রাজ্যসভার পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি আসনে নির্বাচন হবে চলতি বছরেই। তৃণমূল কংগ্রেসের চার জন এবং সিপিএমের একজন সংসদের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। যাদের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে তাদের মধ্যে আছেন সিপিএমের সাংসদ বর্তমানে দল থেকে বহিষ্কৃত ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের যে ৪ সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে তারা হলেন মণীশ গুপ্ত, যোগেন চৌধুরী, আহমেদ হাসান ইমরান এবং কেডি সিং। তৃণমূলের অন্দরমহল সূত্রের খবর, একমাত্র মণীশ গুপ্ত বাদ দিলে বাকি তিনজনের কেউই এবার দলীয় টিকিট পাচ্ছেন না।
অবশ্য বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী আগেই দলকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি আর প্রার্থী হতে চান না। নারোদা কাণ্ডের পর কেডি সিংয়ের উপর বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। পাশাপাশি দলের কোনো কর্মসূচিতে কেডি সিং কে আর দেখা যায় না। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন যেদিন সংসদে পাস হয় সেদিন দলের হুইপ অমান্য করে তিনি সংসদে গরহাজির ছিলেন বলে অভিযোগ। ফলে কেডি সিংয়ের আর নতুন করে রাজ্যসভায় যাওয়া যে হচ্ছে না তা একপ্রকার নিশ্চিত। কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমেদ হাসান ইমরান। মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসে থাকাকালীন ইমরান সাহেবকে প্রার্থী করেছিলেন। এবার তাঁর টিকিট পাওয়া অনিশ্চিত। বিধানসভায় তৃণমূলের যে সংখ্যক বিধায়ক রয়েছেন সেই নিরিখে এবারও চার জন প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে সক্ষম হবে তৃণমূল। অন্যদিকে সিপিএমের একার পক্ষে তাদের প্রার্থীকে জেতানোর সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সিপিএম তাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে সক্ষম হবে।
তৃণমূল অন্দরের খবর, এই ৪ আসনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই তালিকায় যথেষ্ট চমক আছে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে। এদিকে রাজ্যসভায় তৃণমূল দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন না’কি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, ‘ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ভালো বক্তা। ওকে প্রার্থী করলে দলের লাভ হবে’৷ ঋতব্রত-র সাংসদ পদের মেয়াদও শেষ হচ্ছে একইসঙ্গে ৷ সিপিএম প্রার্থী হিসেবে ঋতব্রত রাজ্যসভায় গেলেও পরবর্তীকালে শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে
দল তাঁকে বহিষ্কার করে৷ দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও রাজ্যসভার পদ থেকে ইস্তফা দেননি ঋতব্রত৷ ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন ডেরেকের৷ তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডেরেকের পছন্দকে মান্যতা দেবেন কিনা যখন প্রার্থী ঘোষণা হবে তখনই স্পষ্ট হবে।
ডেরেক চাইলেও ঋতব্রত প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে দু’টি ভিডিও অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। প্রথম ভিডিওটি দিল্লিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের উপর হামলার ঘটনা। যেখানে দেখা যায় দলবল নিয়ে ঋতব্রত নিজেই অমিত-নিগ্রহের নেতৃত্ব দেন৷ তখন তিনি সিপিএমের দাপুটে ছাত্র নেতা। আর দ্বিতীয় ভিডিওটি প্রায় সবার দেখা, ঋতব্রত’র সেক্সভিডিও।
ঋতব্রত ডেরেকের ঘনিষ্ঠ হলেও তৃণমূলের অন্যান্য সাংসদ কিংবা নেতা-মন্ত্রীদের খুব একটা পছন্দ নেই বলেই খবর। তৃণমূলের অন্দরমহল সূত্রের খবর, এবার যে চারজনকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যসভায় পাঠাবেন তার মধ্যে দুজন রাজ্য মন্ত্রিসভার বর্ষিয়ান সদস্য থাকার সম্ভাবনা প্রবল। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে রাজ্যসভায় সাংসদ করে পাঠানো হতে পারে বলে নাম শোনা যাচ্ছে। মণীশ গুপ্তকে ফের রাজ্য মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনার ইচ্ছে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী। আগামী বছরের বিধানসভা ভোটে কলকাতার কোন একটি কেন্দ্র থেকে মণীশ গুপ্তকে প্রার্থী করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে এক বছরের জন্য তাকে রাজ্যসভায় নাও পাঠাতে পারে তৃণমূল।
আবার এমনটা হতে পারে পরবর্তীতে বিধানসভায় নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করে ফিরে আসতে পারেন। যা কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হোক না কেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে তেমন আর আগ্রহ নিয়ে রাজ্যসভায় পাঠানোর। পুরোদস্তুর রাজনীতিককেই রাজ্যসভায় পাঠিয়ে দলের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করাই লক্ষ্য তৃণমূলের। গত লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন দলের এমন প্রাক্তন সাংসদের কয়েকজনের নাম নিয়েও আলোচনা চলছে। শেষ পর্যন্ত কাদের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে সে দিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।