। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ইউনুছ আলী জানান, বন্যা শেষ না হতেই আবারো বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ছে। এমনিতেই অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে। আবারো বন্যা দীর্ঘ হলে কষ্টের শেষ থাকবে না। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, গত মাসের ২৪ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়েছে। সেই বন্যার পানি এখনও পুরোপুরি নেমে যায়নি। তার ওপর আবারও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা আরো দীর্ঘায়িত হলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে চরবাসীদের। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব উপস্থিত ছিলেন। ইতিমধ্যে আমরা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা জেলা ও সকল উপজেলার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে প্রস্তুত করে রেখেছি। বন্যায় যখন যা প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবে তাই করা হবে।
অন্যদিকে, সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজিপুর পয়েন্টে যমুনা পানি গত কয়েকদিন কমতে থাকার পর আবারও বৃদ্ধি শুরু করেছে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বন্যার। তবে পানি এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ১১ জুলাই শনিবার বিকেলের দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ সেন্টিমিটার এবং কাজিপুর পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮ সেন্টিমিটার। এর ফলে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং কাজিপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা আগেও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ছিলো বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার নীচে ও কাজিপুর পয়েন্টে ছিল বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার নিচে। এছাড়া যমুনার পানি বাড়তে থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এর আগে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জুনের শেষে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১ জুলাই স্থিতিশীল থাকার পর ২ জুলাই থেকে কমতে থাকে পানি। টানা ৯ দিন পানি কমার পর ফের বাড়তে শুরু করেছে।