টুসুতে মন্দা, তবুও রুজির টানে ৪০ বছর ধরে টুসু করছেন অনীল – অলকা

পশ্চিম মেদিনীপুর :- টুসু মন্দা। তবুও রুজির টানের দীর্ঘ ৪০ বৎসর ধরে টুসু বিক্রি করে চলেছেন অনীল আর অলকা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোয়ালতোড়ের মাইলিসাই এর বাসিন্দা ষাটোর্ধ অনীল চালক ও তার স্ত্রী অলকা চালক। হতদরিদ্র পরিবারে স্ত্রী আর তিন নাতনী কে নিয়ে সংসার অনীলের। ছোটো বেলা থেকেই মাটির কাজের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। সেজন্য ফাঁকা সময় পেলেই পুকুর পাড়ে মাটির ঢেলা নিয়ে প্রতিমা করতেন নিজের খেয়ালেই। এই জন্য মাঝে মাঝে মা বাবার বকুনিও খেতে হয়েছে। কিন্তু আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অনীলের সখ থাকলেও তা পুরণ করতে পারেন নি। বাবা মারা যাওয়ার পর বিয়ে করে সংসারের হাল ধরেন তিনি। পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রী। এরই মাঝে সরস্বতী, লক্ষী, বিশ্বকর্মা, টুসু ভাদু প্রভৃতি প্রতিমা গড়তেন টুকটাক।

স্ত্রী এক ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে কোনোরকমে সংসার চালিয়ে নিতেন। পরে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি পাকাপাকি ভাবে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু করেন বেশী রোজগারের আশায়। সেই সময় প্রতিমার দাম কম থাকলেও চাহিদা ছিল প্রচুর। ফলে লাভও হতো ভালো। পরে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে ছেলেরও বিয়ে দেন। ছেলের দুই মেয়ে হয়। কিন্তু বছর দশেক আগে ছেলে মারা যায় রোগে। তারও কিছুদিন পর পুত্রবধূ পরকিয়ার কারনে শ্বশুর শ্বাশুড়ি কে ছেড়ে অন্য একজনের সাথে পালিয়ে যায় নিজের নাবালিকা দুই মেয়েকেই ফেলে রেখে। তখন থেকেই ছেলের দুই মেয়ে আর মেয়ের এক মেয়েকে নিজেদের কাছে রেখেই মানুষ করে চলেছেন অনীল আর অলকা।

পৌষ সংক্রান্তীতে জঙ্গলমহলে টুসুর ব্যাপক চাহিদা ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তা যেন বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলছে। অনীল চালক জানান, আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে গোয়ালতোড়ের হাটে টুসু বিক্রি করছি। কিন্তু দু তিন বছর ধরে টুসুর চাহিদা যেন কমে যাচ্ছে। গত বছর প্রায় ১০০০ এর মত টুসু করে ছিলাম কিন্তু ২০০ র মতো টুসু রয়ে গিয়েছিল। এবার সেজন্য ছোটো বড়ো মিলিয়ে ৭০০ র মতো টুসু করেছি। অর্ধেক বিক্রি হয়ে আর অর্ধেক এখনো বিক্রি হয়নি।

কি কারনে টুসুর এমন মন্দা তা তারাও জানেন না। তবে বাজারে অন্যান্য জিনিসের মতো টুসুর দাম কিন্তু সেভাবে বাড়েনি৷ ২০, ৩০, ৫০, ১০০ টাকা মুল্যের টুসুও বিক্রি হচ্ছে না। অনীলের স্ত্রী অলকা জানান, শ্বশুর বাড়িতে আসার পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে টুসু গড়ার কাজ আরম্ভ করেছি। এই টুসু বিক্রি করেই দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। তাই সেই টুসু গড়ার কাজ এখনো বন্ধ করিনি। জানি টুসুতে মন্দা চলছে তবুও রুজীর টানে এই ব্যাবসা করে চলেছি। শুনেছি প্রশাসনিক ভাবে এখন টুসু নিয়ে নানান কর্মশাল হচ্ছে। টুসু পুজো নিয়ে মানুষ কে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। তাই হয়তো বা আবার কোনোদিন টুসুর বাজার ফিরবে।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

শহরের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা

সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, সৌদি আরব সহ বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ পাকিস্তানের অন্তত ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন…

21 hours ago

৭১ হাজারেরও বেশি প্রাপকের হাতে চাকরীর নিয়োগ প

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ৭১ হাজারেরও বেশি প্রাপকের হাতে চাকরীর নিয়োগ পত্র…

21 hours ago

ডিসেম্বরে ভারতীয় পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ২৬ হাজার কোটি টাকার লগ্নি

ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় পুঁজিবাজার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের (এফপিআই) কাছ থেকে ব্যাপক লগ্নি লাভ করেছে। পুঁজিবাজারে জমা…

21 hours ago

আইএসএল: কেরালা ব্লাস্টার্সের দাপুটে জয়, মহামেডান স্পোর্টিং বিপাকে

কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে গতকাল আইএসএল ফুটবলে কেরালা ব্লাস্টার্স এক দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ৩-০ গোলে মহামেডান…

21 hours ago

৩৭তম বিষ্ণুপুর মেলা: মল্লভূমের ঐতিহ্যের উন্মোচন

বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর আজ থেকে হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যের এক নতুন উজ্জ্বল মঞ্চ। সূচনা হয়েছে ৩৭তম বিষ্ণুপুর…

21 hours ago

প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী ও গুরু পৌষালী মুখোপাধ্যায় প্রয়াত

প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী ও গুরু পৌষালী মুখোপাধ্যায় প্রয়াত। শনিবার কলকাতায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস…

21 hours ago