ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: জাপানের ওসাকা শহরের মতো ঢাকায় পাতাল রেলপথ নির্মাণ করা হবে। ২০ থেকে ২৫ মিটার মাটির নিচে এ রেলপথ হবে। পুরো ঢাকা শহরে ২৩৮ কিলোমিটার পাতাল রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার। প্রথমে ঢাকা শহরে পাতাল রেলপথ (সাবওয়ে) নির্মাণের লক্ষ্যে চারটি রুট চিহ্নিত করেছিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন এর বেশি পাতাল রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। ২২৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সমীক্ষা করার কথা থাকলেও তা বেড়ে ৩২২ কোটি টাকা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে এ সমীক্ষা ২০২০ সালের এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন সমীক্ষা প্রকল্পের মেয়াদ হচ্ছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় পাতাল রেলের অবস্থান, এলাইনমেন্ট ও দৈর্ঘ্য নির্ধারণ, জিওটেকনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন ও ট্রাফিক সার্ভে পরিচালনার নকশা পরিবর্তনও করা হয়েছে। প্রাথমিক নকশা, ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা ও আর্থিক বিশ্লেষণ করা হবে।
এর পরেই বিশাল ব্যয়ের মেগা প্রকল্পটি গ্রহণ করবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, যা বাস্তবায়ন করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে অথবা জিটুজি ভিত্তিতে মূল পাতাল রেল নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় মেটানোর পরিকল্পনা করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র থেকে জানা যায়, ঢাকার যানজট নিরসনে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেল স্টেশন এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি (মাস র্যাপিড ট্রানজিট ) লাইন-১ নির্মাণ করা হবে। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল পথে এমআরটি-৬ নির্মিত হচ্ছে। এই দুটি মেট্রোরেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ঢাকা শহরে পাতাল রেলের পূর্ণ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা শহরে পাতাল রেলপথ (সাবওয়ে) নির্মাণের জন্য চারটি রুট চিহ্নিত করেছিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রথম রুটের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ৩২ কিলোমিটার। এ রুট টঙ্গী-কাকলী-মহাখালী–মগবাজার-পল্টন-শাপলা চত্বর-সায়েদাবাদ হয়ে নারায়ণগঞ্জের বোর্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। দ্বিতীয় রুটের দৈর্ঘ্য ছিল ১৬ কিলোমিটার। এটি আমিনবাজার-গাবতলী-আসাদগেট-নিউমার্কেট-টিএসসি-ইত্তেফাক মোড় হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত। তৃতীয় রুটটি গাবতলী-মিরপুর ১-মিরপুর ১০, কাকলী-গুলশান ২-নতুন বাজার-রামপুরা টিভি স্টেশন-খিলক্ষেত-শাপলা চত্বর-জগন্নাথ হল হয়ে কেরাণীগঞ্জ পর্যন্ত যাওয়ার কথা। চতুর্থ রুটটি রামপুরা টিভি স্টেশন-নিকেতন-তেজগাঁও-সোনারগাঁও-পান্থপথ-ধানমণ্ডি ২৭-রায়েরবাজার-জিগাতলা-আজিমপুর-লালবাগ হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার কথা ছিল। এসব নকশা বাতিল করে নতুন নকশায় হবে পাতাল রেলের সমীক্ষা। নতুন সমীক্ষা রুটের নকশার রূপরেখা দেয়া হয়েছে।
টঙ্গী জংশন হয়ে গুলশান-মালিবাগ-সদরঘাটে একটি পাতাল রেল রুট নির্মাণ করা হবে। এই রুটের দৈর্ঘ্য হবে ২৬ দশমিক ২৯ কিলোমিটার, মোট স্টেশন থাকবে ২৪টি। গাবতলী-মিরপুর-বসুন্ধরা হয়ে পূর্বাচলে ১৭ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাতাল রেল নির্মাণ হবে। এই রুটে ১৫টি স্টেশন থাকবে। বসিলা-মহাখালী হয়ে কায়েতপাড়া রুটে ১৬ দশমিক ১৭ কিলোমিটার রুটের পাতাল রেলপথ নির্মাণ হবে। এই রুটে থাকে ১৫টি স্টেশন। হাজারীবাগ-রাজারবাগ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। এই রুটে ১২টি স্টেশন নির্মিত হবে। কামরাঙ্গিরচর থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার পাতাল রেলপথ নির্মিত হবে। এই রুটে ১২টি স্টেশন থাকবে। বসিলা-মালিবাগা রুটের দৈর্ঘ্য হবে ১৪ কিলোমিটার, স্টেশন থাকবে ১৩টি। গাবতলী-হাজারীবাগ থেকে শ্মশানঘাট রোড পর্যন্ত সাড়ে ১৪ কিলোমিটার পাতাল রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এই রুটে ১৩টি স্টেশন থাকবে।
গাবতলী-বাড্ডা হয়ে পূর্বাচল পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৭৬ কিলোমিটারের একটি পাতাল রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এই রুটে ১২টি স্টেশন থাকবে। টঙ্গী জংশন-মহাখালী-গুলশান হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পাতাল রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এই বিশাল রুটে ২৬টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। টঙ্গী জংশন-মহাখালী-মালিবাগ হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ পাতাল রেল নির্মিত হবে। এই রুটে ২৪টি স্টেশন থাকবে। টঙ্গী জংশন-গুলশান-গুলিস্তান হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাতাল রেলপথ নির্মিত হবে। এই রুটে ২৬টি স্টেশন হবে। কেরানীগঞ্জ-সায়দাবাদ হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাতাল রেলপথ হবে। এই রুটে থাকবে ১৮টি স্টেশন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-মাতুয়াইল-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাতাল রেলপথ হবে। এই রুটে থাকবে ৯টি স্টেশন। আরো কিছু রুট নির্দিষ্ট করতে নকশা করা হচ্ছে। জে ও টি নামে দুটি রুট ঠিক করা হয়েছে। তবে এই রুটের এলাকায় এখনো ঠিক করা হয়নি।