ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা ভুগছেন চর্ম ও যৌনবাহিত নানান রোগে। এর মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে এইডস রোগীর সংখ্যা। এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয়দের মধ্যেও। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস রোগীর সংখ্যা ৮৫ জন হলেও বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩১৯ জনে। সম্প্রতি গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা আসার মাসখানেক পরে পরীক্ষায় ৮৫ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া যায়। পরের বছর আগস্টে সেটি গিয়ে দাঁড়ায় ২৭৩ জনে। আর ২০১৯ সালের ৮ই মার্চে তা বেড়ে গিয়ে ৩১৯ জনে উন্নীত হয়। এর মধ্যে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৭৭ জন। আর এই এইডস রোগে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুসারে, গত দুই মাসে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে ৩৫০ রোহিঙ্গার শরীরে। শতাধিক স্থানীয়দের শরীরে মিলেছে এই রোগের জীবাণু। সরেজমিনে, কুতুপালং এলাকার হোপ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত এক নারী জানান, তিনি মিয়ানমারে ভান্তেদের নির্যাতনের শিকার। এই রোগের কথা আগে জানতেন না।
এক নারী এনজিও কর্মীর সহযোগিতায় তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই রোগের কারণে রীতিমতো একঘরে হয়ে পড়েছেন তিনি। কেউ তার সঙ্গে থাকতে চায় না। একসঙ্গে খেতে চায় না। তার পরিবারের লোকজন পর্যন্ত কথা বলেন না ঠিকমতো। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচআইভি আক্রান্ত আরেকজন পুরুষ জানান, তিনি মালয়েশিয়াতে ছিলেন। সেখান থেকে নিয়ে এসেছেন এই রোগ। হোপ হাসপাতালের চিকিৎসক রেবেকা জাহান বলেন, ক্যাম্পে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ যৌন জীবনে কোনো ধরণের নিয়ম মেনে না চলা। রোহিঙ্গাদের কবিরাজি ওষুধ ও ঝাড়ফুকের ওপর প্রবল বিশ্বাস। ক্যাম্প এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে কলেরা রোগীর সংখ্যা। এই রোগ ছড়ানোর প্রধান কারণ অসচেতনতা।
বিভিন্ন দাতা সংস্থা পানির ট্যাংক দিলেও সুপেয় পানি পানে তাদের অনীহা রয়েছে। উখিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রমজান কুমার জানান, এইডস রোগটি রোহিঙ্গাদের থেকে ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রাও এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যেকোনো রোগকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবদুল মতিন বলেন, রোহিঙ্গারা অধিকাংশই অশিক্ষিত। তারা ভালো পরামর্শ গ্রহণ করতে চায় না। এইডস মোকাবিলায় আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দুটি ইউনিট সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। অবস্থা উদ্বেগজনক না হলেও তাদের অসচেতনায় রোগ ছড়াচ্ছে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে কলেরার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের ৪ লাখ ৯২ হাজার জনগণ ও দেড় লাখ রোহিঙ্গা শিশুকে এই টিকা দেওয়া হয়েছে।