মিজান রহমান, ঢাকা: বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকার দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ঢোল পেটালেও প্রকৃতপক্ষে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে। যা দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধে রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন তারা। ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট–উত্তরণের পথ’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাম জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীয় ফিরোজ। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নেতা আব্দুল্লাহেল কাফী রতনের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্ণর ইব্রাহিম খালেদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক এম এম আকাশ, ক্রেডিট রেটিং কম্পানি ক্রিসেলের প্রেসিডেন্ট মোজাফ্ফর আহমেদ এফসিএ, অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক ইকবার কবীর জাহিদ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা প্রমূখ। সভায় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ব্যাংক ব্যবসা এখন খুবই লাভজনক। তার চেয়ে বেশি লাভজনক হচ্ছে এমপিগিরি।
বাজার অর্থনীতি রাজনীতিকে বাজারনীতিতে পরিণত করেছে। অথচ সম্পদ পাচার থেকে দেশকে বাঁচাতে আমরা ’৭১ সালে অস্ত্র হাতে লড়াই করেছি। এখন ঐক্যবদ্ধভাবে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। সরকারের নীতির সমালোচনা করে খালেকুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানই এখন আর সাধারণ জনগেণের কল্যাণে কাজ করে না। আর রাষ্ট্র যখন জন্মকালীন ঘোষণার বিপরীতে চলে তখন তার টিকে থাকার যৌক্তিকতা হারায়। তাই বাংলাদেশ দেশটিকে রক্ষয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা পাল্টানো ছাড়া উপায় নেই। সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশ পরিচালনা করছে বলে দাবি করেন ইব্রাহীম খালেদ। তিনি বলেন, সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণায় ছিল সাম্য প্রতিষ্ঠার। কিন্তু মানুষের মধ্যে সৃষ্ট বৈষম্য সংবিধান বিরোধী। তিনি আরো বলেন, গড় আয় দিয়ে জনণের অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ধারণ করা একটা প্রতারণামূলক প্রক্রিয়া। এর মধ্য দিয়ে জনগণের বাস্তব অবস্থা আড়াল করা হয়। বাংলাদেশের করযোগ্য হিসেবে যাদের নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই ধনিরা কর দেয় না, কর দেয় গরিবেরা।
দেশের উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে ৫ ভাগ ধনীরা। তাই উন্নয়নের সুফল সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তা, লুটেরা ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই তিনের মেলবন্ধনেই খেলাপিঋণের নষ্ট সংস্কৃতির ভিত্তি রচনা করেছে। এখন দেশের উন্নয়নের নীতিই হচ্ছে লুটপাট। এখান থেকে লুটপাট করে, অর্থ–সম্পদ পাচার করে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে ভালো রেখেছে বলেই দেশের মন্ত্রীরা বিশ্বের এক নম্বর হচ্ছে। অ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, সরকার ঋণখোলাপিদের শাস্তি না দিয়ে কনশেসন দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। ফলে খেলাপি ঋণ না কমে ক্রমাগত বাড়ছে। এক অঙ্কের সুদের হারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমানতকারী। আর লুটেরা ধনী, ব্যাংক ডাকাত ও ঋণখেলাপিরা সুবিধা পাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। নতুন কর্মসূচি : আলোচনা শেষে সভাপতি ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধের দাবিতে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ওইদিন সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জমায়েত শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক অভিমুখে ঘেরাও মিছিল শুরু হবে।