মিজান রহমান, ঢাকা: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনের হুবেইয়ের ইচানে আটকে পড়া ১৭১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে এখনই দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য আসার কয়েক ঘণ্টা আগে এক ভিডিওবার্তায় এই শিক্ষার্থীদের দেশে পাঠানোর বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছিলেন চীনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত। ৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ওয়ার্ল্ড করফারেন্স সিরিজ–২০২০’ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চীনে আটক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে আপাতত দেশে আনা হচ্ছে না। যারা এখন আসতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য আমরা অনেক খরচ করেছি।
তারপরও সম্ভব হচ্ছে না। বিমানের ক্রুরা কেউ বাইরে যেতে পারছে না, বিমান কোথাও যেতে পারছে না। সিঙ্গাপুরে পর্যন্ত যেতে পারছে না।’ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে চীনের উহান শহর থেকে সম্প্রতি সরকারি খরচে ৩১২ জন শিক্ষার্থীকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে সেখানে রয়ে যায় আরও ১৭১ জন বাংলাদেশি। তারা দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে আসছেন। সকালে রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ–জামান ভিডিওবার্তায় জানান, রয়ে যাওয়া সেই ১৭১ শিক্ষার্থীকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে শহরটি অবরুদ্ধ রাখায় প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিন বলেও জানান তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চীনে যারা আছেন তাদের আনার জন্য একমাত্র চাইনিজ চাটার্ড ফ্লাইটে আনা সম্ভব হত। তাদের আনার জন্য চেষ্টা চালালে এক পর্যায়ে চীন রাজিও হয়েছিল। কিন্তু পরে তারা না করে দিয়েছে। আমরা তো কোনো ফ্লাইট পাঠাতে পারছি না, কোনো ক্রুও যেতে চাচ্ছে না।’ চীনে বাংলাদেশের দূতাবাসের ভূমিকা জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘আমাদের দূতাবাস ওদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ করছে।
৩৮৪ জনের একটা গ্রুপ সার্বক্ষণিক খোঁজ নিচ্ছে তাদের। তাদের খাওয়া–দাওয়া চাইনিজরা নিশ্চিত করছে।’ আটকে পড়া বাংলাদেশিরা খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে বলে যেকথা বলা হচ্ছে সেকথা সঠিক নয় উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘শহরটির যে ২৩টি জায়গায় বাংলাদেশিরা থাকে, সবগুলো জায়গায়ই খাবার, পানি সময়মতো পাঠিয়ে দিচ্ছে চীনারা।’ আটকে পড়াদের অনেকেই সরকারি খরচে দেশে ফিরতে চান উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চীনে যারা আছে তাদের মানসিকতা এমন– সরকার যদি ওদের পয়সা দিয়ে না আনে এদের ৮০ পারসেন্ট দেশে আসবে না। অনেকের মধ্যে এমন উৎসাহ আছে সরকার বিনা পয়সায় তাদের দেশে নিয়ে যাবে।’ চীনে থাকা নাগরিকদের আরও অন্তত কিছুদিন সেখানে থেকে তারপর দেশে ফেরার পরামর্শ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিদেশে থাকা ওই বাংলাদেশিদের অন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য, গেল ডিসেম্বরে হুবেইয়ের উহানে নিউমোনিয়া সদৃশ প্রাণ সংহারক নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। প্রথম দিকে চীন সরকার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও প্রাণহানির সংখ্যা বাড়তে বাড়াতে এরইমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে সাতশ। আর শুধু চীনেই সরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা ত্রিশ হাজারের বেশি বলে বলা হচ্ছে। চীন ছাড়াও বিশে^র আরও অন্তত দুই ডজন দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। এরমধ্যে অন্তত চারটি দেশে এই ভাইরাসে মৃত্যুর খবর এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।