গল্প || ভালোবাসার পরশ ছোঁয়া || অষ্টম পর্ব -লেখক এন.কে.মণ্ডল

গল্প || ভালোবাসার পরশ ছোঁয়া || -লেখক এন.কে.মণ্ডল

(অষ্টম পর্ব)

১৯
যাইহোক অনেক ঝামেলা এখন। ভোটাভুটির সময়। তবে সাদেক ও রমজানের দলের কাজ শেষ। মনে করছেন গ্রামের বিশিষ্টরা। তবে পুরনো দলগুলি ঝেড়ে ফেলে নতুনদের দেখায় ভালো। জোর তালে চলছে নির্বাচনের প্রচার। সাদেক, করিম ও রমজানের। তিন দলেরই প্রচার মারাত্মক। তাঁর সঙ্গে চলছে নাহিদ ও রিনার জটিল প্রেম। এখন যাওয়া আসা করতে করতে সব ঠিক হয়ে গেছে। রমজানের বিপক্ষে নাহিদের বাবা লড়লেও নাহিদকে যথেষ্ট ভালোবাসেন রমজান মাতব্বর। নাহিদ্দের দুই বিখা জমি ছিল সাদেকের এরিয়ার ভিতরে। সেটা গ্রাস করতে পারছে না সাদেক। কারণ দুজনেই এখন দুই মেরুর ব্যাক্তি। কে কাকে দেখে।আর কয়েকদিন আছে নির্বাচনের। এর মধ্যেই রমজান মাতব্বর নাহিদ্দের বাড়িতে প্রবেশ করলেন। কই রে করিম আছিস নাকি। রমজান মাতব্বরের ছোট করিম। প্রায় বছর সাতেক হবে ছোট। আবার প্রভাবশালী ব্যাক্তি গ্রামের। করিম ঘর থেকে বাইরে আসলো। এসেই দেখে রমজান মাতব্বর বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে বেতের লাঠি। সঙ্গে বিলাস।বিলাস হল রমজানের সেবক। তাঁর অনুদানও কম নয় কিন্তু। গ্রামকে অনেক বাঁচিয়েছে। অবশ্য রমজানের সহায়তা নিয়েই। কিন্তু সেকথা রমজান ও বিলাস ছাড়া কেউই জানে না।

রমজান মাতব্বরই নিষেধ করেছিল বিলাস কে। নাহিদের বাবা করিম বলল, বড়ভাইয়ের পায়ের ধুলো আমার বাড়িতে।আমার কি সৌভাগ্য। কই রে নাহিদ চেয়ার দে কর্তা মশাই কে। নাহিদ রিনার বাবা কে দেখে সালাম দেয়। এবং তাড়াতাড়ি একখানা চেয়ার এনে দেয়। নহিদ ঘরে চলে যায়। মায়ের কাছে। মাকে বলে যে রমজান চাচা এসেছেন। কফি বানাতে বলে গেলো মাকে। নাহিদের মা কফি বানাতে চলে গেলো। রান্নাঘরে। বুঝলি রে করিম, তোর এখন সময় ভালো তাই চলে এলাম।তোর বাড়ি বেড়াতে। এই নে মিষ্টির হাঁড়িটা ধর। বৌমা কে বল রাখতে। তাই বলে করিমের হাতে ধরিয়ে দেয় বিলাস। করিম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। বড়ভাই আমার বাড়িতে মিষ্টির হাঁড়ি কেন। কেন রে ভয় লাগছে। আমি কি আনতে পারি না। তা পারেন কিন্তু আপনি আমাদের কর্তা মশাই। আপনার জমিজমা আমরা ভাগ কন্ট্রাক করে খায়। আমাদের লজ্জা দেবেন না। নির্বাচনে পার্থী হয়ে সবার বিরুদ্ধে লড়তে যাওয়ার সময় একথাগুলি মনে ছিল। যে কাদের বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছি। শোনো ওসব কথা বাদ দাও। আমি তো খারাপ মানুষ সবাই মনে করে। কিন্তু এই ব্যাটা আমি ছাড়া কোনো কাজ সঠিক হয়েছে। রাজনীতি করতে গেলে সবাই খারাপ হয়ে যাবে। এটাই বাস্তব। রাজনীতিতে প্রথম নামছ পরে টের পাবে।

যাইহোক সে তোমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আমার বুথে অসুবিধে নেই। আমাকেই ভোট দেবে। কর্তা সে আমি জানি। ঠিক আছে আর কর্তা কর্তা করতে হবে না। এবার বিহায় বলতে হবে। কিভাবে কর্তা। আরে মুখপোড়া নাহিদের সঙ্গে রিনার বিয়ের সমন্ধ নিয়ে এসেছি রে। কোন রিনা কর্তা। আবার কর্তা। কেন বড়ভাই অথবা ভাই বেরাচ্ছে না। না তা না। শোন আমার মেয়ের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব। কি বলছেন আপনি। এটা সম্ভব না বড়ভাই। শোন সব সম্ভব। আমি বলে কি না সমাজপতি, আর আমার মুখের ওপর না বলা। আসলে তা না বড়ভাই। আপনারা মালিক মানুষ। আপনাদের সঙ্গে আমাদের চলে না। সেটা আমিও জানি। আমায় বোঝাতে হবে না। এসব কথা শোনে বিলাস। বিলাস তো ভিমরি খেয়ে পড়ার জোগাড়। হা করে আছে। রমজান মাতব্বর বলে, ওই হতচ্ছাড়া হা করে কেন। মুখ বন্দ কর। এমন সময় কফি নিয়ে আসলো নাহিদ। কফি দিয়েই চলে গেল। সে ঘরে থেকে সব শুনতেছিল। আর সে তো সব জানে। কি আর বলবে।

এই গ্রামে কারো স্ট্যাটাস থাক বা না থাক। কফি চা কিন্তু সবার বাড়িতে আছেই আছে। কারণ এখানে কফি চাষ হয়ে থাকে। কি বুঝছিস করিম। না মানে, আমি তো জানতাম না ওরা দুজন দুজনে ভালোবাসে। শোন করিম আমি খারাপ হতে পারি কিন্তু সেটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আমার ছেলে মেয়ে বিয়ে কাকে করবে সেটা তাদের ব্যাপার। আমি আমার ছেলে মেয়েকে যথাযথ ভালোবাসি। ওদের সুখের জন্য আমি শত্রুর সঙ্গেও সম্পর্ক করতে রাজি। ঠিক আছে উঠি রে করিম। আর একদিন আসব। নির্বাচন হয়ে যাক। নির্বাচনের পরে না হয় বিয়ের কথা হবে। মেয়ের আঠারো বছর পার হয়ে গেলো এবার। নাহিদেরও প্রায় একুশের কাছাকাছি। বিয়ে দিয়ে ওদের ব্যাবস্থা আমিই করে দেব। তুই চিন্তা করিস না। কোনো ভয় না। আমাকে যতটা খারাপ মনে করিস, আমি ততটা খারাপ নই রে। চলি রে। রমজান এই বলে কফির মগটা রেখে বাড়ির বাইরে চলে গেল। করিম নাহিদ ও নাহিদের মা কে ডাকে। কই গো নাহিদের মা এদিকে এসো। নাহিদও আসলো। জ্ঞি বা বল। মোড়ল মশাই যেটা বলে গেল, এটা কি ঠিক। হ্যাঁ আব্বা।

আমি রিনা কে ভালোবাসি। তোর কি মাথা খারাপ হয়েছিল। যে বড়লোকের মেয়ে কে ভালোবাসার জন্য। নাহিদ আর কোনো কথা বলে না। মাথা নিচু করে থাকে। দু একটা বকুনি খেয়ে ঘরের ভিতর চলে যায়। সমস্ত ব্যাপারটা নাহিদের মা অর্থাৎ করিমের স্ত্রীকে বলে। সবকিছু শুনে নাহিদের মা সুরমিলা বলে, তাহলে মাতব্বর সাহেবকে ভালোই বলতে হবে। এতো খুশির খবর। হ্যাঁ অবশ্য এটা ঠিক। তুমি কি রাজি নাহিদের আব্বা। রাজি হব না কেন, মাতব্বর সাহেব নিজে এসে যখন প্রস্তাব দিচ্ছে। নাহিদের মা বলে, মেয়েটিও খুব সুন্দর। হ্যাঁ শোনা যায় খুব বুদ্ধিমতী। শিক্ষিত। ঠিক আছে আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। মাতব্বর রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে এমন সময় বিলাস বলছে, আচ্ছা কর্তা একটা কথা বলব। বল। বলছি যে কর্তা আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন। মানে কি বলতে যাচ্ছিস তুই। মামনির সঙ্গে কোথায় ফকিরের ছেলের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব। তাও আবার নিজে। ছি: ছি: আমি মানতে পারছি না। সে তোকে মানতে হবে না। আমরা আর কদিন বেঁচে আছি। ওরা না হয় খুশিতেই থাক। আর ফকিরের ছেলে হলে তো কি হল। ছেলেটা তো ভালো। আর তাছাড়া আমার টাকা পয়সার তো অভাব নেই। আমার নিয়েই না হয় কিছু একটা করবে। ওসব নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না। তুই তোর কাজ করে যা।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

রিঙ্কু সিং: মাঠের কোণ থেকে তারকার যাত্রা

২০১৮ সালে কেকেআর দলে যখন রিঙ্কু সিং যোগ দিলেন, তাঁর জন্য ৮০ লক্ষ টাকা খরচ…

2 days ago

তাৎক্ষণিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস

পশ্চিম বাংলার একাধিক জেলায় ঝড়-বৃষ্টি আসন্ন 📍 কলকাতা, ১৭ মার্চ: পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।…

3 weeks ago

স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী

আজ, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, আমরা উদযাপন করছি স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি কেবল তাঁর…

3 months ago

কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম উপন্যাস “অতল জলে জলাঞ্জলি” প্রকাশিত।

১০ জানুয়ারি ২০২৫ এর বই মেলা উপলক্ষে বাজারে এসেছে কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম…

3 months ago

উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া আপডেট

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের আবহাওয়া রইবে বিশেষভাবে পরিবর্তনশীল। পার্বত্য অঞ্চল ও…

3 months ago

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের উপর কড়া নির্দেশ জারি

রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে কড়া নির্দেশিকা জারি করল…

3 months ago