আজ কোলকাতার ‘বিধান ভবন’-এ আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি সোমেন মিত্রের বিবৃতি…


বৃহস্পতিবার,০৪/০৬/২০২০
715

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং রাজ্যের টিএমসি সরকারের করোনা অতিমারী এবং আমফান পরবর্তী সময়ে নগ্ন রাজনীতি সারা দেশের গরিব মানুষের খাদের কিনারায় নিয়ে এসেছে।দুই সরকারেরই পাখির চোখ এখন ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচন।দেশের গৃহমন্ত্রী যখন মানুষকে আস্বস্ত করার চেষ্টা করবেন, তখন তিনি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে বিজেপির ক্ষমতায় আসার গল্প শোনাচ্ছেন। এদের দেশের মন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আছে তো ?

দেশে যখন কোভিড ভাইরাস দোড়গোড়ায় তখন প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত ছিলেন মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সরকার ভাঙতে আর আমাদের মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন এবং রাস্তায়-রাস্তায় গোল দাগ কেটে বেড়াচ্ছিলেন। অমিত শাহ বলেই দিলেন করোনা মোকাবেলায় ভারত আমেরিকার থেকে ভালো জায়গায় আছে।কিন্তু তিনি এটা বললেন না যে আমরা কত সংখ্যক টেস্ট করেছি আর আমেরিকা কত টেস্ট করেছে? এটাও বললেন না যে আমরা সংক্রমণের নিরিখে এখন বিশ্বে সাত নম্বরে আছি। খেলা শেষ হওয়ার আগেই তো নিজেরাই জয় ঘোষণা করে দিচ্ছেন।

সারা দেশের মত, এ রাজ্যেও লক ডাউন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রথমে মদের দোকান খুলে দেওয়া হয়েছিল, এখন তো সামাজিক দূরত্বের কোন বালাই নেই। বাস , ট্যাক্সি , অটোতে যে ভাবে মানুষ গাদাগাদি করে যাচ্ছেন , তা দেখে শিউরে উঠছি।

ভিন রাজ্য থেকে শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার কোন সঠিক পরিকল্পনা বা আন্তরিকতা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের ছিল না। কংগ্রেস সভানেত্রী শ্রীমতি সনিয়া গান্ধী শ্রমিক স্পেশালের ভাড়া কংগ্রেস দিয়ে দেবে বলার পরেই দুই সরকারের টনক লড়েছিল।তাঁরা সর্বস্ব খুইয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন, তাই কংগ্রেস দাবি করেছে, তাঁদের ব্যাংকের খাতায় এখনই ১০০০০ টাকা এবং প্রতি মাসে ৭৫০০ টাকা অন্তত ৬ মাসের জন্য পাঠানো হোক।

আমফানের দাপট যে পরিমান ছিল তা অভূতপূর্ব অথচ আবহাওয়া দপ্তর প্রায় ২ সপ্তাহ আগে থেকে সতর্ক করছিলেন। আমফানের ফলে চরম বিপর্যয় হবে জেনেও সরকারের প্রস্তুতি ছিল কি ? যে সরকারের গাছ কাটতে সেনাবাহিনী ডাকতে হয়,পাশের রাজ্য থেকে লোক এবং মেশিন আনতে হয় তবে সেই সরকারের উপর মানুষের আস্থা থাকবে কিভাবে ? তবে বিপর্জয় মোকাবিলার জন্য দপ্তর এবং মন্ত্রী রেখে লাভ কি ? CESC -র ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে এখন কি হবে ? বাম সরকারের সময় CESC এসেছিল ঠিকই তবে আপনি নয় বছর তাদের একচেটিয়া কাজ করতে দিলেন কেন ?

প্রধানমন্ত্রী ১০০০ কোটি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, আমরা মনে করি, এত বড় বিপর্যয়ে এই সাহায্য একদমই অপ্রতুল। আমাদের দাবি ত্রাণের কাজ স্বচ্ছ ভাবে হোক। পঞ্চায়েত স্তরে সর্বদলীয় কমিটি করে পতাকার রং না দেখে বিপর্যস্ত মানুষকে সাহায্য করা হোক। প্রত্যেকটি ঘরহীন মানুষকে ঘর করে দেওয়া হোক।কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আসলে তাঁদের কাছেও এই দাবি প্রদেশ কংগ্রেস রাখবে। মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে বলছেন ত্রানে দুর্নীতি তিনি সহ্য করবেন না। অথচ রেশন দুর্নীতির পরে তাঁর দলের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন ?

এই রাজ্যে ত্রানে দলবাজি ছিলই। এখন বিরোধী দল ত্রাণ দিতে গেলে তাঁদের আক্রমণ করা হচ্ছে। গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানো কে নাটক বলা হচ্ছে। গত রবিবার বিরোধী দলের নেতা আব্দুল মান্নান এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী হাওড়া জেলার শ্যামপুরে যান , তারা ফিরে আসার পরেই কংগ্রেস এবং বাম কর্মীদের আক্রমণ করে রক্তাক্ত করা হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেও ত্রাণ দেওয়ার সময় কংগ্রেস কর্মীদের বাঁধা দেওয়া হয়।

রাজ্যে সংবাদ মাধ্যমের উপর যেভাবে সরকারি ফরমানে আঘাত আসছে তা অত্যন্ত লজ্জ্বাকর।আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক কথা বলেন। মোদী সরকার এই বিষয়ে সিদ্ধহস্ত আমরা তা জানি। উনি সমালোচনা সহ্য করেন না। কয়েকটি বংশবদ টিভি চ্যানেল ছাড়া কাউকে সাক্ষাৎকার দেন না। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যিনি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাহরণের কথা বলেন, তাঁর সরকারি নির্দেশেই তাঁর রাজ্যেই সংবাদপত্রের সম্পাদককে থানায় ঘন্টার পর ঘন্টা জেরা করা হয় , তাঁর সমালোচক টিভি চ্যানেলগুলির সংবাদ যাতে সবার কাছে না পৌঁছয় তাঁর জন্য কেবেল টিভি সংস্থাগুলোকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। মাননীয়ার পক্ষে না থাকলে সংবাদমাধ্যমে সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হচ্ছে।আমরা তো মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করতাম, এখন এ রাজ্যেও ফ্যাসিবাদের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

আমাদের দাবি, গত ছয় মাস রাজ্য সরকার কোন সংবাদ মাধ্যমকে কত টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছেন সেটা মানুষকে জানান।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট