পেশায় পেট্রোল পাম্পের কর্মী। সময়-সুযোগ পেলে লেখেন গান। গুনগুনও করেন নিজেই। কখনো কখনো তা শোনান সহকর্মীদের। বাহবাও পান যথেষ্টই। করোনা যুদ্ধে লকডাউনের বাজারে সেই গানকেই অস্ত্র করেছেন এই পাম্প কর্মী। নিজের ছোট্ট হারমোনিয়াম নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন পাড়ায় পাড়ায়। সাইকেল ভ্যানে চাল, আলু, সয়াবিন, তেল, মুড়ির প্যাকেট নিয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন গরীবের ঘরে। আর সেইসঙ্গে নিজের লেখা গান শোনাচ্ছে। যে গানের মধ্য দিয়ে লকডাউন মেনে চলার বার্তা দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন রাখছেন ঘর থেকে কেউ বেরোবেন না। যথেষ্ট সাড়াও মিলছে গ্রাম-গঞ্জে।
নাম চিরঞ্জিৎ ঘোষ। নদীয়ার এক প্রত্যন্ত গ্রাম তাঁতিগাছিতে বাস করেন এই পাম্প কর্মী। নিজের ডিউটির পাশাপাশি প্রতিদিন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সঙ্গে পাশে পেয়েছেন এলাকার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে। যেমন সাধন ঘোষ, সন্তু-পার্থ সহ পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতা করছেন চিরঞ্জিতের এই মানবিক কাজে।
করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। গোটা দেশে যুদ্ধ চলছে। গোটা বিশ্বে যুদ্ধ চলছে। সেই যুদ্ধের এক সৈনিক প্রত্যন্ত গ্রামের চিরঞ্জিতও। রবিবাসরীয় বিকালে তাঁর দেখা মিলল গ্রামেরই তেমাথায়। হারমোনিয়ামে গান শোনালেন। সেই সঙ্গে ওই এলাকার গরীব দুস্থ মানুষের হাতে পৌঁছে দিলেন খাদ্য সামগ্রী। কথায় কথায় বললেন, এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দেশ চলেছে, বিশ্ব চলেছে। সেই পরিস্থিতিকে কাটিয়ে উঠতে মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু তবুও কিছু মানুষের কানে সেই সচেতনতা বার্তা পৌঁছাচ্ছে না। বা তাদের কানে পৌঁছালেও তারা বুঝতে পারছেন না কোন বিপদ সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অকারণে তারা ভিড় জমাচ্ছেন। সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং বজায় রাখার যে গুরুদায়িত্ব প্রত্যেকের তা প্রত্যেকটা মানুষকে বোঝাতে হবে তা প্রত্যেকটা মানুষকে বোঝাতে হবে। মানুষকে ভালো করে বোঝালে তিনি বুঝবেন। সেই কাজটাই করার চেষ্টা করছি।
গোটা রাজ্যে, গোটা দেশে এই করোনা যুদ্ধে শামিল হয়েছেন বহু মানুষ। এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও তারা বুক চিতিয়ে লড়াই করছেন। শুধু সরকারের পক্ষে সবকিছু যে করা সম্ভব নয় তা এইসব মানুষেরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন বারেবারে। কুর্নিশ এইসব সৈনিকদের কুর্নিশ এইসব সৈনিকদের।