২০২১- মেয়াদ শেষ হচ্ছে দ্বিতীয় পাঁচ বছরের। পাখির চোখ পরবর্তী আরও ৫ বছর। কিন্তু গলার কাঁটা হয়ে বিঁধছে ২০১৯- এর লোকসভা ভোটের ফলাফল। তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই এখন চওড়া ব্যাট ধরেছেন। বিরোধী শিবিরকে আর কোন লুস বল দিতে চান না। একদিকে প্রশান্ত কিশোরের স্ট্র্যাটেজি, অন্যদিকে নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা – এই দুইয়ের মিশেলে বাজিমাত করতে চান ২০২১- এর বিধানসভা নির্বাচনে।
রাজ্য তথা দেশের বর্তমান রাজনীতি এখন এনআরসি, এনপিআর, সিএএ নিয়ে ব্যস্ত। দেশের শাসক কিংবা বিরোধী সকলেই এই ইস্যু গুলিকে নিয়েই তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা জারি রেখেছে। কেউ পক্ষে কেউ বিপক্ষে – চলছে দেশজোড়া প্রচার। ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এইসব ইস্যুগুলোকে হাতিয়ার করে বিজেপি বিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে মমতার টিম। এরাজের বাম-কংগ্রেসও বিজেপি বিরোধী আন্দোলনে মমতার পিছনে পিছনে হাঁটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার অন্যদিকে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে এই ইস্যুগুলির সমর্থনে জনমত তৈরীর চেষ্টায় সচেষ্ট। অর্থাৎ এক কথায় এই সাম্প্রতিক ইস্যু গুলির মধ্যেই মজে রয়েছে সব দল।
কিছুটা ব্যতিক্রমী তৃণমূল। শুধু আন্দোলনের ধারাবাহিকতার উপর ভরসা নয়, ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে নিজেদের সংগঠন সাজাতেও তৎপর। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের বক্তব্য, জনমত তৈরিতে এবং নিজেদের দিকে টানতে যেমন আন্দোলনের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন পাশাপাশি জনমতের সমর্থনকে ভোট বাক্স পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য সংগঠন খুব জরুরী। আর সে কথা বোঝেন বিচক্ষণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শও নেওয়া হচ্ছে তেমনটাই খবর তৃণমূল সূত্রের। লড়াকু মনোভাব, পরিশ্রমী, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে এমন নেতাদের দলের বিভিন্ন শাখার সামনের সারিতে নিয়ে আসার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। আর তার যাত্রা শুরু হতে চলেছে ছাত্র শাখা দিয়ে। ছাত্র সংগঠনের বড়সড় রদবদল আনা হতে চলেছে বলেই খবর পাওয়া যাচ্ছে। ধাপে ধাপে দলের অন্যান্য শাখা সংগঠন গুলিতেও পরিবর্তন আনার পথে হাঁটবে তৃণমূল।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদে রদবদলের সম্ভাবনা। কালীঘাটে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির বৈঠকে একাধিক নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। তৃণমূলের একটি বিশেষ সূত্রে খবর, সভাপতির দৌড়ে রয়েছে তৃণমূলের সর্বকনিষ্ঠ দুই মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য এবং প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন ছাত্র সুদীপ রাহা। রয়েছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্র সুপ্রিয় চন্দও। পাশাপাশি, শোনা যাচ্ছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বর্তমান সহ সভাপতি তথা বহুদিনের ছাত্রনেতা গৌতম ভট্টাচার্য এর নাম। যদিও সূত্র বলছে, সুব্রত বক্সি ঘনিষ্ঠ গৌতম দীর্ঘদিন ধরেই এই দৌড়ে রয়েছে। বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের তালিকায় সে শীর্ষে। কিন্তু, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দ দেবাংশু, সুদীপ এবং সুপ্রিয়। সে ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি পদে কার নামে শীলমোহর পড়ে তা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব ছাত্র নেতারা যথেষ্ট সক্রিয়। সুবক্তাও।
তৃণমূল কংগ্রেস সেইসব মুখই এখন সামনে আনতে চাইছে যাদের জনভিত্তি রয়েছে। পুরভোটের আগে সাংগঠনিক পরিবর্তনগুলি সেরে নিতে চাইছে তৃণমূল এমনটাই জানা যাচ্ছে। অর্থাৎ আগামী এক বছর এই সাজানো সংগঠনকে সামনে রেখেই রাজনৈতিক ময়দানে থাকতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূলের এই কৌশল বিরোধীদের কতটা ঘায়েল করে সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।