বাংলাদেশে কিডনি দান করা যাবে, কেনাবেচা নয়

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: মানবিক বিবেচনায় ও সহানুভূতিশীল যে কেউ অন্যদের কিডনি দিতে পারবেন। তবে মাদকাসক্ত ও কিডনি কেনাবেচা করেন- এমন ব্যক্তিদের কিডনি নেয়া যাবে না। ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯’ এর ২ (গ), ৩ ও ৬ ধারা কেন সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) এ রায় ঘোষণা করা হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে ৫ ডিসেম্বর রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খোন্দকার নীলিমা ইয়াসমিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুদ্দিন খালেদ। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯’ এর ২গ, ৩ ও ৬ ধারা কেন সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ফাতেমা জোহরা নামে এক নারী ২০১৫ সালে তার মেয়ে ফাহমিদাকে একটি কিডনি দান করেন। তা সত্ত্বেও মেয়ের কিডনি অকেজো হয়ে যায়।

এরপর কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য দাতা পেলেও আইনগত বাধায় মেয়েকে কিডনি দিতে না পেরে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। চলতি বছরের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত জানতে চান। আদেশের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রো-ভিসি ও বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। অন্য ছয় সদস্য হলেন- কিডনি ফাউন্ডেশনের চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. হারুন-উর-রশিদ, বিএসএমএমইউর নেপ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আসিয়া খানম, বিএসএমএমইউর ইউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম খুরশিদুল আলম, বারডেম হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মির্জা এম এইচ ফয়সাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম এবং জাতীয় কিডনি ডিজিজেস ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নুরুল হুদা। ৭ নভেম্বর কিডনি প্রতিস্থাপন বিষয়ে সাত সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কমিটি আদালতে তাদের মতামত দেন। মতামতে তারা বলেন, আত্মীয় নয় এমন কারও কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন নেই। আইনের বাইরে অন্য কারও কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ তৈরি হলে দেশের দরিদ্র মানুষের জীবন সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

ধনীরা বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার শুরু করবে। এতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচারের মাত্রা বাড়বে। তবে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন বিষয়ে বিদ্যমান আইন সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এ আইনে নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য কারও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের সুযোগ রাখা হয়নি। তাই একজন সুস্থ মানুষ চাইলে অন্য কাউকে তার অঙ্গদান করতে পারবেন- এমন আইন থাকা উচিত।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন দোহাল

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোহাল আজ বেজিংয়ে, ভারত- চায়না বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় অংশ নেবেন।…

5 days ago

ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন

আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভারতীয় নাগরিকরা শ্রীলঙ্কায় বিনা শুল্কে ভিসা পাবেন। ৩৯ টি দেশের…

5 days ago

তারা আর কোনো চাকরির পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সী’- NTA, আগামী বছর থেকে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা…

5 days ago

গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।…

5 days ago

‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি :সুকান্ত

রাজ্য সরকারের উদাসীনতার কারণে ন্যাশনাল ‘ব্যাম্বু মিশন’ অভিযানের কাজ এই রাজ্যে এগোয়নি বলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা…

5 days ago

বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে নিবন্ধিকৃত হতে হবে

সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া SEBI জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেশ দিতে চাইলে…

5 days ago