মিজান রহমান, ঢাকা: করোনা প্রতিরোধে আগামী ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ছুটি এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা ১০ দিন ছুটি পেয়েছেন সরকারি–বেসরকারি চাকরিজীবীরা। এ সময় ঘরে কিংবা যে যেখানে আছেন, সেখানে থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে করোনা সংক্রমণ না ছড়ায়। একই সঙ্গে দেশের দোকানপাট, সব শপিংমল–বিপণিবিতান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে জনসমাগম, অনুষ্ঠান, এমনকি একসঙ্গে দু–তিনজন লোক যেন জড়ো না হয় সেজন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। দেশব্যাপী এত সতর্কতার মাঝেও করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ঘরে ফিরল লাখো মানুষ। দ্বিতীয় দিনের মতো বুধবার (২৫ মার্চ) দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া–কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে উপচেপড়া ভিড় লেগেছে ঘরমুখী মানুষের। সকাল থেকে এই নৌরুটে ছিল ঘরমুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। দেখে মনে হয়েছে ঈদের ছুটিতে ঘরে ফিরছে মানুষ। বার বার বাধা দিয়েও ঘাট থেকে কাউকে সরাতে পারেনি পুলিশ।
ঘরে ফেরা মানুষের স্রোতে ভেসে গেল করোনা প্রতিরোধে পুলিশের নেয়া পদক্ষেপ। যাত্রীদের ঠেকাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছে পুলিশ। সব বাধা উপেক্ষা করে করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ঢাকা ছাড়ল দুই লাখ মানুষ। ২৪ মার্চ গত মঙ্গলবার সকাল থেকে শিমুলিয়া–কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ঘরমুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড় লেগে যায়। প্রথম দিন প্রায় এক লাখ মানুষ ঘরে ফিরেছে। দ্বিতীয় দিন প্রায় এক লাখ মানুষ ঘরে ফিরেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত শিমুলিয়া–কাঁঠালবাড়ি নৌরুট দিয়ে দুই লক্ষাধিক মানুষ পারাপার হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন লৌহজং থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসাইন। ওসি আলমগীর হোসাইন বলেন, মঙ্গলবার ভোর থেকে ঘাটে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকলে দুপুর পর্যন্ত লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরি দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হয়। পরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ফেরি দিয়ে রাত পর্যন্ত যাত্রী পারাপার করা হয়। এ সময় যাত্রী চাপ থাকায় অনেকেই ঘরে ফেরত যান। তবে কিছু যাত্রী ঘাট এলাকায় থেকে যান। বুধবার সকাল থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। এতে হিমশিম খেতে হয়েছে আমাদের। বাধা দিয়েও তাদের ঠেকানো যায়নি। দুপুরের পর থেকে যাত্রী চাপ কমতে থাকে। এখন ঘাট এলাকায় মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রয়েছে সাত শতাধিক; যা পার করা হবে। এর পাশাপাশি যাত্রীও পারাপার করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে নিম্নআয়ের মানুষ যদি শহরে জীবনযাপনে অক্ষম হয় তাহলে সরকার ঘরে ফেরা কর্মসূচির অধীনে নিজ গ্রাম বা ঘরে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেবেন। এমন সিদ্ধান্তের পরও ঈদের ছুটির মতো দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের বাড়ি ফেরার চিত্র করোনা আতঙ্ক বাড়িয়ে দিল। যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে যে যেখানে আছেন; সেখানেই থাকেন। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার দরকার নেই। এ অবস্থায় শিমুলিয়া ঘাটের জনস্রোত করোনা প্রতিরোধে সচেতনতাকে ম্লান করে দিল। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। কেউ কেউ এই জনস্রোতকে করোনা নিয়ে বাড়ি যাওয়ার মতো অবস্থা বলেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন পরিবারে করোনা ছড়াতে ঢাকা ছেড়েছে এসব মানুষ। এদিকে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার রাত থেকে এ পর্যন্ত হাজার হাজার যাত্রী জনপ্রতি ২০০–৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে ট্রলার করে পদ্মা পার হয়েছেন। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই বাড়ি ফিরেছেন তারা। শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের দুই লাখের অধিক মানুষ এই রুট দিয়ে পারাপার হয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে খোলা আকাশের নিচে অপেক্ষায় ছিলেন ৫০ হাজারের অধিক মানুষ। বুধবার যে যেভাবে পেরেছেন গন্তব্যে গেছেন। আমাদের কোনো নির্দেশনা মানেনি যাত্রীরা। কেউ করোনা নিয়ে ঘরে ফিরলে আমাদের করার কিছুই নেই। কারণ তাদের এখান থেকে ফেরত যেতে বলেছি, কেউ শোনেনি। বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের উপসহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আব্দুল আলীম বলেন, শিমুলিয়া ঘাটে গাড়ি ও যাত্রীদের চাপ অনেক। আমরা ১৪টি ফেরি চালু রেখেছি। যাত্রী পারাপার হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে পণ্যবাহী ট্রাক–কাভার্ডভ্যান পার করা হবে।