৬:৪৫ মিনিটের একটা ফোন কল !
ফোনের এপারে হায়দ্রাবাদের ডাক্তার, ছাব্বিশ বছর বয়সি প্রিয়াঙ্কা রেড্ডি। ফোনের ওপারে, তার দিদি, ভাব্য।
ফোনের কথা কিছু এরকম :
– “স্কুটারের টায়ার পানকচার হয়েছে। আমি আর এগোতে পারছি না.. কয়েকজন অচেনা লোক এসেছে। আমার ভয় করছে”
– “তুই টোলের কাছে যা, ওখানে ওয়েট কর”
– ” না না, টোলে অতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা খুব অড”
– “তাহলে স্কুটার ওখানেই ছেড়ে দে। বাড়ি আয়”
প্রিয়াঙ্কা এরপর স্কুটার ওই অবস্থাতেই চালিয়ে বাড়ি যেতে চায়। কিন্তু ওখানে যে কয়েকজন লোক তার হেল্প করতে এসেছিল, তারা কিছুতেই যেতে দেয় না। প্রিয়াঙ্কাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়। প্রিয়াঙ্কা তখন গাড়ি ঠেলে সরিয়ে নিতে যেতে চাইলে, ওরা ওদেরই মধ্যে একজনকে বলে গাড়ি নিয়ে গিয়ে সাড়িয়ে নিয়ে আসতে।
প্রিয়াঙ্কা ফোন কলে দিদিকে এটাও বলে যে যারা তার হেল্প করতে এসেছে, তাদের ব্যাবহার দেখে তার বেশ ভয় লাগছে।
এর মধ্যেই, ফিরে আসে ওই ছেলে, বলে টায়ার সারানোর দোকান বন্ধ!
শেষ ফোন কলটা হয়েছিল রাত 9.22 মিনিটে। প্রিয়াঙ্কার ফোন 9.44 মিনিটে বন্ধ হয়ে যায়। সুইচড অফ্ বলে..
প্রিয়াঙ্কার দিদি ফোন বন্ধ শুনে তড়িঘড়ি টোল প্লাজার কাছে যান। গিয়ে বোনের কোনো চিহ্ন পাননি।
পরেরদিন, ডক্টর প্রিয়াঙ্কা রেড্ডির শরীর পাওয়া যায় হায়দ্রাবাদ বেঙ্গালুরু জাতীয় সড়কের ধারে।
পোড়ানো চামড়া, ধর্ষিত শরীর।
শোনা যাচ্ছে, তাঁর টায়ার সারানোর বাহানায় তাকে প্রথমে কিডন্যাপ করা হয়, নিয়ে যাওয়া হয় তন্দুপল্লি টোল প্লাজা এরিয়ার একটা জায়গায়, যেখানে পার্ক করা ট্রাকের মধ্যে, দুটো লড়ির মধ্যে তাঁকে রেপ করা হয়। গ্যাং রেপ।
তারপর তাঁর গায়ে আগুন লাগিয়ে মেরে ফেলা হয়..
দু হাজার উনিশ। আরও তিনবার পড়ুন.. দু হাজার উনিশ।
এই সময়ে এসেও, সুরক্ষা, শান্তি, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি নিয়ে এত বুলি কপচানোর পরেও, আমার দেশে এক মেয়েকে রাতে কি রকমের ভয় পেতে হলে সে শেষ ফোন কলে বাড়িতে জানায় সে সেফ নয়.. তার বাড়ির লোক আর কোনোদিন দেখতে পাবেনা তাকে। জ্যান্ত তার গায়ে আগুন লাগানো হলো, গ্যাং রেপ করা হলো।
প্রধান অভিযুক্ত, মহম্মদ পাশা ধরা পড়েছে। সে ট্রাক ড্রাইভার।
তার সাথী ছিলো আরও তিনজন। একজন সাফাইকর্মী, আর দুজন ট্রাক ক্লিনার।
কিন্তু কি হবে? মোমবাতি মিছিল, কালো ডিপি ইত্যাদির সময় পেরিয়ে গেছে। সরকার কবে স্ট্যান্ড নেবে রেপের মত একটা ক্রাইমের বিরুদ্ধে? আসিফারা চলে যায়। আমরাও ভুলে যাই..
সময় এসেছে, সরকারের এমন ব্যবস্থা নেওয়া যাতে এই ক্রাইম বন্ধ হয়। মেক এ স্টেটমেন্ট, ওয়ানস অ্যান্ড ফর অল!
আমরা আসলে যতদিন না কোনও বিপদ নিজেদের বাড়িতে আসছে, ততদিন তার ইনটেনসিটি বুঝিনা। কিন্তু দেশই তো সবথেকে বড়ো বাড়ি। এবং যে দেশের মেয়েদের বাড়ি থেকে বেরোলে আর ফেরার গ্যারান্টি থাকেনা, সেই দেশের অন্য কোনোকিছু নিয়েই গর্ব করা সাজেনা!
একজন ছেলে হয়ে বলছি, আমার ফ্রি ইন্টারনেট, বড়ো বড়ো স্ট্যাচু, ঝাঁ চকচকে রাস্তাঘাট ইত্যাদি চাই না। শুধু এটুকু ব্যবস্থা সরকার করুক , যেনো আমার মা, বোন, দিদি, স্ত্রী, মেয়ে বাড়ি থেকে বেরোলে যেনো সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফিরে আসতে পারে। এইটুকুই অনেক!
প্রিয়াঙ্কার ফোনটা এখনও সুইচ অফ্। কিন্তু আমাদের বিবেকের কি এখনো সুইচড অন করার সময় হয় নি????
সুইচ অন করার সময় এসেছে। গর্জে উঠুন। প্রিয়াঙ্কা আপনারও মেয়ে/বোন/বান্ধবী..
যতক্ষণ না প্রিয়াঙ্কার রেপিস্টরা ঝুলছে, ততক্ষণ যেনো মাথায় থাকে,
“অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে”
***সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংগৃহীত