“বিশ্ব পরিবেশ দিবস নিয়ে কিছু কথা” – রামপ্রসাদ দাস, প্রধান শিক্ষক, ওএফডিসি প্রাথমিক বিদ্যালয়


বৃহস্পতিবার,০৪/০৬/২০২০
1126

প্রিয় ছাত্র ছাত্রীরা!!

আমরা ২০২০ সালে দাঁড়িয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করতে চলেছি।
এবারে আমাদের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল বিষয় বায়োডাইভারসিটি। বায়োলজিক্যাল ও ডাইভারসিটি দুটি শব্দ থেকে এসেছে বায়োডাইভারসিটি কথাটি। যার বাংলা অর্থ জীব বৈচিত্র। এর আগেও ২০১৯ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করার জন্য সহযোগিতা করেছে চিন সহ অন্যান্য দেশ। তাদের বিষয় ছিল এয়ার পলিউশন। এয়ার পলিউশন বা বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা করার জন্য চীন সহ আরো অনেক দেশ যথোপযুক্ত ভূমিকা নিয়েছে। ২০১৮ সালে ভারত বর্ষও এই বিশ্ব পরিবেশ দিবসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। তখন আমাদের বিষয় ছিল প্লাস্টিক-” বিট দি প্লাস্টিক পলিউশন”। সেই সময় বম্বেতে প্রায় ৬ হাজার মানুষ এক জায়গায় জড়ো হয়ে সমুদ্র থেকে ৯০,০০০ হাজার কেজি প্লাস্টিক তারা পরিষ্কার করে। এ বছর ২০২০ সালে কলম্বিয়া, জার্মানি এবং ইউনাইটেড নেশন একসাথে মিলে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সমগ্র পৃথিবী কে দূষণমুক্ত পরিবেশ দেওয়ার জন্য এবং যৌথভাবে জীব বৈচিত্র কে ফিরিয়ে আনার জন্য আবার নেমে পড়েছে। তাদের লক্ষ্য ২০২১ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এই বৈচিত্র্যকে সঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনা। ইকোসিস্টেমকে পুনরুদ্ধার করা বা রি কনস্ট্রাক্ট করা।

এখন কথা হলো ইকোসিস্টেমকে বা পরিবেশের উপর হঠাৎ এত জোর দিচ্ছি কেন? পরিবেশের কথা এতো ভাবছি কেন?
হ্যাঁ এটাই উপযুক্ত সময় জোর দেওয়ার।

আমরা আমাদের এই পরিবেশ থেকেই আমাদের খাবার, আমাদের বাঁচার বাতাস, খাবার জল এমনকি আমরা যে জলবায়ুর মধ্যে বেঁচে আছি এর সবটাই আমরা আমাদের পরিবেশ থেকে পেয়ে থাকি।

কখনো কখনো আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় এসেছে যখন এই প্রকৃতি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে, যাতে আমরা আমাদের নিজেদের জন্য আমাদের এই পরিবেশকে রক্ষা করি।

এই পৃথিবী আজ এক ভয়ংকর ধ্বংসলীলার সামনে। প্রায় ১০ লক্ষ প্রজাতির উদ্ভিদ জীবজন্তু ধ্বংসের মুখে। খুব শীঘ্রই আমাদের একটা সলিউশন বা সমাধানের প্রয়োজন। না হলে আমাদের আবার এই কোভিড ১৯ এর মতন আরও ভয়ঙ্কর মহামারী, সুনামি, আমপান বা অতিসম্প্রতি নিসর্গের মতন ভয়ংকর ঝড় ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হবে।

আজ আমাদের কর্মফলেই কিন্তু এই সমস্ত দুর্যোগ। সবকিছুর পেছনে দায়ী আমরাই। আমরা সকল বিপদের মধ্যে পড়ছি শুধুমাত্র এই জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে ফেলার জন্য। আমাদের লোভের জন্য।

আর আমরা একবার ভেবে দেখি, যদি আমাদের এই বাড়ির দেয়াল থেকে আমরা একটা করে ইট খসিয়ে নিই, তারপর আস্তে আস্তে আরও একটা, আরো একটা– এইরকম করে দেখতে দেখতে একটা সময় পুরো বাড়িটাই ভেঙে পড়বে।
আমাদের পরিবেশের ক্ষেত্র তাই ঘটছে, আগেও ঘটেছে।

এখন আমাদের লক্ষ্য একটাই, এই পৃথিবীকে পরিষ্কার রাখতে হবে। আমাদেরকে বাতাস জল যাতে দূষিত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। আর আমাদের পরিবেশ আমাদের এই বাস্তু তন্ত্র আমাদের এই বিচিত্র সব কিছুকেই আমাদের রক্ষা করতে হবে।

আমাদের আটটি গ্রহ আর এই নক্ষত্রমন্ডলের মধ্যে শুধুমাত্র এই পৃথিবীতেই মানুষ বাস করে। একমাত্র বসবাসযোগ্য গ্রহ বলতে বোঝায় এই পৃথিবীকে। ধ্বংসের মুখে যদি আমাদেরকে টিকে থাকতে হয়, তাহলে আমাদের প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে।

আমরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। কামীনি রায়ের কথায়৷-
“আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে ”।

যদি এই জীব বৈচিত্র কে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারি তাহলে বেঁচে থাকা অনেক সুবিধার হবে।

আমরা কি পারি না কিছু দায়িত্ব নিতে?
তোমরা যারা ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রী তারা যদি একটু এগিয়ে আসো, বাড়িতে যেখানে ময়লা-আবর্জনা চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সেগুলো যদি তোমরা একটু এক জায়গায় করে রাখো, একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলার ব্যবস্থা করো, আমরা যদি জল অপচয় না করি আমরা যে ফলগুলো খাচ্ছি, ফলের বীজ গুলো যদি কোন ফাঁকা জায়গায় ফেলি, যেখানে জায়গা পড়ে আছে, সেরম জায়গায় যদি ছড়িয়ে দিই, আমরা যদি অকারনে প্লাস্টিক না ব্যবহার করি এবং সর্বোপরি আমরা যদি পরিবেশের দিকে সবুজায়নের জন্য লক্ষ রাখি, তাহলে কিন্তু আমরা সমস্ত জীব বৈচিত্র কে আবার ফিরিয়ে আনতে পারি।
আমরা যদি অন্য পশুদেরকে হত্যা না করি, ( ঠিক যেমন কেরালাতে হাতি মারা হলো।)

আমরা যদি প্রতিদিন আমাদের বেঁচে যাওয়া খাবার থেকে পশু-পাখিদের কিছু খাবার, জল দেই, আমরা যদি কোনদিনও সবুজ কে ধ্বংস হতে না দিই তাহলে আমাদের এই পৃথিবী আবার সুন্দর হতে পারে।

আমরা দেখেছি করোনা সংক্রমনের সময়, লক ডাউন থাকা কালিন আমাদের পৃথিবী কত নির্মল হয়েছিল, বায়ু দূষণের মাত্রা কত নেমে গেছে, নদীর জলের স্বচ্ছভাব আবার নতুন করে দেখা গেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাহাড়ের চূড়া দেখা যাচ্ছে।

এগুলো সবই আমাদেরকে অবশ্যই কিছু সংকেত দেয়। তাই বিশ্ব পরিবেশ দিবসে নিজেদেরকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করি। আমরা নিজেরা একটি শপথ নিই।
যদি আমরা প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী একটি করে গাছ লাগাই, সেটা নিজের বাড়িতে হতে পারে, নিজের বাড়ির পাশে হতে পারে, খেলার মাঠের পাশে হতে পারে। স্কুলেও হতে পারে। যদি মাটিতে জায়গা না থাকে, তবে অন্তত টবে একটা গাছ লাগাই। প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রী যদি একটা করে গাছ লাগায়, একটু ভাবো তো আমরা কত সুন্দর একটা পৃথিবী উপহার দিতে পারি।

তাই আজ আমরা শপথ করি আমরা প্রত্যেকে একটি করে গাছ লাগাব, ২০২০ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের অঙ্গীকার- বায়োডাইভারসিটি রক্ষা করব, জীব বৈচিত্র কে রক্ষা করব।

এসো আমরা সেটাই করি। আমাদের পরিবেশকে বাচাই। সাথে সাথে আমরা নিজেরাও বাঁচি।।
সবশেষে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কথায় বলি
” চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”

রামপ্রসাদ দাস,
প্রধান শিক্ষক,
ওএফডিসি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
যশোর রোড
কোলকাতা-২৮

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট