বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের অস্থিরতা কাটছেই না


বৃহস্পতিবার,১৬/০১/২০২০
644

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: ভয়াবহ দরপতনের কবলে পড়ে দেশের শেয়ারবাজারে মূল্য সূচকের উল্টো যাত্রা শুরু হয়েছে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ‘ডিএসই-৩০’ এবং ইসলামি শরিয়াহ্ ভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ‘ডিএসই শরিয়াহ্’ সূচকের পর ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার বড় দরপতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ‘ডিএসইএক্স’ও শুরুর অবস্থানের চেয়ে নিচে নেমে গেছে। শেয়ারবাজারে এমন ভয়াবহ দরপতনের কবলে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাড়ছে অস্থিরতা, ক্ষোভ। পুঁজি হারিয়ে বিক্ষুব্ধ একদল বিনিয়োগকারী দরপতনের প্রতিবাদে মতিঝিলের রাস্তায় বিক্ষোভ করেন। এদিকে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন হলেও তার কোনো যুক্তিসংগত কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বিশ্লেষকরা। পতনের প্রবণতা দেখে অনেকেই বিস্মিত হচ্ছেন।

তবে তারা মনে করছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট আর সুশাসনের অভাবে শেয়ারবাজারে এই দুরবস্থা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারে যে বড় দরপতন হচ্ছে এর কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। বিনিয়োগকারীরা হুজগে শেয়ার বিক্রি করছেন। অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম এখন অনেক নিচে নেমে গেছে। শেয়ারবাজারের এই দুরবস্থার কারণ হিসেবে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা বলেন, যেটা ঘটার কথা না সেটাই ঘটছে। বিনিয়োগকারীরা বিমুখ হয়ে গেছেন। বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই। আস্থা ফেরানোর জন্য কোনো চেষ্টা চলছে কি না, কে জানে। আর চললেও তা কাজে আসছে না। সার্বিক বাজারের আচরণ এখন অস্বাভাবিক। সরকার চাইলে বাজারে টাকার ব্যবস্থা করতে পারে, কিন্তু করে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড পাবলিক পলিসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, বাজারের ওপর অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।

বিনিয়োগকারীরা এত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে যে তারা আর কোনো ভরসা পাচ্ছেন না। সর্বশেষ ডিএসইর এমডি নিয়োগ নিয়ে বোর্ড সভায় যে ঘটনা ঘটছে তাও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এটা অশনি সংকেত। কেন যেন বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, ডিএসই প্রতিযোগিতা করে দুঃশাসন নিয়ে আসছে বিনিয়োগকারীদের জন্য। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এদিন ডিএসইতে মাত্র ৩২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে কমেছে ২৯৩টির। আর ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮৭ পয়েন্ট কমে চার হাজার ৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের দিন এ সূচকটি কমে ৮৮ পয়েন্ট। এর আগে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমে ২৬১ পয়েন্ট। এতে শেষ ৮ কার্যদিবসে সূচকটি কমল ৪১১ পয়েন্ট। এমন পতনের কবলে পড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচকটি শুরুরও নিচে নেমে গেল। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক হিসেবে ডিএসইএক্স চার হাজার ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি। এ হিসেবে শুরুর অবস্থান থেকে সূচকটি এখন ১৯ পয়েন্ট কম রয়েছে।

অবশ্য প্রধান মূল্য সূচকের থেকেও করুণ দশা বিরাজ করছে ডিএসইর অপর সূচকগুলোর। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ অনেক আগেই শুরুর নিচে নেমে গেছে। এক হাজার ৪৬০ পয়েন্ট নিয়ে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়া সূচকটি এখন এক হাজার ৩৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার এ সূচকটি কমেছে ২৬ পয়েন্ট। ডিএসইর আরেক সূচক ‘ডিএসই শরিয়াহ্’। ইসলামি শরিয়াহ্ ভিত্তিক পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি এ সূচকটি যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এ সূচকটি ছিল ৯৪১ পয়েন্টে। মঙ্গলবার লেনদেন শেষে সূচকটি ২২ পয়েন্ট কমে ৯০৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিকে বৃহৎ বা বড় মূলধনের কোম্পানির জন্য চলতি বছরে ‘সিএনআই-ডিএসই সিলেক্ট ইনডেক্স (সিডিএসইটি)’ নামে নতুন সূচক চালু করেছে ডিএসই। বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকে অফিসিয়ালি ডিএসইর ওয়েবসাইটে সূচকটি উন্মুক্ত করা হয়। ৪০টি কোম্পানি নিয়ে শুরু হওয়া সূচকটির ভিত্তি ভ্যালু ধরা হয় ১০০০ পয়েন্ট। তবে এখন সূচকটি ৮১১ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সবকটি মূল্য সূচকের এমন উল্টোযাত্রায় প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। অনেক বিনিয়োগকারী দফায় দফায় দাম কমিয়েও কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। এতে দিন যত যাচ্ছে শেয়ারের দাম ততো কমছে, আর ভারী হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পালস্না। ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার ডিএসইতে ২৯৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে, তার মধ্যে ১৪৫টিরই দাম কমেছে ৩ শতাংশের ওপরে।

৫ শতাংশের ওপরে দাম হারিয়েছে ৫৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৬ শতাংশের ওপরে দাম কমেছে ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের। এমন দাম কমার পর অনেক বিনিয়োগকারী এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। জয়নাল নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘আমি যেসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছি প্রতিদিন তার দাম কমছে। দাম কমার পরও কিছু কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে পারছি না। একটি কোম্পানির শেয়ার ৮ শতাংশ দাম কমিয়েও বিক্রি করতে পারিনি। শুধু আমি একা নয়, অনেকের এখন এমন অবস্থা। ৮-৯ শতাংশ দাম কমিয়েও অনেক কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করা যাচ্ছে না।’ এদিকে শেয়ারের ক্রেতা সংকটে বাজারে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। গত বছরের ৫ ডিসেম্বরের পর ডিএসইর লেনদেন আর চারশ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করতে পারেনি। বাজারে লেনদেনের পরিমাণ দুইশ থেকে তিনশ কোটি টাকার ঘরে আটকে রয়েছে। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ২৬২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দুরবস্থায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারটির সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৭৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ২৯৫ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৪৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২১টির, কমেছে ২০৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট