সুবীর দাস: পুজো শেষ হয়ে গেলেও তার রেসটা যেন ছিলোই। তাই বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা বিনিময়ের সাথে সাথে কর্মব্যস্ততায় মুখ থুবড়ে পড়ার আগে ঘুরে আসলাম চাঁদপুর। দীঘার জনপ্লাবন এড়িয়ে যারা একটু নিরিবিলি অবসর খোঁজেন, তাদের জন্য বেস্ট ডেস্টিনেশন হতে পারে কলকাতার খুব কাছের এই চাঁদপুর।
অনেক আগে থেকেই আমরা ১২জন ঠিক করেছিলাম পুজো শেষ হলে একটা বিজয়া সম্মেলনী করবো কলকাতার কাছাকাছি কোথাও একটা এক রাত্রিরের জন্য। দীঘা মন্দারমনির মতো জনবহুল জায়গাগুলো আমার না পসন্দ ছিল প্রথম থেকেই। তাই নানা ট্রাভেল গ্রুপগুলো ফলো করে খোঁজ পেলাম চাঁদপুরের। বেশিকিছু না ভেবে চাঁদপুরের “হোটেল আল্পনার” নাম্বার জোগাড় করে সবাই মিলে এডভান্স দিয়ে হোটেল বুক করে ফেলেছিলাম। চাঁদপুরে যে কটা হোটেল আছে তারমধ্যে এইটা সবথেকে ভালো কারন ওই এলাকাতে এইটাই মনে হয় একমাত্র দ্বিতল হোটেল। হোটেলের দুই তলার বারান্দা থেকে কিংবা ছাদ থেকে পরিষ্কারভাবে সমুদ্র দেখা যায়। যারা সমুদ্র দেখতে ভালোবাসেন তাদের কাছে এইরকম একটা ভিউ দুর্লভ প্রাপ্তি। তাছাড়া হোটেলের প্রতিটি রুমের জানলা থেকেও সমুদ্র দেখা যায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে।
চাঁদপুর জায়গাটা ঠিক কোথায়?-ঃ তাজপুর এবং শংকরপুরের একদম মাঝামাঝি জায়গাটাই চাঁদপুর। শংকরপুরে বিশ্ববাংলা উদ্যান তৈরী হচ্ছে বলে রাস্তা এক কিলোমিটার মতো খুব খারাপ, যেটা খুব শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
কেন যাবেন?-ঃ অল্প খরচে কোলাহল এড়িয়ে বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের সঙ্গে নিরিবিলিতে একদিনের জন্য সময় কাটাতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন চাঁদপুর।
কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন এবং খরচ কেমন-ঃ হাওড়া থেকে দীঘাগামী যেকোন ট্রেন ধরে রামনগর নামতে হবে। স্টেশনের বাইরে বেড়োলেই দাঁড়িয়ে থাকে টোটো, অটো, ম্যাজিক ভ্যান, মোটর ভ্যান। রামনগর থেকে চাঁদপুর ভাড়া ৩০০-৩৫০টাকার মধ্যে। আমরা দরদাম করে দুটো মোটর ভ্যান ভাড়া করেছিলাম ৫০০টাকার বিনিময়ে।
আমরা ছিলাম হোটেল আল্পনাতে। আমাদের সকলের খুব ভালো লেগেছে হোটেলের লোকেশন, স্টাফদের আতিথিয়তা বিশেষ করে সৌমেন বলে ছেলেটার। সারাক্ষণ হাসিমুখে আমাদের সব দাবিদাওয়া পূরণ করে গেছে। হোটেলের কোন রুমে এসি নেই। এইটাই শুধু একটু অসুবিধা হতে পারে। কিন্তু হোটেলের ছেলেটি বললো এসি বসানোর চেষ্টা চলছে। বছরখানেকের মধ্যে এসি হয়তো বসেও যাবে।
আমরা ছিলাম প্যাকেজ সিস্টেমে। থাকা খাওয়া নিয়ে প্রতিজন প্রতিরাতে ১৩০০টাকা প্যাকেজ। প্রথমদিকে এইটা একটু বেশি মনে হলেও খাবারের কোয়ালিটি এবং সী-ভিউ রুম দেখে খুব একটা আফসোস হয় নি।
স্নান করা যাবে সী বীচে?? -ঃ চাঁদপুর বীচ স্নান করার উপযুক্ত নয়। কিন্তু সমুদ্রে ঘন্টা দুয়েক জলকেলি না করলে ঠিক বাঙালীর মন ভরে না। তাই একটা টোটো করে প্রতিজন পিছু ১৫টাকা ভাড়া দিয়ে ১০মিনিট ডানদিকে এগোলেই পেয়ে যাবেন তাজপুর সমুদ্র সৈকত এবং বামদিকে ১০মিনিট এগোলেই পেয়ে যাবেন শংকরপুর সমুদ্র সৈকত। দুটোর যেকোনো একটাতে গেলেই আপনি জলকেলির সাথে উপভোগ করতে পারবেন সবুজে ঘেরা জঙ্গল, সুবিস্তৃত বালুরাশি, সুমদ্রের গর্জন, মাঝিদের রেখে যাওয়া নৌকা আর কাঁকড়াদের সাথে লুকোচুরি খেলার আনন্দ ।।
পুজো শেষ হতেই প্রথম শনিবার সকাল ৬.৩৫মিনিটের তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস ধরে চাঁদপুর পোঁছে সারাদিন হৈ হুল্লোড় করে রবিবার লক্ষীপুজোর দিন সন্ধ্যেবেলা কান্ডারী এক্সপ্রেস ধরে আনন্দ করতে করতে কলকাতা ফিরে এলাম আমরা সবাই।