ঝাড়গ্রাম:- দুর্গাপুজো শেষ। একবোনের বিসর্জন, আর অন্য বোনের আবাহন এমনটা হয় নাকি! এক বোনকে ছেড়ে অন্য বোনের পুজোটা কি ঠিক? অন্য কোথাও হলেও বিনপুর থানার হাড়দা গ্রামে হয় না। দুই বোন একই সঙ্গে মর্তে এসেছেন, সুতরাং পুজোটাও হবে একই সঙ্গে। কোজাগরীর রাতে দুই বোনকে পাশাপাশি বসিয়ে পুজো করাটাই দস্তুর বিনপুরে। আর সেটাই প্রায় দেড়শো বছর ধরে করে আসছেন গ্রামবাসীরা।
ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর ব্লকের হাড়দা গ্রাম ৷আজ থেকে ১৫৬ বছর আগে সুরেন্দ্রনাথ মন্ডলের হাত ধরে হাড়দা তে শুরু হয় লক্ষী পূজো । সেই গ্রামের মণ্ডলদের পারিবারিক পুজোই এখন গ্রামের সকলের পুজো ৷ এমনকী আশপাশের গ্রামের মানুষও মাতেন পুজোর আনন্দে ৷ পুজোর সমস্ত খরচ বহন করেন মণ্ডলরাই ৷ এই পুজোকে কেন্দ্র করে আগে এক মাস ধরে মেলা বসত ৷ এখন তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে পাঁচ দিন ।
চিরাচরিত লক্ষ্মী প্রতিমার থেকে এখানকার প্রতিমার আদল খানিকটা আলাদা ৷ একচালার কাঠামোর দুই দিকে দুই বোন–সম্পদের দেবী লক্ষ্মী এবং বিদ্যার দেবী সরস্বতী ৷ মাঝখানে স্বয়ং নারায়ন । আর দুই পাশে থাকে দুই সখি । প্রতিমা স্বর্ণালঙ্কারে সজ্জিত ৷ আগে প্যান্ডেল বেঁধে পুজো করা হত ৷ এখন স্থায়ী মণ্ডপ তৈরি হয়েছে ৷ হাড়দার লক্ষী পূজোর মূল অাকর্ষন হল আতসবাজি পোড়ানো । আতসবাজীর এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সূচনা হয় পুজোর ৷
পুজোর প্রসাদে আছে বিশেষত্ব৷ দেবীকে দেওয়া হয় বিশেষ একপ্রকার লাড্ডু৷ প্রসাদের আরও একটি বৈশিষ্ট্য থাকে৷ দেবীর নৈবেদ্যে কোনও কাটা ফল চলে না৷ সব ফল গোটা দিতে হয়৷ দেওঘরের যেমন প্যাঁড়া, বারাণসীর যেমন রাবড়ি, তেমনই এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ অমৃতি৷ পুজোর প্রায় এক থেকে দেড় মাস আগেই এই অমৃতির দোকান নিলাম হয়ে যায়৷ দোকানের দর ওঠে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত৷ মেলায় অমৃতির দোকান কে দিতে পারবেন তা ঠিক করতেই এই নিলামের ব্যবস্থা৷ এমনকী অমৃতি কত টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হবে তার দাম বেঁধে দেওয়া হয় কমিটির তরফে৷ মেলায় প্রতিদিন প্রায় ১০০ কুইন্টালের উপর অমৃতি বিক্রি হয়৷ অমৃতির জন্যই বহু লোক, বহু দূর থেকে মেলায় আসেন৷ অমৃতির আকারও দর্শনীয়৷ পেল্লায় সাইজ৷ পুজোকে কেন্দ্র করে বসে যাত্রার আসর৷ এছাড়াও আয়োজন করা হয় নানা প্রতিযোগিতা৷