মাস্ক করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা করে না

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: কোনো মুখোশই করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারবে না। বরং এ ধরনের সংক্রামক রোগ থেকে নিরাপদ থাকার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো জীবাণুনাশক দিয়ে বারবার হাত ধোয়া। সেটি সেনিটাইজেশন জেল, স্প্রে বা লিকুইড সোপ যেকোনোটি হতে পারে। এমনটিই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে শনিবার প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তবে তিনি কীভাবে আক্রান্ত হলেন তা স্পষ্ট নয়। ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারীর মৃত্যুর এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর  যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সুরক্ষার প্রথম উপায় হিসেবে মাস্ক কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মানুষ। এরই মধ্যে মুখোশের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) বলছে, আমেরিকানদের মাস্ক পরতে হবে না। সুস্থ মানুষকে কোনো মাস্ক পরতে হবে না কারণ এটি তাকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করবে না।

তবে স্বাস্থ্যকর্মী যারা আক্রান্তকে সেবা দেবেন তাদের মাস্ক পরা জরুরি। এখন সাধারণ মানুষ যদি অকারণে মাস্ক কিনে ফেলেন তাহলে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বাজারে আর মাস্ক থাকবে না। সিডিসি বলছে, কভিড১৯সহ অন্য যেকোনো ধরনের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ সংক্রান্ত রোগ থেকে বাঁচতে মাস্ক কোনো কাজের জিনিস নয়। বরং সঠিকভাবে এটি ব্যবহার করতে না পারলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরো বাড়বে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।  যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবিক সেবা মন্ত্রী অ্যালেক্স অ্যাজার বলেন, মাস্ক যদি আপনার মুখে ঠিকমতো না লাগানো থাকে তাহলে আপনি আরো তালগোল পাকিয়ে ফেলতে পারেন। কারণ তখন আপনি বারবার  মাস্ক ঠিক করতে মুখে হাত দেবেন। মনে রাখবেন এ ধরনের জীবাণু আক্রান্ত হওয়ার প্রথম রাস্তা কিন্তু মুখ। আর বারবার অপরিচ্ছন্ন/জীবাণুযুক্ত হাত মুখে দেয়া মানে আরো বেশি ঝুঁকিতে পড়া।

তিনি আরো বলেন, তবে আপনার যদি কাশি হয় বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে আপনার মাস্ক পরা উচিত। তাতে আপনার আশেপাশের লোকদের অন্তত নিরাপদ থাকার সুযোগ তৈরি হয়। এ ব্যাপারে জোনস হনপিকনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের ড. স্ট্যানলি পেকোস বলেন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের জন্য দায়ী ভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক কতোটা কার্যকর সে ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো তথ্যউপাত্ত নেই। তবে এখন পর্যন্ত সংগৃহিত তথ্যউপাত্ত প্রমাণ করে যে, আপনার যদি আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে মাস্ক পরলে আপনার পাশের লোকদের এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি কমে। কারণ এ ধরনের রোগ ছড়ায় মূলত আক্রন্ত ব্যক্তির হাঁচি, কফ, থু থু এ ধরনের শ্বাসতন্ত্রের উপরের অংশ থেকে বেরিয়ে আসা বস্তু থেকে। কভিড১৯ মূলতআপার রেসপিরেটরিসংক্রমণই ঘটায়। এক্ষেত্রে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্কও অকার্যকর বলে উল্লেখ করেছেন পেকোস। তিনি বলেন, এন৯৫ রেসপিরেটরি মাস্ক যদি ঠিকঠাক লাগানো থাকে তাহলে জীবাণুবাহী বড় কোণা বিশিষ্ট কফ বা সর্দি আটকাতে পারে। কিন্তু এতে কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে ক্ষুদ্র কণার সঙ্গে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো সম্ভব নয়।

এন৯৫ টাইপের মাস্ক নির্দিষ্ট আকারের কোণা আটকাতে পারে। এন৯৯ মাস্ক ঠেকাতে পারে ৯৯ শতাংশ ক্ষুদ্র কোণা। কিন্তু এ ধরনের মাস্ক বেশি সময় পরে থাকা কষ্টকর। এতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাছাড়া রেসপিরেটরি মাস্ক খুব দামি। আর শিশুর এবং দাঁড়িযুক্ত মুখের জন্য এটি উপযুক্ত নয়। ড. পেকোস বলছেন, সংক্রমণ থেকে বাঁচতে শুধু মাস্কের ওপর ভরসা করা যাবে না। অনেকগুলো সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে এটি একটি হতে পারে। সুরক্ষিত থাকতে বারবার হাত ধুতে হবে, কাশ, থু থু ইত্যাদি শ্বাসতন্ত্রের তরল যাতে গায়ে না লাগে সে জন্য লোকজন থেকে অন্তত ৫ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা শ্রেয়। এটি সব ধরনের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের জন্য প্রযোজ্য। সর্দি জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত মানুষের কাছ থেকেও দূরত্ব বজায় রাখলে বিভিন্ন ফ্লু থেকে বাঁচা যায়। উল্লেখ্য, ফ্লু আক্রান্ত হয়ে এ মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে ১৬ হাজার মানুষ মারা গেছে। অসুস্থদের জন্য তো বটেই সুস্থ ব্যক্তিরাও মাস্ক ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই সেটি নিয়মিত পরিবর্তন করতে হবে। কারণ একটি ফেস মাস্কের নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। বেশিরভাগই মাস্কই মাত্র কয়েকঘণ্টা ব্যবহারের উপযোগী। এরপর সেটি ফেলে দিতে হয়। তাছাড়া এটি তো বাইরে থেকে ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে।

মোট কথা ভাইরাস থেকে বাঁচতে সুস্থ মানুষের মাস্ক পরার আদৌ প্রয়োজন নেই। করোনাভাইরাসের মতো সংক্রামক রোগের বিস্তার ঠেকাতে সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে ঘন ঘন হাত ধোয়া। কারণ মানুষ হাত দিয়ে এটা ওটা ধরে, স্পর্শ করে এবং বারবার মুখে নাকে হাত দেয়। ওই সব স্থানে ভাইরাস থাকলে সেটি হাতে লেগে যায় বা জীবাণুযুক্ত হাত লেগে গেলে এসব পথ দিয়েই আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাত ধুতে হবে বারবার এবং দুই হাতের কবজি পর্যন্ত ধুতে হবে। হাত ধোয়ার সময় আঙ্গুলের ডগায় সাবান লাগছে কিনা খেয়াল করুন। নাক মুখ ও বিভিন্ন জিনিস কিন্তু প্রথমে স্পর্শ করে হাতের এ অংশই। হ্যান্ড সেনিটাইজারের চেয়ে সাবান ও পানি বেশি কার্যকর। অ্যালকোহলযুক্ত জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে চাইলে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহন আছে এমনটিই ব্যবহার করা উচিত। অধোয়া হাতে নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করা যাবে না। বাধ্য না হলে অসুস্থ লোকের সংস্পর্শে যাওয়া ঠিক হবে না। কাশি বা হাঁচির সময় রুমাল বা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন। আশেপাশের ব্যবহৃত বস্তু বারবার জীবাণুমুক্ত করুন।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

রবীন্দ্র সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শনিবার রাতে যান চলাচল বন্ধ থাকবে

কলকাতা, ১৬ নভেম্বর ২০২৪:শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে আগামী শনিবার রাত থেকে রবীন্দ্র সেতু…

1 day ago

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব বিতরণের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে, তদন্তে সিট গঠন করল কলকাতা পুলিশ

‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের ট্যাব বিতরণের টাকা দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। বহু ছাত্রছাত্রীর ট্যাবের টাকা…

2 days ago

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল, বিজেপির বিক্ষোভে ধস্তাধস্তি

দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লক আজ উত্তাল আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। বিজেপির ডাকে…

2 days ago

বিহারের জামুইতে ভগবান বীরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জনজাতীয় গৌরব দিবসে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারের জামুই জেলায় জনজাতীয় গৌরব দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে…

2 days ago

২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে

মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আগামী ২০শে নভেম্বর একদফায় নির্বাচনের জন্য প্রচারাভিযান এখন তুঙ্গে। ঐ একই দিনে নান্দেথ…

3 days ago

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তা

পাহাড়ে সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আজ দার্জিলিং-এর চৌরাস্তায় ‘সরস মেলা’র উদ্বোধন করবেন ।আগামীকাল তিনি যাবেন…

3 days ago