মিজান রহমান, ঢাকা : ঢাকার ক্লাবপাড়া পঞ্চাশ মাফিয়ার নিয়ন্ত্রণে। আর এই মাফিয়াদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা। তবে এসব ক্ষমতাসীন নেতাদের কেউ কেউ এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকার পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা ভোল পাল্টিয়েছেন। আর এরাই রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও নেপালের মতো বসিয়েছেন ক্যাসিনো। আর এই ক্যাসিনো থেকে তারা হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। ২২ সেপ্টেম্বর রোববার বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘ক্লাবপাড়ায় ৫০ গডফাদার’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্লাব পাড়ায় পরিচালিত ক্যাসিনোর মোটা অঙ্কের অর্থ বিভিন্ন কৌশলে বিদেশে পাচার করেছেন এই মাফিয়ারা।
বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ক্লাবের পরিবেশকে বদলে দিয়ে করেছেন অপরাধের আখড়া। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেসব ক্লাবে আনাগোনা বাড়তে থাকে অপরাধজগতের মাফিয়া, ধনীর দুলাল ও সুন্দরী রমণীদের। এই মাফিয়ারা শাসক দলের হলেও কেউ কেউ একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর এরা ভোল পাল্টেছেন। ক্ষমতাসীন দলে যোগদান শুধুই নয়, বাগিয়ে নিয়েছেন পদপদবিও। পুলিশের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলছে, এই ক্লাবগুলো দীর্ঘকাল ধরেই জুয়ার চর্চা ছিল। ক্লাবগুলোর সঙ্গে জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবাহনী-মোহামেডানসহ অন্য প্রায় সব ক্লাবেই জুয়ার প্রচলন ছিল আশির দশক থেকেই। প্রথমে জুয়া পরিচালিত হত, ক্লাব পরিচালনার জন্য। তখন ক্লাবের সংগঠকরা রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না বরং ক্লাবগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা ছিলো।
তখন মূলত জুয়া হিসেবে ওয়ান-টেন, রামিসহ কিছু খেলা চালু ছিল। আর বোর্ড বা জায়গা ভাড়া দিয়ে অর্থ আয় হতো ক্লাবের। গত পাঁচ-ছয় বছরে বিদেশের মতো জুয়া খেলার যন্ত্রপাতি. স্লট মেশিন কমবেশি সব ক্লাবে পৌঁছে যায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে অবৈধ মাদক সেবনের খবরে একটি অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ক্যাসিনোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে সে অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে মতিঝিল, কলাবাগান, তেজগাঁও এবং এলিফ্যান্ট রোডে জমজমাট হয়ে ওঠে ক্যাসিনো ব্যবসা। নগরীতে তাইওয়ানিদের হাত ধরে পানশালা-কাম-রেস্তোরাঁ চালু হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মতিঝিলের ক্লাবগুলোর নিয়ন্ত্রণ যায় যুবলীগের কয়েকজন নেতার হাতে, যারা পরবর্তী সময়ে নিজেদের মাফিয়া হিসেবে তৈরি করেন। জানা গেছে, এক প্রভাবশালী যুবনেতার নিয়ন্ত্রণে চলা ক্যাসিনো থেকে শুধু চাঁদা তোলার কাজ করে একসময় কাকরাইলের বিপাশা হোটেলের বয়ের কাজ করা জাকির হোসেন ও গুলিস্তানের হকার আরমান এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। কোন ক্যাসিনোর চাঁদার পরিমাণ কত হবে চরম ক্ষমতাধর এক যুবলীগ নেতার সঙ্গে বসে ঠিক করে দিতেন আরমান।
আর জাকির চাঁদা তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় মাসোহারা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতেন। ওই যুবলীগ নেতার নিয়ন্ত্রণেই মূলত ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব ও ভবনে বিদেশের আদলে অবৈধ ক্যাসিনো গড়ে উঠতে থাকে। একসময় স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক প্রভাবশালী নেতাও পাল্লা দিয়ে ক্যাসিনো খোলার চেষ্টা করেন। একটি ক্লাবে তিনি তা খোলেনও। যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া টেন্ডারবাজির পাশাপাশি ঢুকে পড়েন ক্যাসিনো জগতে। ঢাকায় যাদের ক্যাসিনো ব্যবসা গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও জুয়াড়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় ক্যাসিনোর বিস্তার ঘটান নেপালি নাগরিক দীনেশ ও রাজকুমার। প্রভাবশালী এক যুবলীগ নেতার তত্ত্বাবধানে এরা একের পর এক ক্যাসিনো খুলে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে দেশে পাচার করেন। ওই যুবলীগ নেতার তত্ত্বাবধানে ভিক্টোরিয়া ক্লাব, কলাবাগান ক্লাব, উত্তরার ক্যাসিনো, সৈনিক ক্লাব, ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, আরামবাগ ক্লাব, ফুওয়াং ক্লাব, মোহামেডান ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, ইয়ংমেন্স ক্লাব, অ্যাজাক্স ক্লাব, ইস্কাটন সবুজ সংঘে চলে রমরমা অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা।